নেপালের প্রধানমন্ত্রী টিকে থাকতে পারবেন?

জুলাই ৬, ২০২০

নেপালে সাধারণ জনগণ ভারতবিরোধী মনোভাব পোষণ করছেন গত এক দশকের আগে থেকে। কারণ বিভিন্ন আগ্রাসন দিয়ে ভারত তার বর্তমান অবস্থানে এসে পৌঁছায়। সাধারণ জনগণ ও রাজনৈতিক নেতাদের ভেতর নেপালে যারা ভারতবিরোধী মনোভাব পোষণ করতে পারেন, তারা ক্ষমতার কাছাকাছি থাকতে পারেন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

  • মো. আবু সাইদ

ভূ-রাজনীতিতে ভারত দিনে দিনে আধিপত্য বা বড়ভাইসুলভ আচরণ করতে গিয়ে তার প্রতিবেশী ছোট দেশগুলোর সঙ্গে সীমানা, বাণিজ্য, অর্থনৈতিক, সামাজিক সর্বোপরি সাধারণ জনগণ ভারতবিরোধী হয়ে উঠেছে। তা দৃশ্যমান হচ্ছে নেপাল, ভুটান ও শ্রীলংকার রাজনীতিতে অস্থিরতা। এ জন্যও ভারতকে দায়ী করেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা। বর্তমানে নেপালের ভারতবিরোধী অবস্থান তার স্পষ্ট প্রমাণ।

নেপালের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি মূলত ভারতবিরোধী মনোভাব ও আন্দোলন করে আপামর জনগণের সমর্থনে ক্ষমতায় আসেন। তিনি সংসদে নেপালের নতুন সীমানা নির্ধারণ করে যখন রাষ্ট্রের বীরপুরুষ বলে খ্যাতির শীর্ষে, তখন প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে তাকে সরিয়ে দেওয়ার মতো খবর আন্তর্জাতিক এবং খোদ নেপালের কিছু গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

কেপি শর্মা ওলি অভিজাত বৌদ্ধ পরিবারের সন্তান। ছাত্রাবস্থায় তিনি নানা অধিকার আন্দোলনে জড়িত ছিলেন। ১৯৭০ সালে তিনি রাজনীতিতে আসেন। তিনি কমিউনিস্ট পার্টি করেন। মার্কসবাদী, লেলিনবাদী শাখার নেতা হিসেবে ১৯৭০ সালে যোগ দিয়ে রাজনীতিতে অভিষেক হয় তার। বর্তমান সময়ে কমিউনিস্ট পার্টির দায়িত্বে আছেন। তিনি আবার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বেও আছেন। সংযুক্ত কমিউনিস্ট পার্টি, এখানে লেলিনবাদী, মার্কসবাদী যেমন রয়েছে, মাও সেতু সেন্টারও রয়েছে। মাও সেন্টার প্রচন্ডের নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে। মাওবাদী মাও সেন্টার ও লেলিনবাদী মার্কসবাদী কমিউনিস্ট সরকারে রয়েছে। এ জোট যখন গঠন হয় তখন শর্ত ছিল যে, পার্টির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কেপি ওলি তিনি জোটের কোনো বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবেন না। আর প্রচন্ড যিনি মাও সেন্টারের প্রধান তিনি জোটের রাজনীতি দেখবেন। এখন কমিউনিস্ট জোটের কংগ্রেস অধিবেশন চলছে। এতে জোটের নেতৃত্বে পরিবর্তন আসতে পারে যা প্রধানমন্ত্রী পদেও পরিবর্তন হতে পারে। অর্থাৎ কেপি ওলি যিনি ভারতবিরোধী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী হয়ে তুমুল জনপ্রিয়। তারপরও প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে সরে যেতে হতে পারে।

নেপালে সাধারণ জনগণ ভারতবিরোধী মনোভাব পোষণ করছেন গত এক দশকের আগে থেকে। কারণ বিভিন্ন আগ্রাসন দিয়ে ভারত তার বর্তমান অবস্থানে এসে পৌঁছায়। সাধারণ জনগণ ও রাজনৈতিক নেতাদের ভেতর নেপালে যারা ভারতবিরোধী মনোভাব পোষণ করতে পারেন, তারা ক্ষমতার কাছাকাছি থাকতে পারেন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

২০১৫ সালে প্রথম ক্ষমতায় আসেন কেপি ওলি। তারপর আস্থাহীনতার কারণে ২০১৬ সালে থাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন তিনি। ২০১৭ সালে জোট বাধেন মাও সেন্টারের সঙ্গে এবং ক্ষমতা আসেন। ২৭৫ আসনের মধ্যে জোট পায় ২৭৪টি আসন। এ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পাওয়ার কারণে প্রধানমন্ত্রী হন কেপি ওলি এবং প্রচন্ড রাজনৈতিক দল দেখাশোনা করতে থাকেন। এখন কেপি ওলি ও প্রচন্ডের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন এটার পেছনে ভারতের রয়েছে দৃশ্য বা অদৃশ্যমান হাত।

অদৃশ্যমান হাত থাকা স্বাভাবিক না হলে নেপালের অভ্যন্তরে ভারতবিরোধী মনোভাব আরও চরম আকার ধারণ করবে। স্বাভাবিক কারণে ভারত চাচ্ছে কেপি ওলি প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে সরে যাক। হতে পারে ভারতের ক্ষোভের বিহিঃপ্রকাশ এটা, যেহেতু তার সময় নতুন মানচিত্র সংসদে পাস করা হয়েছে। পর্দার অন্তরালে হয়তো অনেক কিছু হবে, যা সাধারণ জনগণ কখনো জানবে না। কেপি ওলি থাকা বা না থাকা দেখার জন্য এখন অপেক্ষার পালা।

  • মো. আবু সাইদ, লেখক- ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক