আবরার হত্যা মামলার চার্জশিট এ সপ্তাহেই: মনিরুল ইসলাম
নভেম্বর ১, ২০১৯ ঢাকা জার্নাল: বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ রাব্বীকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের কার কী ভূমিকা ছিল তা নিরুপণ করা হচ্ছে। এই মামলার চার্জশিট নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই দাখিল করা হবে। পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম আজ শুক্রবার (১ নভেম্বর) এই তথ্য জানান।
দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) হলে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ‘আবরার হত্যাকাণ্ডের জন্য ছাত্র রাজনীতি না মূল্যবোধের অবক্ষয়, কোনটি দায়ী’-শীর্ষক ছায়া সংসদ বিতর্ক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে বিচারক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক আবু মোহাম্মদ রইস, বাংলা ট্রিবিউনের নির্বাহী সম্পাদক হারুন উর রশিদ, আরিফুর রহমান, নয়ন আদিত্য এবং উপ কর-কমিশনার মেহেদী হাসান তামিম। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ীদের ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়।
সিটিটিসি’র প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আবরার হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের পরিচয় যাই হোক মূলত তারা দুর্বৃত্ত ও অপরাধী। রাজনীতি থেকেও তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে। আমরা এই মামলার চার্জশিট নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই দাখিল করবো। সেখানে প্রাসঙ্গিক ডকুমেন্ট হিসেবে সিটিটিভি ফুজেটও দাখিল করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘কোনও ছাত্র সংগঠন অন্য ছাত্র বা সাধারণ কাউকে হত্যা বা মারধরের নির্দেশ দেয় না। বরং রাজনীতির প্ল্যাটফর্মকে ব্যবহার করে কেউ কেউ নিজের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করে থাকে। এটা রাজনীতির দায় নয়। বরং ওই সব অপরাধী দুর্বৃত্তের দায়।’
আবরার হত্যার ঘটনায় ২১ আসামি গ্রেফতার হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ঘটনার পরপরই পুলিশ ১০ জনকে আটক করে। পরে জানা যায় তারা সবাই ওই মামলার আসামি। হত্যা মামলায় ১৯ জন আসামির বাইরেও তদন্তে বেশ কয়েকজনকে জড়িত পাওয়া গেছে। ১৯ আসামি হলেও এখন পর্যন্ত আমরা গ্রেফতার করেছি ২১ জনকে। এদের মধ্যে অনেকেই ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। হত্যার ঘটনায় কার কী ভূমিকা ছিল সেটা আসামিরা বলেছে।’
আবরার হত্যার তদন্তে পুলিশ কোনও প্রতিবন্ধকতার সম্মুখিন হয়েছিল কিনা- জানতে চাইলে মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘সঠিক এবং উপযুক্ত তথ্যের প্রতিবন্ধকতা ছিল। এছাড়া অন্য কোনও ঝামেলা হয়নি।’
বিতর্ক প্রতিযোগিতার অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে মনিরুল ইসলামসহ অন্যরাতিনি আরও বলেন, ‘ঘটনার রাতে টহল পুলিশের দল কোনও মাধ্যমে তথ্য পেয়ে সেখানে যায়। কিন্তু অনুমতি ছাড়া কোনও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ভেতরে প্রবেশ করা যায় না এমন একটা নিয়ম ছিল। কিন্তু পুলিশ যদি ওই রাতে সঠিক তথ্যটি পেতো যে আবরার নামে কোনও ছাত্রকে হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর করা হচ্ছে, তাহলে অবশ্যই পুলিশ ওই নিয়মকে অমান্য করে ভেতরে প্রবেশ করতো। কারণ তখন নিয়মের অপরাধ ঠেকানো বেশি জরুরি।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সিটিটিসি’র প্রধান বলেন, ‘এমন অনেক চাঞ্চল্যকর ঘটনা রয়েছে যেখানে রাজধানীতির কোনও প্রভাব নেই। যেমন হলি আর্টিজান হামলা ও নুসরাত হত্যা। যেখানে আসলে রাজনীতি বা ছাত্র রাজনীতির কোনও দায় নেই, দায় মূল্যবোধের।’
‘মেধাবী মাত্রই আমরা মূল্যবোধ সম্পন্ন, বিবেক সম্পন্ন বলতে পারি না’ উল্লেখ করে মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘কাগুজে নম্বরের ওপর ভিত্তি করে অনেককে আমরা মেধাবী আখ্যা দিয়ে থাকি। কিন্তু প্রকৃত মেধাবী তারাই যাদের মূল্যবোধ রয়েছে, দেশের প্রতি, মানুষের প্রতি, সমাজের প্রতি ও পরিবারের প্রতি দায়বদ্ধতা রয়েছে। আর এই মূল্যবোধ পর্যায়ক্রমে তৈরি হতে থাকে।’
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণের সভাপতিত্বে ছায়া বিতর্কে অংশ নেন তেজগাঁও কলেজ ও সরকারি বাংলা কলেজের শিক্ষার্থীরা।
উল্লেখ্য, গত ৬ অক্টোবর রাতে আবরার ফাহাদকে ডেকে নিয়ে যায় বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। এরপর রাত ৩টার দিকে শেরেবাংলা হলের নিচতলা ও দুইতলার সিঁড়ির করিডোর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ময়নাতদন্তের পর চিকিৎসকরা জানান, আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। নিহত আবরার বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি শেরে বাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন।
এ হত্যার ঘটনায় আবরারের বাবা বাদী হয়ে ১৯ জনকে আসামি করে চকবাজার থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
ঢাকা জার্নাল, নভেম্বর ০১, ২০১৯
You must be logged in to post a comment.