ফাইনালের স্বপ্নে বিভোর তারাও

জুন ১১, ২০১৭

ঢাকা জার্নাল :  অস্ট্রেলিয়াকে গুড়িয়ে দিয়ে ইংল্যান্ড গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই সেমিফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করেছে। তাদের এই জয়ে দ্বিতীয় দল হিসেবে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশও। গ্রুপ পর্বের দ্বিতীয় ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ারে সঙ্গে বৃষ্টির কল্যাণে একটি পয়েন্ট পেয়েছিল লাল-সবুজরা। আর তাতেই জ্বলে উঠার ‘জ্বালানি’ পায় টাইগাররা। সেই জ্বালানি দিয়েই শুক্রবার কিউইদের দুমড়ে মুচড়ে জয় ছিনিয়ে এনেছেন সাকিব-মাহমুদউল্লাহ। তারপরও শনিবার মধ্যরাত পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার  হারের অপেক্ষায় থাকতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। অবশেষে তিন পয়েন্ট নিয়ে প্রথমবারের মতো কোনও বৈশ্বিক টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে ওঠার কৃতিত্ব দেখালো বাংলাদেশ। মাশরাফিদের এমন সাফল্যে গর্বিত বাংলাদেশের হয়ে জাতীয় দলের জার্সিতে খেলা ক্রিকেটাররা। আবেগে আপ্লুত হয়ে বাংলা ট্রিবিউনকে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন হাবিবুল বাশার সুমন, মোহাম্মদ আশরাফুল, মোহাম্মদ রফিক ও শাহরিয়ার নাফিস। তাদের সবার প্রত্যাশা, নিজেদের স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে পারলেই বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে নাম লেখাতে পারবে।

হাবিবুল বাশার সুমন (সাবেক অধিনায়ক)

বৃষ্টির কারণে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে একটি পয়েন্ট না পেলে আমরা কখনোই সেমিফাইনালে যেতাম না। আমাদের গ্রুপটা এমনিতেই ‘ডেথ গ্রুপ’। এমন শক্তিশালী গ্রুপের বিপক্ষে বাংলাদেশের লড়াই করাটা বেশ কঠিনই ছিল। কন্ডিশনের কারণে শুরুতে আমাদের খেলাটা ধরতে একটু সময় লেগেছে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটা আমরা সব বিভাগেই অসাধারণ খেলেছি। এই মুহূর্তে ট্রফি থেকে আমরা খুব বেশি দূরে নেই। আমি টুর্নামেন্টের শুরুতেই বলেছিলাম, আমরা সেমিফাইনাল খেলবো। তবে এখন স্বপ্ন দেখি ফাইনাল খেলার। এখানে আমরা শুধু অংশ নিতেই যাইনি, কিছু করে দেখাতে গিয়েছি। এখন বাকি দুটি ম্যাচ খেলোয়াড়দের সর্বোচ্চ শ্রম দিয়ে খেলতে হবে। আমি মনে করি, এখানে নতুন করে কিছু করার নেই। এখানে আলাদা কিছু করতে গেলেই বরং হিতে বিপরীত হতে পারে। এই মুহূর্তে আমি সকল ক্রিকেটারদের অভিনন্দন জানাবো। তারা অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খারাপ খেললেও শেষ পর্যন্ত টুর্নামেন্টে নিজেদের রূপটা দেখাতে পেরেছে।

মোহাম্মদ রফিক (সাবেক ক্রিকেটার)

আমাদের কল্পনাকে হার মানিয়েছে মাশরাফিরা। শুক্রবার যে পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ম্যাচ জিতেছে, সেটা এক কথায় অসাধারণ। সত্যি কথা বলতে এবারের আসরে বাংলাদেশ সেমিফাইনালে খেলবে এটা আমি আশা করিনি। আমার ধারণা ছিল ২০১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ হয়তো বিশ্বমঞ্চে কিছু করে দেখাতে পারবে। মাশরাফিরা প্রথমবারের মতো সেমিফাইনাল খেলার সুযোগ পেয়েছে। তাদেরকে অভিনন্দন। অবশ্যই আমার পক্ষ থেকে তাদের প্রতি শুভ কামনা রইলো। এই মুহূর্তে টুর্নামেন্টে তাদের পাওয়ার কিছু নেই। এই সুযোগটাই তারা ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারবে। আশা করি, সামনের ম্যাচেও তারা তাদের এই আক্রমণাত্মক মানসিকতা বজায় রাখবে।

