‘শিক্ষকদের বদলিতে তদবির করলে ব্যবস্থা’

নভেম্বর ১, ২০১৯

ঢাকা জার্নাল: দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, বদলির তদবির করা অপরাধ। যারা এ অপরাধে জড়াবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শুক্রবার দুপুরে রাজশাহীতে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এ বিশেষ সামাজিক উদ্বুদ্ধকরণ ও সচেতনতামূলক সভার আয়োজন করে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস।

রাজশাহীর শহীদ এ এইচ এম কামারুজামান জেলা পরিষদ মিলনায়তনে এ সভা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন দুদকের চেয়ারম্যান।

তিনি বলেন, শিক্ষক বদলি প্রক্রিয়ায় কী হয়, আমরা জানি। সে কারণে আমরাও বলেছি, সবকিছু কম্পিউটারাইজড করতে হবে। কম্পিউটারই বলে দেবে- রহিম কোথায় যাবে, করিম কোথায় যাবে। ক্রাইটেরিয়া ফিক্সড করবেন। কম্পিউটার বলে দেবে, কে কোথায় যাবে। বদলি প্রক্রিয়া অনলাইনে হবে, কোনো তদবির চলবে না। তদবির একধরনের অপরাধ। তদবির একটা দুর্নীতি।

তদবিরবাজদের হুঁশিয়ার করে ইকবাল মাহমুদ বলেন, তদবির আর ঘুষ খাওয়া একই। যে কারণে কিছু কিছু তদবিরবাজদের আমি ধরেছি। জেলে ভরেছি। তদবিরবাজরা সাবধান।! প্রাইমারি স্কুলের বদলির ব্যাপারে তদবরি করবেন, আপনার সমস্যা হবে। আমি এটা হুঁশিয়ারি দিতে চাই- আপনি হাওরে কেন যাবেন না, চাকরি করতে এসেছেন, আপনাকে হাওরে যেতে হবে।

তিনি বলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়াও স্বচ্ছ হতে হবে। আপনারা এবার দেখেছেন পুলিশের নিয়োগ প্রক্রিয়া। আমরা অনিয়ম বন্ধ করতে পেরেছি। আমি পুলিশ বিভাগকে সাধুবাদ দিয়েছি। ধন্যবাদ দিয়েছি যে, একেবারে দুর্নীতিমুক্তভাবে, কারো কথা না শুনে পুলিশের নিয়োগ হয়েছে। শিক্ষকও নিয়োগ হবে, কারো তদবিরে নয়। শিক্ষা ব্যবস্থায় কোনো দুর্নীতি সহ্য করা যাবে না। আমরা সহ্য করব না।

কেউ দুদকের হাত বেঁধে রাখেনি, উল্লেখ করে চেয়ারম্যান বলেন, শিক্ষকের পেনশন নিতে গিয়ে কী ভোগান্তি! সেটা আমরা বন্ধ করার চেষ্টা করছি। যারা অপরাধী তাদেরকে আমরা ধরেছি। আমরা ঘুষ হাতেনাতে ধরেছি। আমাদের কেউ হাত বেঁধে দেয়নি। আমরা যেকোনো লোককেই ধরতে পারি। দুর্নীতি করলেই ধরা হবে। অনুমতি নিয়ে আমরা কাউকে ধরব না। আমরা সেটা দেখিয়ে দিয়েছি।

ইকবাল মাহমুদ বলেন, ধরে ধরে জেলে ভরা দুদকের বড় কাজ না। দুদকের বড় কাজ হচ্ছে, দুর্নীতি যেন না হয়, সে কাজটা করা। আমি গত সাড়ে তিন বছরে দেখলাম, অনেক দুর্নীতিবাজ ধরে জেলে ভরা হলো। কিন্তু লাভের লাভ তেমন কিছুই হলো না। শেষ পর্যন্ত আমরা কাছে মনে হয়েছে, আমাদের দুটো জায়গায় কাজ করতে হবে- একটা হচ্ছে প্রাইমারি স্কুল, আরেকটা হাইস্কুল।

তিনি বলেন, আমার কাছে মনে হয়েছে, মানসম্মত শিক্ষা পেলে একটা লোক দুর্নীতিবাজ হতে পারে না। একটা লোক দুর্নীতিবাজ হতে পারে না যদি সে প্রাইমারি স্কুলে সততার সাথে, শিক্ষকের কথা শুনে, মা-বাবার কথা শুনে পড়াশোনা করে। সে বড় হয়ে দুর্নীতিবাজ হতে পারে না।

এজন্য দুদক চেয়ারম্যান শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষা দেয়ার বিষয়ে তাগিদ দেন। আর শিক্ষকদের যেন শুধু নির্বাচন ছাড়া অন্য কোনো কাজে লাগানো না হয় সেজন্য তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আকরাম আল-হোসেন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. এ এফ এম মনজুর কাদির ও প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের রাজশাহী বিভাগীয় উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ। সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক হামিদুল হক। আর স্বাগত বক্তব্য দেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুস সালাম।

সভায় রাজশাহী প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের ইনস্ট্রাক্টর এবং বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন। মুক্ত আলোচনায় তারা মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নের নানা দিক তুলে ধরেন।
ঢাকা জার্নাল, নভম্বের ০১, ২০১৯