সিলিন্ডার বিস্ফোরণ: চিকিৎসাধীন কেউ আশঙ্কামুক্ত নন

অক্টোবর ৩১, ২০১৯

ঢাকা জার্নাল: রাজধানীর রূপনগরে বেলুন ফুলিয়ে বিক্রির সময় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আহত ছয় জনের মধ্যে কারও অবস্থাই আশঙ্কামুক্ত নয়। বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) বিকালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মো. আলাউদ্দিন এ তথ্য জানান।

আহদের মধ্যে তিন জন শিশু, দুই জন পুরুষ ও এক নারী রয়েছেন। আহতরা হলেন শিশু মিজানুর রহমান মিজান (৬), মো. জনি (৯) ও মো. সিয়াম (১১)। এছাড়া গৃহবধূ জান্নাত বেগম (২৫), রিকশাচালক জুয়েল সরদার (২৯) ও আটক বেলুন বিক্রেতা আবু সাইদ (৩০) চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

চিকিৎসক ডা. মো. আলাউদ্দিন বলেন, আহতদের মধ্যে শিশু মিজান, রিকশাচালক জুয়েল সরদার, ও বেলুন বিক্রেতা আবু সাইদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। বাকি তিন জনের অবস্থা কিছুটা উন্নতির দিকে। তবে এখন পর্যন্ত ছয় জনের কেউই আশঙ্কামুক্ত নয়।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, শিশু মিজান নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন রয়েছে। তার পেটে আঘাতের কারণে ভুড়ির বেশকিছু অংশ বের হয়ে গিয়েছিল। অপারেশনের পর তাকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে। মিজান নেত্রকোনার খালিয়াজুড়ি উপজেলার সাতগাঁও গ্রামের রোকন মিয়ার ছেলে। বর্তমানে মিরপুরের রূপনগর ১১ নম্বর রোডের মজিবরের বস্তিতে পরিবারের সঙ্গে থাকে। শিশুটি স্থানীয় একটি স্কুলের প্লে-গ্রুপের শিক্ষার্থী। তার বাবা রোকন স্কুলভ্যান চালক এবং মা মিনা আক্তার একজন গৃহিনী। দুই ভাইয়ের মধ্যে মিজান বড়।

মিজানের বাবা রোকন মিয়া জানান, সে কোচিং শেষে বাসায় ফেরার পথে বেলুন ফোলানো দেখতে বিক্রেতার কাছে গিয়েছিল। আর ওই সময় বিস্ফোরণ ঘটে। এরপর থেকে মিজানকে খুঁজে যাওয়া যাচ্ছিল না। সন্ধ্যা ৭টায় ঢাকা মেডিক্যালে গিয়ে তাকে খুঁজে পাই। এখনও মিজানের জ্ঞান ফেরেনি।

ঢামেক হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি বিভাগের অধীন শিশু ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন শিশু জনি বিস্ফেরণে মুখমন্ডলসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত পেয়েছে। এছাড়া তার চোখেও আঘাত রয়েছে। তারও বাড়ি নেত্রকোনায়। সে মোহনগঞ্জ উপজেলার বড়পাইশিয়া গ্রামের সুলতান মিয়ার ছেলে। জনির বাবা পেশায় রিকশার মেকানিক। জনি পরিবারের সঙ্গে শিয়াল বাড়ি বস্তিতে থাকে। চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে সে তৃতীয়।

জনির মা পারভীন আকতার বলেন, ‘আমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে, তার ছোট বোনের (তাসনিয়া) জন্য বেলুন কিনতে গিয়েছিল। বিস্ফোরণে সে আহত হয়।

আহত জান্নাত বেগম একজন গৃহিনী। তার স্বামী নজরুল ইসলাম পেশায় রিকশাচালক। এই দম্পতির গ্রামের বাড়ি ভোলায়। তারা বর্তমানে ফজল মাদবরের বস্তিতে একটি ঘরে ভাড়া থাকেন। বিস্ফোরণে জান্নাতের ডান হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এবং পেটে ক্ষত হয়েছে।

চিকিৎসাধীন জান্নাত বলেন, কাঁচাবাজার শেষে আমি ওই পথ দিয়ে হেঁটে ঘরে ফিরছিলাম। হঠাৎ বিস্ফোরণের শব্দ শুনি। এরপর আমি আর কিছু বলতে পারি না। জ্ঞান ফিরলে জানতে পারি আমি হাসপাতালে।

বেলুন বিক্রেতা আবু সাইদরিকশাচালক জুয়েল সরদার নাটোরের সিংগাইর উপজেলার দমদমা গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে। শিয়ালবাড়ির সেলিমের বস্তিতে স্ত্রী রূপালী ও দুই ছেলে নিয়ে তার সংসার। বিস্ফোরণে তার বাম হাত ভেঙে গেছে, শরীরের বামপাশ হয়েছে ক্ষত-বিক্ষত।

তার স্ত্রী রূপালী জানান, বাসা থেকে রিকশা নিয়ে বের হয়েছিল জুয়েল। ১১ নম্বর রোডে বেলুন বিক্রি করতে দেখে ছোট ছেলে জিসানের জন্য বেলুন কিনতে বিক্রেতার কাছে যান। তখনই দুর্ঘটনার শিকার হন তিনি।

আহত শিশু মো. সিয়াম রূপনগরের স্থানীয় একটি স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তার বাবা তোফাজ্জল রুপনগর এলাকায় কাঁচামালের ব্যবসা করেন। বিস্ফোরণে সিয়ামের শরীরের ৫ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। সে বার্ন ইউনিটে চিকিসাধীন।

বিস্ফোরণে বেলুন বিক্রেতা আবু সাইদের বাম হাতের কব্জি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া তিনি পেটে ও বাম পায়ের উরুতে আঘাত পেয়েছেন। পুলিশ পাহারায় তিনি হাসপাতালের ক্যাজুয়ালিটি বিভাগে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সাইদ চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার কাঠালিয়াপাড়া গ্রামের শামছুল হকের ছেলে। বর্তমানে মিরপুরের সাড়ে ১১ নম্বর বসবাস করেন তিনি।

চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি জানান, আগে একটি দোকানে টেইলারিংয়ের কাজ করতেন। সেই কাজ ছেড়ে গত ১০/১২ দিন ধরে বেলুনের ব্যবসা করছেন।

এদিকে রূপনগরের বিস্ফোরণে আহতদের দেখতে বৃস্পতিবার দুপুরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে যান জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাসিমা বেগম। আহতদের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটি মানবিক বিপর্যয়। গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারে সতর্ক হতে হবে। এতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর নজরদারি করা প্রয়োজন। রাস্তায়, পাবলিক প্লেসে গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।’

জনস্বার্থে মেয়াদোত্তীর্ণ ও ত্রুটিপূর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার বন্ধে সরকারি নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানান তিনি।
ঢাকা জার্নাল, অক্টোবর৩১, ২০১৯