কাউকে চিনতে পারছেন না শবনম মুশতারী

নভেম্বর ৫, ২০২১

একটা সময় টেলিভিশনে নজরুলসংগীতের অনুষ্ঠান মানেই ছিল সংগীতশিল্পী শবনম মুশতারীর উজ্জ্বল উপস্থিতি। কয়েক বছর ধরে এই শিল্পীকে কোথাও দেখা যাচ্ছিল না। ২৫ অক্টোবর ছিল এই শিল্পীর জন্মদিন। সেদিন শিল্পীর ছোটবেলার বন্ধু রেবেকা সুলতানা তাঁর অনেকগুলো ছবি তোলেন। বুধবার রাতে সেই ছবির একটি ফেসবুকে পোস্ট করা হলে অন্য রকম শবনম মুশতারীকে দেখে চমকে যান সবাই। কেউ কেউ বলেন, এ কী হাল হয়েছে।

কী হয়েছে খোঁজ নিতে শবনম মুশতারীর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। বুধবার রাত নয়টায় তাঁর ছোট দুই বোন পারভীন মুশতারী ও ইয়াসমীন মুশতারীর সঙ্গে কথা বলে প্রথম আলো। দুই বোনই জানালেন, শবনম মুশতারী স্মৃতিশক্তি হারিয়েছেন। কাউকে চেনেন না। কথাবার্তাও অসংলগ্ন। তবে কাউকে না চিনলেও তা বুঝতে দেন না।

ইয়াসমীন মুশতারী জানালেন, শবনম মুশতারী ডিমেনশিয়ায় ভুগছেন। বছর দুয়েক আগে তাঁর এই রোগ ধরা পড়ে। তারও আগে থেকে শবনম মুশতারীর খোঁজখবর কেউ নেয়নি। এ নিয়ে পরিবারের সদস্যদের রয়েছে আক্ষেপ।

ইয়াসমীন মুশতারী বললেন, ‘আমরা কারও সহযোগিতা চাইনি। অসুস্থতার খবর কেউ জানুক তা–ও চাইনি। কিন্তু জন্মদিনে আপার বান্ধবী কিছু ছবি তোলে। এরপর হয়তো ফেসবুকে গেছে। তার আগে কি উচিত ছিল না, শিল্পীর একটু খবর নেওয়া? এই করোনায়ও তো কত শিল্পী মারা গেলেন, তা–ও কি আমাদের বোধোদয় হবে না। পয়সাপাতির জন্য না, হাসপাতালে ঠিকমতো চিকিৎসাসেবা পাচ্ছি কি না, খবর নিয়ে সুব্যবস্থা করা। সরকারের পক্ষ থেকে এটুকু কি আশা করতে পারি না?’

ইয়াসমীন মুশতারী এ–ও বলেন, ‘সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থা আছে, তাদের তো একবার হলেও জ্যেষ্ঠ শিল্পীদের খবরটা নেওয়া উচিত। বিনয়ের সঙ্গে বলছি, কিংবদন্তি যাঁরা বেঁচে আছেন, তাঁদের একটু করে হলেও খোঁজ নেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তো অনেক দরদি মানুষ, কিন্তু সব খবর তো আর তাঁর কান পর্যন্ত পৌঁছায় না।

সবচেয়ে কষ্ট লাগে এই ভেবে, শিল্পীদের সবকিছু মুখ ফুটে বলতে হয়। কেন কলতে হবে? শিল্পীরা কি সরকারের যেকোনো আহ্বানে সাড়া দেন না? শিল্পীরা শুধু একটু সম্মান আর আদর চান, আর কিছুই না। এইটুকু কি তাঁরা পেতে পারেন না। খোঁজখবরই একজন মানুষকে মানসিকভাবে সুস্থ রাখে। সরকারি উদ্যোগে আরও চিন্তাভাবনা করে, চিকিৎসক দিয়ে বোর্ড গঠন করে যদি কিছু একটা হয় তাহলে ভালো হতো।’

ষাটের দশক থেকে গানের সঙ্গে যুক্ত শবনম মুশতারী। সর্বশেষ গান গেয়েছেন বছর চারেক আগে, শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজিত তাঁর একক গানের অনুষ্ঠানে। এরপর জনসমক্ষে তাঁকে আর গাইতে দেখা যায়নি। ছোট বোন পারভীন মুশতারী জানালেন, ‘আমাদের ঘরোয়া অনুষ্ঠানে গান গাইতেন।’

তিনি বললেন, ‘পারভীন আপাসহ আমরা সবাই গত বছরের অক্টোবরের জন্মদিনে বাসার বাইরে খাওয়াদাওয়া করি। বাসায় ফেরার পর তাঁর স্ট্রোক করে। দুই বছর ধরে ভুলে যাওয়ার ব্যাপারটা ছিল। কিন্তু এক বছর ধরে কাউকে চিনতে পারছেন না। ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মাস তিনেক আগে মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করা হয়।’ পারভীন মুশতারী জানালেন, বাসায় নার্স রেখে শবনম মুশতারীর চিকিৎসা চলছে। তবে খাওয়াদাওয়া স্বাভাবিক।

শবনম মুশতারীর জন্ম নওগাঁয়, তাঁর বাবা কবি তালিম হোসেন আর মা মাফরুহা চৌধুরী ছিলেন দৈনিক বাংলা পত্রিকার মহিলাবিষয়ক পাতার সম্পাদক, কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক। শবনম মুশতারীর এক ছেলে, এক মেয়ে। ছেলে পাইলট ও মেয়ে বিয়ে করে সংসারী। শবনম মুশতারীর দুই ভাই শাহরিয়ার চৌধুরী ডেটা অ্যানালিস্ট ও হাসনাইন চৌধুরী বিমানের ক্যাপ্টেন। দীর্ঘ সংগীতজীবনে আধুনিক ও নজরুলসংগীতের তাঁর ১০টি অ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে বরে জানালেন পারভীন মুশতারী। এইচএমভি তাঁর ‘লাইলী তোমার এসেছে ফিরিয়া’ লং প্লে প্রকাশ করে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের লাইব্রেরি অব কংগ্রেসের সাউন্ড সেকশন সংরক্ষণ করে রেখেছে। নিউইয়র্ক থেকে মুক্তধারা তাঁর গানের অ্যালবাম বেস্ট অব শবনম মুশতারী প্রকাশ করে।