আমেরিকার বাজারে স্মার্টফোনের রফতানি কার্যক্রম উদ্বোধন করলেন অর্থমন্ত্রী

মার্চ ১, ২০২০

অর্থনৈতিক রিপোর্টার: অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, ‘ওয়ালটনের পণ্য ব্যবহার করে দেশের মানুষ খুশি। ওয়ালটন যে অঙ্গীকার নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলো, তা থেকে তারা বিচ্যুত হয়নি বরং যা আশা করেছি তার থেকেও আরও সুন্দরভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। আমেরিকার বাজারে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশকে নিয়ে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। ওয়ালটনের মাধ্যমে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’আমরা আমেরিকার বাজারে দেখতে পাবো।’

রবিবার (১ মার্চ) গাজীপুরের চন্দ্রায় ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড পরিদর্শনকালে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম এলিভেটর কারখানার উদ্বোধন করেন। একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথমবারের মতো ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ ট্যাগযুক্ত স্মার্টফোন রফতানি, ভারতে বিপুল পরিমাণ এসি রফতানি, অল-ইন-ওয়ান ওয়ালটন পিসি এবং ওয়ালটন টিভির নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেম ‘আরওএস’ উদ্বোধন করেন। আর ডিজি-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের সঙ্গে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির ফলে ওয়ালটন ডিজি-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড বেসরকারি হাই-টেক পার্ক হিসেবে অভিহিত হলো।

এ সময় অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।

অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ওয়ালটন এ দেশের মানুষকে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। যাত্রাপথ ঠিক করে তাদের সেই স্বপ্নের পথে তারা এগিয়ে যাচ্ছেন। তারা বিশ্ববাজারে মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, হাউজহোল্ড অ্যাপ্লায়েন্স, কম্প্রেসর ইত্যাদি নিয়ে যাচ্ছেন। ধন্যবাদ ওয়ালটনকে।’

এর আগে মন্ত্রীরা ওয়ালটন কারখানায় পৌঁছালে তাদেরকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান এস এম নূরুল আলম রেজভী, ভাইস-চেয়ারম্যান এস এম শামছুল আলম, ম্যানেজিং ডিরেক্টর এস এম আশরাফুল আলম, পরিচালক এস এম মাহবুবুল আলম, ওয়ালটন ডিজি-টেক ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান এস এম রেজাউল আলম, ম্যানেজিং ডিরেক্টর এস এম মঞ্জুরুল আলম, ওয়ালটন গ্রুপের পরিচালক তাহমিনা আফরোজ তান্না, রাইসা সিগমা হিমা, রিফাহ তাসনিয়া স্বর্ণা প্রমুখ।

উল্লেখ্য, গাজীপুরের চন্দ্রায় রেফ্রিজারেটর, কম্প্রেসর, টেলিভিশন, এয়ার কন্ডিশনার, মোবাইল ফোন, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, হোম অ্যাপ্লায়েন্স, ইলেকট্রিক অ্যাপায়েন্স, ডাই মোল্ড ইত্যাদি কারখানা গড়ে তুলেছে ওয়ালটন। দেশের মানুষের চাহিদা মিটিয়ে যা রপ্তানি হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।

এবার এলিভেটর বা লিফটের মতো ভারী শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠা করেছে ওয়ালটন। যার বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ১০০০ ইউনিট। খুব শিগগিরই তা ২০০০ ইউনিটে উন্নীত হবে বলে জানা গেছে। দেশে কারখানা চালু হওয়ায় এ খাতে সাশ্রয় হবে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা। উচ্চমূল্যে বিদেশ থেকে এলিভেটর আমদানির প্রয়োজন পড়বে না।

কর্তৃপক্ষ জানায়, আমেরিকার একটি আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড ওয়ালটনের কাছ থেকে স্মার্টফোন নিচ্ছে। ওরিজিনাল ইক্যুপমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার (ওইএম) হিসেবে ওই ব্র্যান্ডটিকে স্মার্টফোন তৈরি করে দিচ্ছে ওয়ালটন। ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ ট্যাগযুক্ত ওয়ালটনের তৈরি স্মার্টফোনগুলো আমেরিকার বাজারে বিক্রি হবে।

একইভাবে ওরিজিনাল ইক্যুপমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার (ওইএম) হিসেবে ভারতে বিপুল পরিমাণ এসি রফতনি শুরু করেছে ওয়ালটন। ইনভার্টার প্রযুক্তির ব্যাপক বিদ্যুৎসাশ্রয়ী এসব এসি ভারতের সর্বত্র বিক্রি হবে।

এদিকে, প্রাথমিকভাবে ৩ মডেলের অল-ইন ওয়ান পিসি তৈরি করছে ওয়ালটন। ২১.৫ ইঞ্চির ফুল এইচডি রেজুলেশন স্ক্রিনের এসব পিসিতে ব্যবহৃত হয়েছে ইন্টেলের অষ্টম এবং নবম প্রজন্মের কোরআইথ্রি এবং কোরআই ফাইভ প্রসেসর, রয়েছে ৮জিবি র‌্যাম, ১ টেরাবাইট হার্ডড্রাইভ, ইন্টেলের আল্ট্রা এইচডি গ্রাফিক্স, ২ মেগাপিক্সেল ক্যামেরাসহ অত্যাধুনিক সব ফিচার।

‘আরওএস’ হচ্ছে টেলিভিশনের একটি পূর্ণাঙ্গ অপারেটিং সিস্টেম। দেশের মানুষের চাহিদা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী এটি তৈরি করা হয়েছে। এর ফলে টিভিতে আরও দ্রুত কমান্ড দেয়া যাবে। এক চ্যানেল থেকে অন্য চ্যানেল পরিবর্তনে আগের চেয়ে কম সময় লাগবে। পাশাপাশি টিভির ছবি হবে আরও জীবন্ত ও প্রাণবন্ত। শব্দের মান হবে উন্নত এবং আগের চেয়ে জোরালো। ইতোমধ্যেই আরওএস সিস্টেমটি পরীক্ষামূলকভাবে ওয়ালটনের বেসিক এলইডি টেলিভিশনে ব্যবহার করা হচ্ছে। খুব শিগগিরই ওয়ালটনের স্মার্ট টেলিভিশনেও এ প্রযুক্তি সংযোজিত হবে।

এর আগে কারখানায় পৌঁছে মন্ত্রীগণ প্রথমে ওয়ালটনের সুসজ্জিত ডিসপ্লে সেন্টার পরিদর্শন করেন। এরপর তারা ওয়ালটনের রেফ্রিজারেটর ও কম্প্রেসর তৈরির প্রক্রিয়া পরিদর্শন করেন। এ সময় ৫৪ জন মেধাবী শিক্ষার্থীর হাতে ল্যাপটপ এবং ক্যাশচেক তুলে দেওয়া হয়।