উৎপাদিত পণ্য সমবায় সমিতির মাধ্যমে বিপণনের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

নভেম্বর ২, ২০১৯

ঢাকা জার্নাল: দেশে উৎপাদিত পণ্য সমবায় সমিতির মাধ্যমে বিপণনের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৪৮তম জাতীয় সমবায় দিবস-২০১৯ উদযাপন অনুষ্ঠানের বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, চাষের পরে উৎপাদিত ফসলের পণ্য ভাগ হবে তিনভাগে। জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি ও সমবায়কে গুরুত্ব দিচ্ছি।

দেশজুড়ে এক লাখ ৭৫৪ হাজার সমবায় সমিতি আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, শহরের মানুষ যে ধরনের সুবিধা পায় পল্লির মানুষরাও আগামীতে সেসব সুবিধা পাবে। গ্রামে বসেই যেন দেশে বিদেশে ব্যবসা করতে পারে সেই সুবিধা করে দিচ্ছি। নিজ গ্রামে বসে অর্থনৈতিক ভাবে যেন স্বাবলম্বী হয় সেই উদ্দেশ্যে কাজ করছি।

একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা আদর্শগ্রাম প্রকল্প হিসেবে গুচ্ছগ্রাম তৈরি করেছিলেন। আমরা আশ্রয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছি। সেখানে মালিকেরা সমবায় করে মালিকানা ভোগ করবে। কেউ অহেতুক যেন বাড়ি ও জমি বিক্রি করতে না পারে সেই ব্যবস্থাও নিয়েছি। একটি মানুষও যেন গৃহহীন না থাকে।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ লেগেই থাকে। নদীভাঙা মানুষ যেন গৃহহারা না হয়ে যায় সেজন্য ১শ’ কোটি টাকার থোক বরাদ্দ আছে তাদের সহযোগিতার জন্য। আমাদের দেশের মাটি উর্বর, জমি উর্বর, মানুষ কাজের। তাদের কাজে লাগাতে পারলে কষ্ট হয় না। যে কারণে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পেরেছে।

সবার স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার সুযোগের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যাদের বাড়ি আছে, তাদের কোনও জমি হয়তো চাষ হয় না, পুকুর পড়ে থাকে। এর সবটুকুকে কাজে লাগানোর লক্ষ্যে প্রত্যেক বাড়ির মালিকরা যেন নিজেরা উপার্জন করতে পারে সেই লক্ষ্যে আগে ছিল ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্প, এখন নাম পরিবর্তন করে দিয়েছি- ‘আমার বাড়ি, আমার খামার’।

এই খামারের পণ্যও সমবায়ের ভিত্তিতে বাজারজাত করা হয়। পণ্য বাজারজাত করতে না পারলে খামারিরা পণ্য উৎপাদনে উৎসাহ হারাবে। সমবায়ের মাধ্যমে বিপনন ব্যবস্থা করে দিতে পারলে প্রতিটি পরিবার লাভবান হবে।

আমাদের চাষ উপযোগী জমি সীমিত কিন্তু গবেষণার মাধ্যমে ফসলের উন্নত জাত উদ্ভাবন করে উৎপাদন বৃদ্ধি করা হয়েছে। খাদ্য, তরি-তরকারি, মাংস, মাছ, ডিম সব উৎপাদনেই আমরা অগ্রগামী। সেগুলোকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হলে সমবায়ের ভিত্তিতে করতে হবে। সমবায়ের ভিত্তিতে এসব করলে অপচয় কম হবে, বাজারজাত হবে পাশাপাশি প্রক্রিয়াজাত শিল্প গড়ে তোলা যাবে। আমরা সারাদেশে ১শ’ অর্থনীতি অঞ্চল করছি। একদিকে শিল্প কারখানা গড়ে তোলা, আরেকদিকে খাদ্য প্রক্রিয়াজাত করার দিকে দৃষ্টি দিচ্ছি।

জাতির পিতা সমবায়ভিত্তিক দুগ্ধ উৎপাদন নিশ্চিত করতে মিল্কভিটা তৈরি করে দিয়েছেন। আমরা সমবায়ভিত্তিক দুগ্ধ উৎপাদন নিশ্চিত করা প্রকল্প বিস্তৃত করার মাধ্যমে ফরিদপুর খুলনা জেলার দারিদ্র্য হ্রাসের চেষ্টা করা হয়েছে। দুগ্ধ উৎপাদন বাড়ানোর জন্য মহিষের কৃত্রিম প্রজননকেন্দ্র করা হয়েছে। গুঁড়াদুধ বাইরে থেকে কিনতে হতো, সেটা এখন আমরা নিজেরাই উৎপাদন করতে শুরু করেছি। যারা পাহাড়, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, হাওর-বাওড়ের অনগ্রসর সম্প্রদায় তাদের সমবায়ের ভিত্তিতে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও পণ্য বাজারজাত করাও আমাদের লক্ষ্য।

সমবায় অধিদফতরের কার্যালয় থেকে উপজেলা পর্যন্ত আইসিটির অধীন এনে অনলাইনে বাজারজাতকরণের কাজ হচ্ছে। এসময় বিভিন্ন সেক্টরের সমবায় কাজ নিয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ৯৩ ভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া সম্ভব হয়েছে, যোগাযোগ নিশ্চিত করার ফলে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত অর্থনৈতিক কার্যক্রম বাড়ছে ও জীবনমান উন্নত হচ্ছে। আমাদের কৃষি জমিতে যেন অধিক ফসল উৎপাদিত হয়, কোনদিন কারও কাছে যেন হাত পাততে না হয় সেজন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। জাতির পিতা বলতেন, ভিক্ষুক জাতির ইজ্জত থাকে না। এ দেশের মানুষ কারও কাছে হাত পাতবে না। নিজস্ব অর্থায়নে ৯০ ভাগ কাজ করা হচ্ছে। বাজেট সাতগুণ বৃদ্ধি করেছি। এটা ধরে রেখে এগিয়ে যেতে হবে। ইতোমধ্যে আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছি। জাতির পিতার নির্দেশনা মেনে সমবায়কে গুরুত্ব দেবো। যাতে অধিক সংখ্যক মানুষ লাভবান হতে পারে। সমবায় ব্যাংক আইনটা সময়োপযোগী করে লাভজনক করে গড়ে তুলতে হবে। সমবায়ের কাজে যারা দক্ষ তাদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
ঢাকা জার্নাল, নভেম্বর ২, ২০১৯