পিস স্কুলের বিকল্প এভেরুশ, মালিক মুফতি কাজী ইব্রাহিম

ডিসেম্বর ১১, ২০২১

গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর ‘পিস স্কুল’ বন্ধ হলেও বর্তমানে ‘এভেরুশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল’ নামে চলছে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষা কার্যক্রম। এই স্কুলের মালিকানায় এখনও রয়েছেন মুফতি কাজী মোহাম্মাদ ইব্রাহিম। কাজী ইব্রাহিম শুধু একা নন, পিস স্কুলের ব্যবস্থাপনায় যারা ছিলেন তাদের আরও দুজন রয়েছেন মালিকানায়।

ইংরেজি মাধ্যম এই স্কুলের লভ্যাংশ নিয়ে বিরোধের পর কাজী ইব্রাহিম যে প্রতিষ্ঠানটির মালিকানায় রয়েছেন তা প্রকাশ পায়। তবে ওয়াজের নামে বিষেদগার, অপপ্রচার ও প্রতারণার অভিযোগে গ্রেফতার হলে স্কুলের ওয়েবসাইট থেকে তার নাম প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।

কাজী ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় গত ২৯ সেপ্টেম্বর প্রতারণার মামলা করেন এভেরুশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের মিরপুর শাখার পরিচালক জেড এ রানা। ওই অভিযোগে কাজী ইব্রাহিমকে প্রতিষ্ঠানটির মালিক, পরিচালক ও উপদেষ্টা হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

বন্ধ হওয়া পিস স্কুলের চেয়ারম্যান ছিলেন মুফতি কাজী মোহাম্মদ ইব্রাহিম। এছাড়া পিস স্কুলের পরিচালক হিসেবে ছিলেন এভরুশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের বর্তমান চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান খান ও স্কুলটির পরিচালক মোস্তাফা কামাল।

এভেরুশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিসুর রহমান প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান খান ও পরিচালক মোস্তাফা কামালের কাছে এ ব্যাপারে জানতে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলে তারাও ফোন ধরেননি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, লভ্যাংশ নিয়ে বিরোধের কারণে উভয়পক্ষ এ পর্যন্ত ছয়টি মামলা করেছে। এছাড়া উচ্চ আদালতে একটি রিট আবেদনও হয়েছে এ ঘটনায়। এসব মামলা চলাকালেই স্কুলের মিরপুর শাখা ক্যাম্পাস দখলের প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে বলে জানান মিরপুর শাখার পরিচালক জেডএম রানা।

অভিযোগে জানা গেছে, লভাংশের বিরোধের কারণে করোনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছুটি থাকার সুযোগ নিয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিসুর রহমান মিরপুর শাখার পরিচালককে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করেন। তার বিরুদ্ধে চারটি ফৌজদারি মামলা দায়ের করে স্কুলটি দখলে নেওয়ার প্রক্রিয়া চালানো হয়। প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে শাখা ক্যাম্পাস চলাকালে মিরপুরে নতুন ক্যাম্পাস করে চলমান ক্যম্পাসটি বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। আগামী জানুয়ারি থেকে নতুন স্কুলটি চালু করা হবে বলে জানা গেছে। মামলা ও বিরোধের কারণে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন বিঘ্নিত হওয়ারও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

স্কুলটির মিরপুর শাখার পরিচালক জেড এ রানার অভিযোগ, শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে শাখা ক্যাম্পাস দখলের প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে। মোহাম্মপুরের লালমাটিয়ায় স্কুলটির মূল ক্যাম্পাসের অনুমোদন নেই। মিরপুর শাখা ক্যাম্পাস দখল করতে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে চারটি মামলা করা হয়েছে। অনুমোদন ছাড়াই মিরপুর ১২ নম্বরে নতুন একটি শাখা ক্যাম্পাস খোলার জন্য ফেসবুকে প্রচার চলছে। ওই ক্যাম্পাস চালু হলে রূপনগরের ক্যাম্পাস বন্ধ হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

বর্তমানে স্কুলটিতে প্রথম শ্রেণি থেকে ‘ও’ লেভেল পর্যন্ত পাঠদান পরিচালনা করা হচ্ছে। ২০২০ সালে শিক্ষা বোর্ডের অনুমোদন ছাড়াই ‘ও’ লেভেল পরীক্ষার ব্যবস্থা করে প্রতিষ্ঠনটি।

মিরপুরের রূপনগর শাখার শাখা পরিচালক জেড এ রানা বলেন, ‘মূল ক্যাম্পাসেরই অনুমোদন নেই। সে কারণে শাখা ক্যাম্পাসের অনুমোদন নেওয়ার সুযোগও নেই। অনুমোদন ছাড়াই ২০২০ সালে ‘ও’ লেভেল পরীক্ষা হয়েছে। শিক্ষা বোর্ডের কাছে আমার সঙ্গে হওয়া প্রতারণার প্রতিকার চাইতে গিয়ে জানতে পেরেছি, মূল স্কুলেরই অনুমোদন নেই। তাই শাখা ক্যম্পাসের বিষয়ে তাদের কিছু করার নেই। বাধ্য হয়ে আমি আইনের আশ্রয় নিয়েছি।’

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের ২০২০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বরের চিঠিতে জেড এম রানাকে জানানো হয়, এভেরুশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত নয়, তাই এ বিষয়ে করণীয় কিছু নেই।