অভ্যর্থনা নয়, বঙ্গবন্ধুর মুখচ্ছবি ব্যবহার অনুষ্ঠানে হঠাৎ উপস্থিতি শিক্ষামন্ত্রীর

মার্চ ২, ২০২০

‘মুজিববর্ষে মুজিব হবো, শিক্ষার আলো ভরিয়ে দেবো’ এই শিনোনামের একটি অনুষ্ঠানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুখচ্ছবি ব্যবহার করেছে শিক্ষার্থীরা। বগুড়া পুলিশ লাইন স্কুল অ্যান্ড কলেজে গত ২৯ ফেব্রুয়ারি এই অনুষ্ঠানে অংশ নেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

এই ঘটনার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এই কাজের সমালোচনা করা হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে। ফেসবুকে একটি ছবি ভাইরাল হলে বিষয়টি নেতিবাচক দৃষ্টিতেও দেখা হয়। প্রশ্ন ওঠে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে তৈরি ‘মুখোশ’ ব্যবহার করা হয়েছে অনুমতি না নিয়ে। আর শিক্ষামন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানানো হয়েছে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির তৈরি ‘মুখোশ’ পরে।

তবে এই বিষয়টি নিয়ে বিধি লঙ্ঘণের মতো কিছু হয়নি বলে মনে করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মোমোরিয়াল ট্রাস্ট কিউরেটর নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ‘সব কিছু নেতিবাচক দৃষ্টিতে নেওয়া উচিৎ নয়। সংকীর্ণতা থাকা উচিত নয়। বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল, ভাস্কর্য বা প্রতিকৃতি নির্মাণে অথবা স্থাপনা তৈরিতে ট্রাস্টের অনুমতি প্রয়োজন। অ্যাকডেমিক কোনও কিছুতে ট্রাস্টের অনুমতির প্রয়োজন নেই। ‘

কিউরেটর আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যদের নামে কোনও প্রতিষ্ঠান বা স্থাপনা করতে অনুমোদন লাগবে। শিক্ষার্থীদের বঙ্গবন্ধুর মুখচ্ছবি পরানো হয়েছে কোনও আলোচনার বিষয় নয়। অসৎ উদ্দেশ্যে যদি কিছু না করে থাকে, তাহলে এতো সংকীর্ণ হওয়ার কোনও কারণ নেই। ‘

জানতে চাইলে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট-এর ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য শেখ কবির হোসেন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর নামে কোনও প্রতিষ্ঠান, বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল, ভাস্কর্য্য বা প্রতিকৃতি করতে হলে ট্রাস্টে আবেদন করতে হবে। ট্রাস্টের বৈঠকে অনুমদোন হলে তারপর তা করতে হবে। অ্যকাডেমিক বিষয়ে ট্রাস্টের কোনও অনুমোদন লাগবে না।‘

বগুড়া পুলিশ লাইন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ‘শিক্ষর্থীদের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ছড়িয়ে দিতে শাহাদৎ আলম বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানের থিম সং যখন চলে সে সময় শিক্ষামন্ত্রী অনুষ্ঠানে আসেন। থিম সংয়ের একটি অংশ হচ্ছে— “মুজিববর্ষে মুজিব হবো, শিক্ষার আলো ভরিয়ে দেবো’। ওই সময় শিক্ষার্থীরা বঙ্গবন্ধুর মুখচ্ছবি ব্যবহার করেছে। শিক্ষার্থীরা শিক্ষামন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানায়নি। আমরা শিক্ষক ও কমিটির সদস্যরা শিক্ষামন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানিয়ে অনুষ্ঠানে নিয়েছি। কিন্তু গণমাধ্যমে খণ্ডিত অংশ প্রকাশ পেয়েছে, এটি দুঃখজনক।’

অধ্যক্ষ আর বলেন, ‘শিক্ষর্থীদের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ছড়িয়ে দিতে দিতে আমরা শিক্ষামূলক পদক্ষেপ নিয়েছি। ‘

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুরাল বা ভাস্কর্য্য বা প্রতিকৃতি তৈরি করতে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের অনুমতির বিধান থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। এছাড়া বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে কোনও প্রতিষ্ঠান বা স্থাপনা করতেও ট্রাস্টের অনুমতি নেওয়া হচ্ছে না। এই অভিযোগ থাকার পরও শিক্ষামন্ত্রীর উপস্থিতির সময় বঙ্গবন্ধুর মুখচ্ছবি ব্যবহার নিয়ে বিতর্ক ওঠে।

এই ঘটনায় মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল খায়ের বলেন, ‘পুলিশ সুপারের অনুরোধে চলমান একটি অনুষ্ঠানে মন্ত্রী কয়েক মিনিটের জন্য গিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের বঙ্গবন্ধুর মুখচ্ছবি ব্যবহার নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে সেদিন বলেছিলেন, ‘মুখচ্ছবি ধারণ করার চেয়ে বঙ্গবন্ধুকে হৃদয়ে ধারণ করা জরুরি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ মেনে চলতে হবে। বঙ্গবন্ধুকে হৃদয়ে ধারণ করতে হবে। ‘

আবুল খায়ের জানান, ওইদিন মন্ত্রীর সিডিউল ছিলো বগুড়া গাবতলীর সৈয়দ আহম্মদ কলেজের সুবর্ণ জয়ন্তির অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া। সিডিউলে না থাকলেও পুলিশ সুপারের অনুরোধে বগুড়া সদরের পুলিশ লাইন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অনুষ্ঠানে যান কয়েক মিনিটের জন্য।