প্রশ্নের মুখে নিশ্চুপ ছিলেন ফরহাদ মজহার

জুলাই ১৯, ২০১৭

ঢাকা জার্নাল:আদালতে দেওয়া বক্তব্য এবং তদন্তে পাওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করতে গোয়েন্দা কার্যালয়ে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় বেশিরভাগ প্রশ্নেরই কোনও উত্তর দেননি কবি ও প্রাবন্ধিক ফরহাদ মজহার। তবে ডিবির তদন্তে পাওয়া তথ্যের বিপক্ষেও তেমন কোনও কথা বলেননি তিনি। একইসঙ্গে গোয়েন্দা পুলিশের তদন্ত সঠিক পথেই এগোচ্ছে বলেও মন্তব্য তার। ডিবির তদন্ত নিয়ে নিজের কোনও প্রশ্ন নেই বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন তিনি। ঢাকা মহানগর পুলিশের তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছ থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
সোমবার (১৭ জুলাই) ফরহাদ মজহারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নোটিশ পাঠান তাকে অপহরণ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। এর পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) সকাল ১১টার দিকে স্ত্রী ফরিদা আখতারকে নিয়ে মিন্টো রোডের গোয়েন্দা কার্যালয়ে প্রবেশ করেন তিনি। প্রায় দুই ঘণ্টা গোয়েন্দা কার্যালয়ে অবস্থান করতে হয়েছে তাকে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দুপুর ১টার দিকে তিনি গোয়েন্দা কার্যালয় থেকে বেরিয়ে আসেন।
গত ৩ জুলাই মোহাম্মদপুর রিং রোডের নিজ বাসা হক গার্ডেন থেকে বের হন ফরহাদ মজহার। এরপর ভোর ৫টা ২৯ মিনিটে তিনি স্ত্রীকে ফোন করে জানান, ‘ফরিদা, ওরা আমাকে নিয়ে যাচ্ছে। ওরা আমাকে মেরে ফেলবে।’ পরে তার স্ত্রী ফরিদা আখতার আদাবর থানায় প্রথমে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) ও রাতে একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। ওইদিন রাত সাড়ে ১১টায় যশোরের নওয়াপাড়া এলাকায় হানিফ পরিবহনের ঢাকাগামী একটি বাস থেকে তাকে উদ্ধার করে র‌্যাব।

বহুল আলোচিত এই ঘটনার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ- কমিশনার গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, ‘উদ্ধারের পর ফরহাদ মজহারের আদালতে দেওয়া জবানবন্দি ও তদন্তে পাওয়া তথ্যের মিল নেই। এ কারণে তাকে ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তদন্তের প্রয়োজনে আবারও তাকে ডাকা হতে পারে।’

তদন্ত সংশ্লিষ্ট ডিবির কর্মকর্তারা বলছেন, ‘ফরহাদ মজহার আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে তাকে অপহরণ করে খুলনায় নিয়ে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলেছেন। এমনকি তার দাবি, সেদিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে অজ্ঞাতনামা অপহরণকারীরা তাকে হানিফ পরিবহনের একটি বাসের টিকিট ধরিয়ে দেয়। পরে তিনি ওই বাসে ঢাকায় চলে আসেন। তবে এ ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য পায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। অপহরণের দিন বিকালে তিনি খুলনার দুটি মার্কেটে স্বাভাবিকভাবে ঘোরাফেরা করেছেন। অর্চনা নামে এক নারীকে তিনি বিকাশের মাধ্যমে টাকাও পাঠিয়েছেন। এমনকি মোবাইল সেটের সিম বদলে ওই নারীর সঙ্গে ছয়বার কথাও বলেছেন তিনি।’

ডিবির একজন কর্মকর্তা জানান, জিজ্ঞাসাবাদের সময় ফরহাদ মজহারের সামনে এসব তথ্য উপস্থাপন করা হয়। এসব প্রসঙ্গে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি বেশিরভাগ সময়ই নিশ্চুপ ছিলেন। ফরহাদ মজহার এ সময় বলেন, ‘আমি যা বলার আদালতে বলেছি। এর বাইরে আমার আর কোনও ভাষ্য নেই।’ এ সময় ডিবির তদন্তে পাওয়া তথ্য-উপাত্তে তার কোনও সন্দেহ আছে কিনা জিজ্ঞাসা করলে তিনি তা নিয়েও কোনও প্রশ্ন তোলেননি। ফরহাদ মজহার এ সময় বলেন, ‘আপনাদের তদন্ত ঠিক আছে। আপনারা আপনাদের মতো তদন্ত করেন।’

গোয়েন্দা কার্যালয় থেকে বেরিয়ে বাসায় ফেরার পর ফরহাদ মজহারের স্ত্রী ফরিদা আখতার  জানান, ডিবির কর্মকর্তারা অপহরণের ঘটনা সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন তাদের কাছে। তারা তদন্তের জন্য যা যা জানতে চেয়েছেন সেসবের মধ্যে যা যা জানা ছিল তা তারা তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছে বলেছেন।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা  বলেন, ‘ফরহাদ মজহার একজন বুদ্ধিজীবী। তিনি জানেন জিজ্ঞাসাবাদে কতটুকু উত্তর দিতে হবে। এ কারণে তিনি বারবার আদালতের কথা বললেও তার সামনে প্রমাণ হিসেবে যেসব তথ্য-উপাত্ত রাখা হয়েছিল সেসব নিয়ে মুখ খোলেননি।’

ঢাকা জার্নাল, জুলাই ১৯, ২০১৭।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.