বিএনপি-জামায়াতের ‘সহিংসতাকারীদের’ দ্রুত সাজার তাগিদ

জানুয়ারি ৪, ২০১৭

ঢাকা জার্নাল: আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যাকারীসহ ২০১৩ ও ১৪ সালের বিভিন্ন সময় বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনে সহিংসতাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বুধবার (০৪ জানুয়ারি) বেলা ১২টার দিকে গণভবন থেকে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস বিরোধী ও উন্নয়ন সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে রংপুর বিভাগের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সকালে এ নির্দেশনা দেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী এ বিভাগের রংপুর, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম জেলার সঙ্গে কথা বলেন। কারিগরি ত্রুটির কারণে বিভাগের অন্য জেলাগুলোর সঙ্গে সংযোগ স্থাপন সম্ভব হয়নি।

গাইবান্ধা জেলার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের সময় প্রধানমন্ত্রী সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের খুনি এবং ২০১৩ সাল ও তার পরবর্তী সময়ে পুলিশ হত্যাকারী বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনের সময় তাণ্ডবকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার বিষয়ে জানতে চান প্রধানমন্ত্রী।

সহিংসতাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আজকে তো আমার একজন এমপিকে হত্যা করল। এরপরে আর কত ঘটনা ঘটবে কে জানে…। কাজেই কঠোর একটা ব্যবস্থা নিতে হবে।

গত শনিবার গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনকে উপজেলার সর্বানন্দ ইউনিয়নে শাহাবাজ গ্রামে নিজ বাড়িতে ঢুকে তাকে গুলি করে সন্ত্রাসীরা। ঘটনার পর রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

এমপি হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে পুলিশ সুপার বলেন, সঠিক তথ্য উৎঘাটনে পুলিশের বিভিন্ন বিশেষায়িত ইউনিট কাজ করছে।

২০১৩ সাল ও পরবর্তী সময়ে গাইবান্ধায় পুলিশ হত্যাকারী ও বিএনপি জামায়াতের আন্দোলনে তাণ্ডবকারীরা ধরা পড়েছে কিনা?- জানতে চান প্রধানমন্ত্রী।

জবাবে পুলিশ সুপার জানান, ১৩ সালে চার পুলিশ হত্যাকাণ্ডে দুই’শ ৩৫ জন মিছিল করে আক্রমন করে।… প্রত্যেককে আমরা আইনে সৌপদ্য করেছি। চার্জশিট করে মামলা করা হয়েছে। এটা দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে আছে।’

এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৩ সালের ঘটনা এখনো এ পর্যন্ত নিষ্পত্তি হয়নি, তাহলে দ্রুত বিচার আর কি হচ্ছে?’

‘দ্রুত বিচার যদি, ১৩ থেকে আজকে ১৭ এতোদিন লাগে, তাহলে দ্রুত বিচার কি হলো।.. এটাও দেখতে হবে।’

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, সুন্দরগঞ্জে আওয়ামী লীগেরই দেড়’শ ওপর বাড়িঘর ভাঙচুর, তাদের দোকান-পাট, ব্যবসা বাণিজ্য সব কিছু লুটপাট করা হয়। যেভাবে তাণ্ডব চলেছে ১৩, ১৪ ও ১৫ তে!’

নাশকতা ও তাণ্ডবে ২০১৪ সালে ১৩৯টি মামলা এবং ২০১৫ সালে ২৬টি মামলা হয়েছে বলে জানান পুলিশ সুপার।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মামলা হলে হবে না, আসামি ধরা পড়ছে?..‘এমন কী আছে কোনো আসামি ধরা পড়েনি?’

তদন্ত করে অধিকাংশকেই গ্রেফতার করা হয়েছে জানিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, ‘অল্প কিছু আসামি রয়েছে যাদের ধরার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’

সন্ত্রাস বিরোধী ভিডিও কনফারেন্সের সূচনা বক্তব্যে এমপি লিটন হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সংসদ সদস্য বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতো, তাদের হাত থেকে জনগণকে রক্ষা করতো। এজন্য তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। কিভাবে তারা সরকারি অফিস পুড়িয়েছে, পুলিশকে পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে। এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলো এমপি লিটন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যে ভাবেই হোক অপরাধীদের খুঁজে বের করে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদসহ বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনের সময়কার সহিংসতার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শান্তিপূর্ণ দেশ গড়তে চাই। দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠিত থাকলে উন্নতি দ্রুত হয়।

সন্ত্রাস জঙ্গিবাদের স্থান বাংলার মাটিতে হবে না দৃঢ় প্রত্যয় আবারো উচ্চারণ করে শেখ হাসিনা।

সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ নির্মূলে, দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সবার সহযোগিতা চান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নতি করতে হলে শান্তি প্রতিষ্ঠা একান্ত ভাবে প্রয়োজন।’

সমাপণী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী জানান, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যহত থাকবে।

শিক্ষার্থীসহ কারো সন্তান যেন জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে জড়িত না হয় সেজন্য শিক্ষক, অভিভাবক, ইমাম, মাদ্রাসা শিক্ষকসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে সজাগ থাকার অনুরোধ জানান প্রধানমন্ত্রী।

সমগ্র বাংলাদেশে ইসলামের শান্তির বাণী প্রচার করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, কেউ যেন ইসলামের নামে সন্ত্রাস না করে।

শিক্ষার্থীদের মনযোগ দিয়ে পড়াশোনা করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে যারা শিক্ষার্থী তারাই ভবিষ্যতে জাতির কর্ণধার হবে।

বিএনপি আমলে কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কমিউনিটি যাতে ভালোভাবে চলে সে জন্য সংশ্লিষ্ট কমিউনিটির মানুষগুলোকে ব্যবস্থা নিতে হবে।

তিনি বলেন, যারা বন্ধ করতে চায় তারা যেন ক্ষমতায় আসতে না পারে সে ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।

এ পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘যারা ধ্বংসাত্মক কাজ করে, জনসেবার কাজ বন্ধ করে দেয়, যারা মানুষের কল্যাণ চায় না তাদের ক্ষমতায় আসার কোনো অধিকার নেই।’

‘যারা জনগণ বিরোধী কাজ করে তারা যেন ভবিষ্যতে ক্ষমতায় আসতে না পারে। সে ব্যবস্থা নিলে আর দুশ্চিন্তার কিছু থাকবে না।’

এর আগে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ড. ওয়াজেদ মিয়া রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ভবন এবং এক হাজার আসনের শেখ হাসিনা ছাত্রী হলের ভিত্তি স্থাপন ও বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী।

শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামোসহ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

শিক্ষার্থীদের বিশ্বমানের গবেষণা ও পড়াশোনার মাধ্যমে যোগ্য হিসেবে নিজেদের গড়ে তোলারও আহ্বান জানান তিনি।

ঢাকা জার্নাল, জানুয়ারি ০৪, ২০১৭।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.