রেসিডেনসিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীর মৃত্যুতে তদন্ত কমিটি

নভেম্বর ২, ২০১৯

ঢাকা জার্নাল: ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুল অ‌্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী নাইমুল আবরারের মৃত‌্যুর ঘটনায় তিন সদস‌্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুল অ‌্যান্ড কলেজে এক জরুরি বৈঠকে কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন কলেজের অধ্যক্ষ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী শামীম ফরহাদ।

কলেজের একজন উপাধ্যক্ষকে প্রধান করে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি আগামী তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে। তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

অধ্যক্ষ জানান, আমাদের শিক্ষার্থী নাইমুল আবরারের মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। শিক্ষার্থীরা যে আন্দোলন করছে, মানববন্ধন করছে, আমরা সেটাকে নৈতিকভাবে সমর্থন করি। বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখছি আমরা। ইতোমধ্যে এক জরুরি সভার মাধ্যমে আমাদের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন পেলে সেটার পরিপ্রেক্ষিতেই আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা নেব।

তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের সাথে এ বিষয়ে আমাদের কথা হয়েছে। তাদেরকে বিশৃঙ্খলা অথবা অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু না করার জন্য বলা হয়েছে। তারা আমাদের সে বিষয়ে আশ্বস্ত করেছে। আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।

শুক্রবার-শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় কলেজের মূল ফটকের বাইরে মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা। সে সময় ‘আমার ভাই মারা গেল, কিশোর আলো চুপ কেন’, ‘কিশোর আলোর অমানবিকতা, মানি না মানব না’ স্লোগান দেন তারা।

শিক্ষার্থীরা কর্তৃপক্ষকে চার দফা দাবিতে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন। কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে আবরারের বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার সময়ের ফুটেজ চেয়েছেন তারা। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের পাশাপাশি অনুষ্ঠানের আয়োজক কর্তৃপক্ষ কিশোর আলোকে সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা চিত্র ৭২ ঘণ্টার মধ্যে দিতে বলা হয়েছে। এ সময় কলেজের অধ্যক্ষ এসে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করার কথা বললে শিক্ষার্থীরা শান্ত হন।

আবরার ওই প্রতিষ্ঠানের নবম শ্রেণির দিবা শাখার শিক্ষার্থী। তার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীতে। শুক্রবার রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের মাঠে কিশোরদের মাসিক পত্রিকা কিশোর আলোর বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান দেখতে এসেছিল আবরার। বিকেলে অনুষ্ঠান মঞ্চের পেছনে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয় সে।

সেখানে জরুরি মেডিক‌্যাল ক্যাম্পের দুজন চিকিৎসক নাইমুল আবরারকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। এরপর তাকে মহাখালীর বেসরকারি ইউনিভার্সেল হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

পরিবারের অনুরোধে ময়নাতদন্ত ছাড়াই আবরারের লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মোহাম্মদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গণেশ গোপাল বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘কি আনন্দ’ শিরোনামের ওই অনুষ্ঠানের জন্য তৈরি করা মঞ্চের পেছনে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন আবরার।

শুক্রবার রাতে রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ মাঠে জানাজা শেষে আবরারের মরদেহ গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার ধন্যপুরে নেয়া হয়। শনিবার সকালে সেখানে জানাজা শেষে তার দাফন হয়।

আবরারের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন কলেজের অধ্যক্ষ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী শামীম ফরহাদ। কিশোর আলোর সম্পাদক আনিসুল হকও নাইমুল আবরারের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, আবরারকে চিরকাল স্মরণ করা হবে। এ দুর্ঘটনা কেন ঘটল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আবরারের মা-বাবা ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন আনিসুল হক। তিনি এই পরিবারকে তার নিজের এবং কিশোর আলোর পরিবার হিসেবে গ্রহণ করার কথা তাদের জানান।

এদিকে, আবরারের মৃত্যুর খবর জানার পরেও অনুষ্ঠান চলতে থাকায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো- ঘটনার সময়ের সিসিটিভি ফুটেজ দেখাতে হবে। দায় স্বীকার করে কিশোর আলোর ইভেন্ট অর্গানাইজারকে লিখিত বক্তব্য দিতে হবে। কমিটির রিপোর্ট ছাত্রদের হাতে পৌঁছাতে হবে প্রভৃতি।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, আগামী ৭২ঘণ্টার মধ্যে দাবিগুলো আদায় না হলে আলোচনা করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
ঢাকা জার্নাল, নভেম্বর ২, ২০১৯