মোহাম্মদ আশরাফুল (সাবেক অধিনায়ক)

গত বিশ্বকাপের পর থেকে গত আড়াই বছর আমরা যেভাবে খেলেছি তার ধারাবাহিকতায় এই রেজাল্ট খুবই স্বাভাবিক। সত্যি কথা বলতে বাংলাদেশের ক্রিকেটে আজকে আনন্দের দিন। আমাদের হাতে আর দুটি ম্যাচ রয়েছে। আমরা যদি আমাদের সেরা ক্রিকেট খেলতে পারি, তাহলে সামনের দুটি ম্যাচ জেতা কঠিন কিছু নয়। স্বপ্ন দেখাতো দোষের কিছু নয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে চাই দক্ষিণ আফ্রিকাতে সেমিফাইনালে, ওরা আসলে আমাদের জন্য ফাইনালে যাওয়া সহজ হবে। অন্যদিকে ভারতের সঙ্গে সম্প্রতি পারফরম্যান্স একটু খারাপ। তাই কঠিন পরিস্থিতে পড়তে হবে বাংলাদেশকে। সবাই অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচটিতে ভাগ্যের কথা বলছে। ক্রিকেট খেলায় ভাগ্যের সহায়তা লাগেই। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শুরু থেকেই  আমার  মনে হয়েছিল বাংলাদেশ দল সেমিফাইনালে যাওয়ার মতোই দল। আমার বিশ্বাস ছিল নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জিতেই আমরা সেমিফাইনাল খেলবো। কিন্তু ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেরা কম্বিনেশনের অভাবে ম্যাচটি আমরা হেরে যাই। দ্বিতীয় ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে দীর্ঘদিনের বিরতিটা স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠেছে। ওই ম্যাচেই ভাগ্যের সহায়তা পেলাম আমরা। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আমরা যে একাদশ নিয়ে খেলেছি, সেটাই সেরা কম্বিনেশন। পরের ম্যাচগুলোতে উইকেট দেখে সেরা কম্বিনেশন তৈরি করাটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ।

শাহরিয়ার নাফিস (বর্তমান ক্রিকেটার )

বাংলাদেশের ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে এটাই সবচেয়ে বড় সাফল্য। একটি বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে আমরা সেমিফাইনাল খেলতে যাচ্ছি এটা বিরাট পাওয়া। আমরা গত কয়েক বছর ধরেই উন্নতি করে যাচ্ছিলাম। সেই ধারাবাহিকতাতেই আমাদের এই সাফল্য। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে আরও একবার প্রমাণ হলো- আমাদের উন্নতির জয়যাত্রাটা অব্যহত আছে। আমি একজন ক্রিকেটার হিসেবে গর্ববোধ করি আমরা সঠিক পথেই আছি। সেমিফাইনালে আমাদের ভাবনা চিন্তার কিছু নেই। আমরা এই মুহূর্তে নির্ভার থেকেই ক্রিকেট খেলার চেষ্টা করবো। এরপর রেজাল্ট যা হবে সেটা পরে দেখা যাবে। কোনও ধরনের পরিবর্তনও আনার প্রয়োজন নেই। ঠিক যেভাবে খেলেছে সেভাবেই খেলা উচিত পরের ম্যাচটিতেও। আমি আশা করি, চাপহীন বাংলাদেশই এগিয়ে থাকবে সেমিফাইনালে। সবাই ভালো করেছে। তাদের প্রতি আমার শুভ কামনা। একজন ক্রিকেটার এবং বাংলাদেশি হিসেবে আমি সত্যিই অনেক বেশি গর্বিত।

ঢাকা জার্নাল, জুন ১০, ২০১৭।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.