শেখ হাসিনার পা ছুঁয়ে সালাম করা কর্মকর্তা পদোন্নতি পাননি

ডিসেম্বর ৪, ২০১৬

govএস এম আববাস ।। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার পা ছুঁয়ে সালাম করার কারণে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় এক ক্যাডার কর্মকর্তাকে পদাবনত (ডিমোশন) রাখা হয়েছিল ছয় বছর। এমনকি চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল তার স্ত্রীকেও। প্রশাসন ক্যাডারে এই কর্মকর্তাকে এবার বড় ধরণের পদোন্নতি তালিকাতেও রাখেনি বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের প্রশাসন।

এই প্রেক্ষাপট তুলে ধরে গত বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) পদোন্নতি বঞ্চনার অভিযোগ তুলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর আবার পদোন্নতি চেয়ে আবেদন করেছেন উপসচিব আবুল কালাম আজাদ (পরিচিতি নম্বর ৫৮৪১)।

আট মাসের ব্যবধানে গত ২৭ নভেম্বর সকালে প্রশাসনের তিন স্তরে অতিরিক্ত সচিব পদে ১৪৫, যুগ্মসচিব পদে ১৮৬ এবং উপসচিব পদে ২০৫ জনসহ মোট ৫৩৬ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। প্রজ্ঞাপন প্রকাশের পর বিকেলেই পদোন্নতি বঞ্চনার অভিযোগ ওঠে ক্যাডার কর্মকর্তাদের মধ্যে থেকে। যদিও এ নিয়ে গণমাধ্যমের কাছে কেউ বক্তব্য দিতে চাননি। তবে পদোন্নতির তিনদিন পরে জনপ্রশাসনে পদোন্নতি বিবেচনার জন্য আবেদন করেন বিসিএস একাদশ ব্যাচের কর্মকর্তা মো.আবুল কালাম আজাদ। আবেদনে তার প্রতি বঞ্চনার কথা তুলে ধরেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান।

আবেদনে আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘একাদশ ব্যাচের মেধাক্রমে সর্বশেষ কর্মকর্তাসহ ১৮৬ জনকে যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তালিকায় আমার নাম নেই। এর কারণও জানতে পারিনি।’

আবেদনে বলা হয় ‘ছাত্রজীবনে আমি ছা্ত্রলীগের ভিপি ছিলাম। বিগত ২০০৩ সালে আমি গাইবান্ধা জেলায় সিনিয়র সহকারী সচিব থাকাকালে বিএনপি-জামাত জোট সরকারের সময় তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জাতির জনকের সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার পা ছুঁয়ে সালাম (কদমবুচি) করেছিলাম।সেই অপরাধে আমাকে পদাবনত করে রাখা হয় এবং আমার স্ত্রীকে চাকুরিচ্যুত করা হয়। আমি ২০০৯ সাল পর্যন্ত পদাবনত থাকি।পরে ২০১২ সালের আট ফেব্রুয়ারি পদোন্নতি পাই এবং এক বছর নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক ছিলাম।আমি সারাজীবনই বর্তমান সরকারের অনুগত ছিলাম,আছি এবং থাকবো।চাকরি জীবনে আমি নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছি।

পদোন্নতির আবেদনে আবুল কালাম আজাদ আরো জানান, ধর্মমন্ত্রী, ভূমিমন্ত্রী এবং একজন সংসদ সদস্যকে পদোন্নতির জন্য উপ-আনুষ্ঠানিক পত্রও দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু পদোন্নতি হয়নি। ‘বিবেচনামতে প্রতিটি ক্ষেত্রে বিধি-বিধানের আলোকে ন্যায়ানুগভাবে এই মতামত’ তুলে ধরে আবেদনে পদোন্নতি দাবি করেন এই কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শনিবার (৩ ডিসেম্বর) বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত সচিব ইব্রাহিম হোসেন খান বলেন, ‘আবুল কালাম আজাদের এসিআরে (ক্যাডার কর্মকর্তাদের বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদন) সমস্যা রয়েছে। এ বিষয়টি তার সাইনিং অথরিটির মাধ্যমে সমাধান করলে পদোন্নতিতে সমস্যা হবে না। এটা মেটাতে হবে তাকেই। এসিআরে সমস্যা থাকার কারণে তাকে পার করা যায়নি।’ এসিআরে সমস্যা থাকলে মন্ত্রণালয়ের কিছু করার থাকে না বলে উল্লেখ করেন সচিবের দায়িত্বে থাকা এই কর্মকর্তা।

গত মে মাসে ২১৭ জনকে এবং গত বছর ৮৩৭ জনের পদোন্নতি দেয় সরকার। সর্বশেষ গত ২৭ নভেম্বর প্রশাসনের তিন স্তরে ৫৩৬ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়।

সর্বশেষ পদোন্নতির পরে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রশাসন ক্যাডারের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, এবার পদোন্নতিতে বর্তমান সরকারের অনুগত নয়, অথচ পদোন্নতি পেয়েছেন এই সংখ্যা কম নয়। অন্যদিকে সরকারের অনুগত এবং পদোন্নতি পাওয়ার ক্ষেত্রে জটিলতা নেই তেমন কর্মকর্তাদের অনেকেই রয়েছেন পদোন্নতি বঞ্চিত।একটি গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যমতে,জামায়াত-বিএনপির অনুসারী পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তাদের তালিকাও লম্বা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইব্রাহিম হোসেন খান বলেন, ‘যাদের কোনো না কোনো সমস্যা রয়েছে তাদের হয়তো পদোন্নতি দেওয়া হয়নি। এছাড়া অন্য কোনো বিষয় থাকার কথা নয়।’

সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন।

ঢাকা জার্নাল, ডিসেম্বর ০৩, ২০১৬।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.