বাংলাদেশের সমসাময়িক রাজনীতি ও আমার অবস্থান

মার্চ ২৭, ২০১৮

মতামত

বাংলাদেশের সমসাময়িক রাজনীতি ও আমার অবস্থান

United Population Fund ( UNFPA) এর বিশ্ব জনসংখ্যা রিপোর্ট -২০১৭ অনুযায়ী বিশ্বের জনসংখ্যা প্রায় ৭৫০ কোটি। জেনেটিক্যালি এই মানুষগুলো একজন আরেকজন হতে ভিন্ন। ধর্মীয় মূল্যবোধ,মানবিকতা,নৈতিকতা,অনুভূতি,আচরণ স্বতন্ত্র এবং এটাই স্বাভাবিক। তবে আমার মনে হয় আমাদের বাংলাদেশের মানুষের ভিন্নতা আরো চরম প্রকট। বাংলাদেশের এখন পর্যন্ত কোন একটা ইস্যূতে ঐকমত্যে আসতে পারিনি। সেটা হোক সামাজিক,আর্থ-সামাজিক,অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক। রাজনৈতিক সংকট আরো হ য ব র ল। এখন রাজনীতির দুটি মেরু এক. মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির দুই. মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তি। আমি নিরপেক্ষ নই এবং যারা নিজেদের নিরপেক্ষ প্রমাণের দাবী করে তাদেরকে আমি চরম অপছন্দ করি। আমি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সেভাবে জড়িত না থাকলেও আমি হাইব্রীড না। আমি নেতিবাচক সমালোচনা করে কাউকে ছোট করা না নিজের ইতিবাচক বিষয়ে ফুটিয়ে তুলতে আমি বেশি পছন্দ করি। সেই হিসেবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৪৭ বছরেও চলমান দলকানা বিতর্কে আমার অবস্থান তুলে ধরার প্রয়াস। খুব সম্প্রতি আঙ্কাটাড রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল যে, এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে খুব শীঘ্রই বের হয়ে উন্নয়নশীল দেশ হচ্ছে। তার কয়েকদিনের মধ্যে জাতিসংঘ বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে ঘোষণা করলো। এটা আমরা যারা সত্যিকারের বাঙ্গালী তাদের জন্য পরম পাওয়া। কারণ ১৯৭৫ এ বঙ্গবন্ধু হত্যার পর দীর্ঘ ২২ বছর ফুলে ফেপে উঠেছে দেশবিরোধীরা যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করেছিল। কিন্তু একটা দেশের উন্নয়নের যে রোডম্যাপ সেটা ধরে কেউ এগোতে পারেনি তারা ব্যস্ত ছিল ক্ষমতা ধরে রাখতে। বাংলাদেশ দীর্ঘ সময় হল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্ব ব্যাংক তাদের একটা প্রতিবেদনে তুলে ধরেছে বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ১০ লক্ষ লোক দারিদ্র‍্যসীমা থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। বিশ্ব অর্থনীতিবিদরাও বিস্মিত যে, বাংলাদেশের অর্থনীতি হল কলঙ্কের অর্থনীতি যেখানে ডেসটিনি,হলমার্ক কেলেঙ্কারী, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে বড় অঙ্কের টাকা ফিলিপাইনের রিজাল ব্যাংকে চলে যাওয়া। তারপরও বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু একটা গ্রুপ আছে যারা সরকারের সব উন্নয়নকেই বিতর্কিত করতে চায়। কয়েকদিন হল ফেসবুকে খেয়াল করছি অনেকেই জাতিসংঘের এই স্বীকৃতিকেও প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য অপপ্রচার চালাচ্ছে। তাদের নানা যুক্তি তারমধ্যে জাতিসংঘ কি সত্যিই স্বীকৃতি দিয়েছে নাকি? জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে এরকম কিছু দেখলাম না। বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু লোন কত? এগুলো দিয়ে উন্নয়নের স্বীকৃতি ঢেকে রাখতে চায়। আসলে এরা কারা আর এদের ঝাল যে কিসের সেটা তো জানা। এক বুদ্ধিজীবী (মোনায়েম খানের নাতিদের কেউ একজন) পদ্মাসেতুর কাজ শুরুর দিকে ঢাকার ফুটপাতের একজন মানুষের ছবি দিয়ে লিখেছে এতো টাকা দিয়ে সেতু করে হবে যদি পেটে ভাত না থাকে। দেখেন কত সুন্দর যুক্তি, বুদ্ধিজীবী ছাড়া কিছু বলা যায়? একটা উন্নয়ন যে আরেকটা উন্নয়নকে তরান্বিত করে সেই ধারণা কি সামান্যও আছে? এক বঙ্গবন্ধু সেতুর জন্য উত্তরবঙ্গের অর্থনৈতিক অবস্থা বদলে গেছে। দারিদ্র‍্যসীমা হ্রাস পেয়েছে। পদ্মাসেতু হলেও যোগান এবং চাহিদার ভারসাম্য আরো বেড়ে যাবে। তাতে অর্থনৈতিক অবস্থা আরো শক্তিশালী হবে। উন্নয়ন প্রক্ষেপণে দেখা যায় শুধু পদ্মাসেতু বাংলাদেশের জিডিপিতে ২% অবদান রাখবে। এছাড়া সরকারের ফার্স্ট ট্র‍্যাকভুক্ত দশটা প্রকল্প আছে এগুলো বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৮% হয়ে যাবে। যেটা সপ্ত পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাতে প্রাক্কলিত। যারা অপপ্রচার চালাচ্ছে তারা ব্যস্ত জার্মানীর অখ্যাত সংস্থার রিপোর্ট শেয়ার করতে। তাদের মাথা মোটা বুদ্ধির জন্যই হয় তো কোন আন্দোলনে হালে পানি পায় না। এখন চলছে কোটা সংস্কার আন্দোলন। এই আন্দোলনে কোন কোটাকে টার্গেট করা হচ্ছে সেটা বোঝার জন্য কিন্তু খুব মেধাবী হবার দরকার নেই। এই আন্দোলনের মূল মাস্টার মাইন্ড হল মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তি। তারা এটাকে ইস্যূ করে মাঠ গরম করবে সেই সাথে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের গালি দিয়ে একটু মনে থেকে তৃপ্তি নিবে। আন্দোলনের চাল চিত্রগুলো খেয়াল করে মনে হল একদম বাশের কেল্লা টাইপের আন্দোলন।এই আন্দোলনে আবার কিছু হাইব্রীড ছাত্রলীগও যুক্ত। আসলে দীর্ঘ সময় ধরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার ফলে কিছু সুবিধাবাদী ছাত্র নিজের ভোল পালটে আজ বড় ছাত্রলীগ। এদের ঢেলায় আসল আওয়ামী লীগ কোণঢাসা। যা হোক আওয়ামী লীগের উচিত ঝাকা বোঝাই করার চিন্তা না করে সত্যিকারের লোকদের দলে এগিয়ে দেয়া। বাংলাদেশের উন্নয়নের স্বার্থে এবং মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তিকে চপেটাঘাত করতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় দেখতে চাই। সেটা হোক গণতান্ত্রিক উপায়ে হোক স্বৈরতান্ত্রিক। আমি নিরপেক্ষ নই, আমি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে।
মো: মোস্তাফিজুর রহমান
সাংবাদিকতা বিভাগ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.