সংসদে অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগ চাইলেন জাপা এমপি

জুন ২০, ২০১৭

ঢাকা জার্নাল: অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের পদত্যাগের দাবি করেছেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু এ দাবি তোলেন। একই সঙ্গে ব্যাংকিং খাতের মূলধন ঘাটতি পূরণে সরকারি অর্থ ব্যয়ের জন্য তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করার দাবিও করেছেন।

মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম মেম্বার জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু এ দাবি করেন।

ব্যাংক খাতে ব্যাপক লুটপাটের অভিযোগ এনে বাবলু বলেন, ‘ব্যাংকগুলোকে অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়েছে। ব্যাংকগুলোকে ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে নিয়ে আসা হয়েছে। এক লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ। ব্যাংকগুলো দেউলিয়া হয়ে আছে। এর মধ্যে ঋণ অবলোপন করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘কার টাকা অবলোপন করছেন? মানুষের টাকা লুট হচ্ছে, বিদেশে পাচার হচ্ছে। এসব নিয়ে অর্থমন্ত্রীর কোনও বক্তব্য নেই।’

তিনি বলেন, সোনালী, অগ্রণী ও বেসিকসহ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের অবস্থা দৈনদশা। ব্যাংকিং খাতে ১ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। এই টাকা দিয়ে বাজটের ঘাটতি পূরণ করা যেতো। খেলাপি ঋণ আদায় হলে ভ্যাট বাড়ানোর প্রয়োজন হবে না।

এমপি বাবলু বলেন, ‘লুটপাট কারা করছে? এরা কি আপনাদের চেয়ে, সরকারের চেয়ে শক্তিশালী? কেন তাদের আইনের আওতায় আনবেন না? বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান এখনও ঘুরে বেড়াচ্ছেন। দুদক নাকি তার বিরুদ্ধে কিছু পায়নি। শেয়ার বাজার লুট হয়েছে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি।’ তিনি তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের দাবি জানান।

ব্যাংকিং খাতের মূলধন ঘাটতি পূরণে বাজেটে ২ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাবের কঠোর সমালোচনা করে বাবলু বলেন, ‘ট্যাক্স পেয়ারের ২ হাজার কোটি টাকা উনি ব্যাংকিং খাতের ঘাটতি পূরণে দিচ্ছেন। মানুষের টাকা দিয়ে লুটপাটের টাকা পূরণ করছেন? এটা কোনও নৈতিকার মধ্যে পড়ে না। এটা অনৈতিক কাজ। উনি নৈতিকতা ও আইন বিরোধী প্রস্তাব কিভাবে করেন? এ ধরনের প্রস্তাব কোনোভাবেই উনি করতে পারেন না। এ টাকা উনি শিক্ষা-স্বাস্থ্য বা অন্য কোনও খাতে দিতে পারতেন। কেন আপনি ২ হাজার কোটি টাকা ব্যাংকের মূলধন পুনর্গঠনের দেবেন। আগের তিন অর্থ বছরেও আপনি টাকা দিয়েছেন। সরকার তাদেরকে টাকা দিতে যাবে কেন? অর্থমন্ত্রীর এই টাকা দেওয়ার কোনও অধিকার নেই। ট্যাক্স পেয়ারের মানি দিয়ে ‍লুটের টাকার ঘাটতি পূরণের কোনও অধিকার নেই। এজন্য তো উনাকে (অর্থমন্ত্রী) আইনরে আওতায় আনতে হবে। অর্থমন্ত্রীকে এজন্য আইনের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। উনার বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল চার্জ আনা উচিত বলে আমি মনে করি।’

সংসদ অধিবেশন

ব্যর্থতার দায়ভার নিয়ে অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগের অনুরোধ করে তিনি বলেন, ‘আপনার বয়স হয়ে গেছে। এখন সসম্মানে পদত্যাগ করে সম্মানের সঙ্গে বিদায় দিন। নিঃশর্ত বিদায় নিয়ে দেশের ১৬ কোটি মানুষকে মুক্তি দিন।’

‘বিচিত্র দেশের বিচিত্র মন্ত্রীর বিচিত্র বাজেট’ উল্লেখ করে বাবলু অর্থমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, ‘আপনি কি উন্নয়নের মহাসড়কে নাকি দুর্যোগের মহাসড়কে আছেন সেটা বিবেচনার বিষয়।’

ব্যাংক হিসাবে বাড়তি আবগারি শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে​ বাবলু বলেন, ‘ব্যাংক হিসাবে বাড়তি আবগারি শুল্ক ভুল বার্তা দিচ্ছে। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, এ শুল্কের নাম পরিবর্তন করবেন। তিনি বলেন, কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন রাখলে কানা ছেলে ​কানাই থাকে।’

চালের দাম বৃদ্ধির সমালোচনা করে বাবলু বলেন, ‘এক বছরে মোটা চালের দা​ম ৪৭ শতাংশ বেড়েছে। মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত। মানুষ চাল কিনতে পারছে না।’

জাতীয় পার্টির এই এমপি বলেন, ‘শুধু প্রবৃদ্ধি উন্নয়নের একমাত্র মাপকাঠি নয়। অর্থমন্ত্রী মিথ্যার বেসাতি দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন। সত্যের কাছাকাছি থাকতে হবে। সত্যকে আলিঙ্গন করার সাহস থাকতে হবে। সুশাসন না থাকলে মানুষ উন্নয়নের সুফল পাবে না।’

ঢাকা জার্নাল, জুন ২০, ২০১৭।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.