‘প্রেসিডেন্টকে যদি ইমপিচ করতে পারি, বিচারপতিকে কেন নয়’

জুলাই ৩, ২০১৭

ঢাকা জার্নাল : সংবিধান অনুযায়ী সংসদে প্রেসিডেন্টকে ইমপিচ (অভিশংসন) করা গেলে বিচারপতিকে কেন অপসারণ করা যাবে না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক। সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়কে সুপ্রিম কোর্টের বহাল রাখার সিদ্ধান্তটি সঠিক বলে মনে করেন না আওয়ামী লীগের এই নেতা। তিনি বলেন, সংবিধান অনুযায়ী আমরা প্রেসিডেন্টকেও ইমপিচ করতে পারি। যদি প্রেসিডেন্টকে পারি, হোয়াই নট চিফ জাস্টিস অ্যান্ড আদার জাস্টিস? এটা হচ্ছে আমার স্পষ্ট বক্তব্য।’
সোমবার (৩ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টায় বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে দিতে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধন বাতিল করে দেওয়া হাইকোর্টের রায় বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। রায়ের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে ড. রাজ্জাক বলেন, ‘আমরা জেনেছি, আপিল বিভাগ আমাদের আপিল খারিজ করে হাইকোর্টের রায়কে বলা রেখেছে। আমি মনে করি না, সুপ্রিম কোর্ট সঠিক জাজমেন্ট দিয়েছে। আমরা এটা নিয়ে সংসদেও কথা বলব।’
‘জাতীয় সংসদ জাতিকে যেভাবে প্রতিনিধিত্ব করে, আইনজীবী ও বিচারবিভাগ জাতিকে ওইভাবে প্রতিনিধিত্ব করে না’— মন্তব্য করে সরকারদলীয় এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্যসহ পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশেই সংসদ হচ্ছে হাউস অব দ্য ন্যাশন। আমাদের সংবিধানেও সংসদের কাছে সবাই অ্যাকউন্ট্যাবল। সংসদের কাছ সবার জবাবদিহিতা থাকতে হবে। সংসদের হাতে সর্বোচ্চ ক্ষমতা থাকবে। আমাদের বাহাত্তরের সংবিধানের মূল স্পিরিটও ছিল এটা। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে সেটা পরিবর্তিত হয়েছে। আমি মনে করি, মূল স্পিরিটে আমাদের থাকা উচিত। প্রতিবেশী দেশ ভারতেও এই ব্যবস্থা রয়েছে। সেখানে সংসদের কাছে জুডিশিয়ারি অ্যাকাউন্ট্যাবল। কেউ এর বাইরে নয়।’
সাবেক মন্ত্রী রাজ্জাক বলেন, ‘যুক্তরষ্ট্রের সিনেটে একক মেজরিটি থাকলে বিচারপতিকে চাকরিচ্যুত করা যায়। আমরা সেখানে দুই-তৃতীংশ মেজরিটির কথা বলেছি। দুই-তৃতীয়াংশ তো কম কথা নয়। ইচ্ছা করলেই তো সংসদ যে কারও বিরুদ্ধে এটা করতে পারবে না।’
সংসদের বিরুদ্ধে বিচার বিভাগের ঢালাও মন্তব্যের প্রেক্ষিতে ড. রাজ্জাক বলেন, ‘বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সংসদ সদস্যরা সৎ নন। তারা দুর্নীতিপরায়ণ, আদর্শে বিশ্বাসী নন। আমেরিকা-ভারতে দুইশ বছর আগে আমরা কী দেখেছি? এসব দেশের সিনেমাগুলো দেখলেও তার চিত্র পাবেন। ধীরে ধীরে এই অবস্থার উন্নতি ঘটছে। এখনও ভারতের সিনেমা দেখলে বুঝতে পারবেন, তাদের রাজনীতিবিদদের কিভাবে মূল্যায়ন করা হয়। ঢালাওভাবে এরকম অভিযোগ দেওয়া ঠিক নয়।’ দুয়েকজনের মধ্যে দোষ-ত্রুটি থাকলেও তার জন্য সবাইকে নৈতিকতাবিবর্জিত ও দুর্নীতিপরায়ণ আখ্যা দিয়ে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া মোটেও ঠিক নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ড. রাজ্জাক বলেন, ‘মনে রাখতে হবে, পলিটিক্স ইজ দ্য নোবেলিস্ট প্রফেশন। ইটস আ ডিফিকাল্ট প্রফেশন, ভেরি কমপ্লেক্স প্রফেশন। এটা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।’
আপিল বিভাগের এই রায়ের প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘এই রায়টি জনগণের ক্ষমতায়নের পরিপন্থী এবং বাহাত্তরের সংবিধানের স্পিরিটেরও বিরোধী। তবে আমরা মনে করি না যে এই আইনের মাধ্যমে সরকার ও বিচার বিভাগের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হবে।’
এই রায় নিয়ে জানানো প্রতিক্রিয়ায় রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘সার্বভৌম সংসদসের সিদ্ধান্ত আদালত বাতিল করতে পারে না। সংসদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। আমরা বিষয়টি নিয়ে আবারও সংসদে কথা বলবো। ১৯৭২ সালের সংবিধানে মূল কাঠামোর আলোকে আমরা এটা তৈরি করেছি।’

ঢাকা জার্নাল, জুলাই ০৩, ২০১৭।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.