বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের ক্রেতাদের দায় কতটা

এপ্রিল ২৬, ২০১৩

3..1ঢাকা জার্নাল: দেশের একটি বহুতল কারখানা ভবন ধসে তিনশোর বেশি মানুষ নিহত হওয়ার পর প্রশ্ন উঠেছে, এই মর্মান্তিক ঘটনার দায় পশ্চিমা ক্রেতা এবং ভোক্তাদের ওপর কতটা বর্তায়?

তৈরি পোশাক শিল্পে বাংলাদেশের অবস্থান এখন বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে, চীনের পরই। ইউরোপ-আমেরিকার বাজারে দেশটি বছরে রপ্তানি করছে বিশ বিলিয়ন বা দু হাজার কোটি ডলারের তৈরি পোশাক। আর এই খাতে কাজ করছে প্রায় চল্লিশ লক্ষ কর্মী।

কিন্তু বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে প্রায় নিয়মিত বিরতিতেই ঘটছে ভয়াবহ সব দুর্ঘটনা। গত কয়েক দশকে সেখানে কারখানার আগুনে পুড়ে, ভবন ধসে, পদদলিত হয়ে মারা গেছেন শত শত শ্রমিক।

ইউরোপ-আমেরিকার ক্রেতাদের কাছে সস্তায় তৈরি পোশাক সরবরাহ করতে গিয়ে বাংলাদেশের যে শ্রমিকরা এভাবে বলি হচ্ছেন, তার দায় কী কেবল দায়িত্বজ্ঞানহীন কারখানা মালিকের? নাকি এই সস্তা পণ্যের পশ্চিমা ভোক্তারাও এর জন্য দায়ী?

ভোক্তাদের নৈতিক দায়

ব্রিটেনে সবচেয়ে সস্তায় যারা পোশাক বিক্রি করে সেরকম একটি রিটেল চেন হচ্ছে প্রাইমার্ক, লন্ডনের অক্সফোর্ড স্ট্রীটে তাদের বিশাল বড় স্টোর।

প্রাইমার্কের তৈরি পোশাকের একটা বড় অংশ আসে বাংলাদেশ থেকে। সাভারে যে বহুতল ভবনটি ধ্বসে পড়েছে, সেখানে চারটি কারখানার অন্তত একটিতে এই প্রাইমার্কের পোশাক তৈরি হচ্ছিল।

প্রাইমার্ক ইতোমধ্যে এক বিবৃতিতে তা স্বীকারও করেছে এবং বাংলাদেশে এতগুলো মানুষের প্রাণহানিতে শোকও প্রকাশ করেছে।

অক্সফোর্ড স্ট্রীটে প্রাইমার্কের স্টোরে যারা কাপড় কিনতে ঢুকছেন, তারা কি আসলে জানেন, এসব পোশাক কোথায় কি পরিবেশে তৈরি হচ্ছে?

ক্রেতাদের কয়েকজনের সোজাসাপ্টা উত্তর, তারা আসলে জানেন না, এই পোশাক কোথায় তৈরি হচ্ছে। একজন বললেন, সম্ভবত চীনে। আরেকজন বললেন, চীনে অথবা ভারতে। আরেকজনের ধারণা আরও অস্পষ্ট, হয়তো দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার কোন দেশে।

একজন ক্রেতাকে খুঁজে পাওয়া গেল, যিনি টেলিভিশনে বাংলাদেশের পোশাক কারখানায় এই দুর্ঘটনার খবর দেখেছেন।

“আমি গতকাল বিবিসিতে বাংলাদেশে কারখানা ধসে পড়ার এই খবর দেখেছি। বাংলাদেশে তো এটাই প্রথম এই ঘটনা নয়, সেখানে কাজের পরিবেশ খুবই খারাপ, আগেও এরকম ঘটনা ঘটেছে।”

ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশ

বাংলাদেশের কারখানাগুলোতে এরকম ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশের জন্য পশ্চিমা ভোক্তাদের দায়ী করা হচ্ছে।

বলা হচ্ছে, তারা যদি ঠিক কোন ধরণের পরিবেশে পোশাক তৈরি হচ্ছে, সেটার ব্যাপারে সচেতন হয়ে কেনা-কাটা করতেন, তাহলে হয়তো, ভোক্তাদের চাপে কোম্পানীগুলোও কারখানার কাজের পরিবেশ উন্নত করার ব্যাপারে মনোযোগী হতো। এ ব্যাপারে ক্রেতাদের ভাবনা কি?

একজন ক্রেতা বললেন, “বাংলাদেশের এই দুর্ঘটনার পেছনে আশা করি আমার কোন দায় নেই, আমি জানি না, আমার পোশাক ঐ কারখানা থেকেই এসেছে কীনা। তবে যে পোশাক আমি কিনছি, তা যেন মানসম্মত পরিবেশে তৈরি হয়, সেজন্যে প্রয়োজন হলে কিছুটা বেশি টাকা খরচ করতে আমি রাজী।”

একজন মহিলা ক্রেতা বললেন, কাপড় কেনার সময় তিনি বাছবিচার করেন, তিনি এমন কাপড় কিনতে চান না, যা কীনা আগুনে পুড়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে আছে এমন কারখানায় তৈরি হয়েছে।

অন্য অনেক ক্রেতা অবশ্য বলছেন, কাপড় কেনার সময় তারা আসলেই এই প্রশ্নগুলো নিয়ে ততটা ভাবেন না।

তবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশ নিয়ে যারা প্রচারণা চালাচ্ছেন, তারা বলছেন, পশ্চিমের নামকরা কোম্পানীগুলোর পক্ষে এখন আর এই বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। বাংলাদেশের সস্তা শ্রমের সুযোগ যদি তারা নিতে চান, সেখানে কাজের নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করার দায়িত্বও তাদের কিছুটা নিতে হবে।

সূত্র: বিবিসি

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.