‘সরকার বিচার বিভাগে হস্তক্ষেপ করে না’

নভেম্বর ১, ২০১৬

anisuঢাকা জার্নাল: ‘দ্বৈত শাসন’ বিচার বিভাগের ধীরগতির অন্যতম কারণ- প্রধান বিচারপতির এমন বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

তিনি বলেছেন, ‘আমি প্রধান বিচারপতিকে অনেক সম্মান করি, শ্রদ্ধা করি। কিন্তু তিনি তার বাণীতে যা বলেছেন তার সঙ্গে আমি দ্বিমত পোষণ করছি। সরকার বিচার বিভাগের কোনো কাজে হস্তক্ষেপ করেনি এবং ভবিষ্যতেও করবে না।’

আইনমন্ত্রী মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।

আনিসুল হক বলেন, ‘প্রধান বিচারপতির বক্তব্য স্ববিরোধী। ১১৬ অনুচ্ছেদ বাহাত্তর সালের সংবিধানে যেতে পারলে ৯৬ অনুচ্ছেদ নয় কেন? সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ বর্তমান সংবিধানে প্রতিস্থাপিত হয়েছে। বর্তমান সরকার বিচার বিভাগকে শক্তিশালী করতে ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা অক্ষুণ্ন রাখতে কাজ করে যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও করবে।’

নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের নবম বর্ষপূর্তিতে দেওয়া বাণীতে সোমবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, সংবিধানের ১০৯ অনুচ্ছেদে হাইকোর্ট বিভাগের অধস্তন সব আদালত ও ট্রাইব্যুনালের ওপর ওই বিভাগের তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা আছে। অন্যদিকে, সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ বিচার বিভাগের ধীরগতির অন্যতম কারণ। ১১৬ অনুচ্ছেদের ফলে অধস্তন আদালতের বিচারকদের পদোন্নতি, বদলি এবং শৃঙ্খলামূলক কার্যক্রম সুপ্রিম কোর্টের পক্ষে এককভাবে গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না। দ্বৈত শাসনের ফলে বহু জেলায় শূন্য পদে সময়মতো বিচারক নিয়োগ সম্ভব হচ্ছে না। এতে বিচারকাজে বিঘ্ন ঘটে এবং বিচারপ্রার্থী জনগণের ভোগান্তি বেড়ে যায়।’ এ প্রেক্ষাপটে ১৯৭২ সালের সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদটি পুনঃপ্রবর্তন করা `সময়ের দাবি` বলে মনে করেন প্রধান বিচারপতি।

প্রধান বিচারপতির বক্তব্যের বিষয়ে আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, বিচার বিভাগে কাজের স্বাধীনতা হচ্ছে বড় জিনিস। প্রধান বিচারপতি তার বাণীতে যে প্রস্তাব দিয়েছেন, সেটা আমার কাছে অর্থবহ মনে হচ্ছে না। বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী ও কার্যকর করতে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য যা যা করা দরকার তা করা হবে। প্রয়োজনে ১১৬ অনুচ্ছেদ সংশোধন, পরিবর্ধন ও পরিমার্জন করা যেতে পারে।

আইনমন্ত্রী আরো বলেন, ৭২-এর সংবিধান অনুযায়ী বিচারকদের পদায়ন, পদোন্নতি, অপসারণসহ এসব ক্ষমতা রাষ্ট্রের প্রধান বা রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যস্ত থাকবে। তবে ১৯৭৮ সালে সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে এসব পদায়ন, পদোন্নতি সুপ্রিম কোর্টের অধীনে ন্যস্ত করা হয়। পরে অবশ্য এই সংশোধনী বাতিল করা হয়। প্রধান বিচারপতি এসব ক্ষমতা আবারও সুপ্রিম কোর্টের অধীনে নিতে চাইছেন। যেহেতু তিনি ৭২ সংবিধানের পুনঃপ্রবর্তন চাইছেন, তাহলে সেখানে আবার এসব ক্ষমতা সুপ্রিম কোর্টের হাতে ন্যস্ত করা কীভাবে সম্ভব?

আইনমন্ত্রী বলেন, বিচার বিভাগের বিচারকসহ অন্যদের বদলি, পদোন্নতি, অপসারণ— এগুলোর গুরুদায়িত্ব রাষ্ট্রপতির ওপর। রাষ্ট্রের এক নম্বর ব্যক্তিকে এ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয় এখানে রাষ্ট্রপতির কার্যালয় ও সুপ্রিম কোর্টের মধ্যে সেতু হিসেবে কাজ করে।

বিচার বিভাগ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন শূন্য পদে নিয়োগসহ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমান সরকার বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও গতিশীলতা আনতে বদ্ধপরিকর। এটা সরকার করতেই থাকবে। বন্ধ হবে না।

মন্ত্রী বলেন, বিচার বিভাগ স্বাধীন হলে গণতন্ত্র শক্তিশালী হবে। ২০০৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকার কোনো বিচারকের কাজে হস্তক্ষেপ করেছে, এমন নজির নেই। বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবেই তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছে। বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে বলেই মাহমুদুর রহমান জামিন পেয়েছেন। গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার জন্য প্রয়োজনে ১১৬ অনুচ্ছেদ সংশোধন করা হবে বলেও জানান আনিসুল হক।

প্রধান বিচারপতির হঠাৎ এমন বক্তব্যের কারণ জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা মনে করি যে বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করছে এবং তার এই বক্তব্যের পেছনে অন্য কোনো কারণ নেই। বিচারকরা কাজ করতে গিয়ে হয়তো মনে করছেন, এজন্য তিনি এ কথাগুলো তুলে ধরেছেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন আইন বিভাগের সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক দুলাল এবং লেজিসলেটিভ বিভাগের সচিব শহিদুল হক।

ঢাকা জার্নাল, নভেম্বর ০১, ২০১৬।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.