বিমসটেক জোটের অঙ্গীকার নিয়ে প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর

অক্টোবর ১৬, ২০১৬

sheikh-hasina-smঢাকা জার্নাল: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন ‘বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনোমিক কো-অপারেশন (বিমসটেক) ভুক্ত  দেশগুলোর মধ্যে যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) হওয়ার কথা, এক যুগ পার করেও তা বাস্তবে রূপ দেওয়া সম্ভব হয়নি।

মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির বাস্তবায়নে জোটের নেতাদের রাজনৈতিক সদিচ্ছা পুনর্ব্যক্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

রোববার ( অক্টোবর ১৬) ভারতের গোয়ায় বিমসটেক সদস্য রাষ্ট্রের নেতাদের একটি রিট্রিট সভায় যোগ দিয়ে তিনি এই আহ্বান জানিয়েছেন।

এ সময় আগামী বছর বিমসটেকের ২০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এফটিএ’র আওতায় চারটি চুক্তিতে উপনীত হওয়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করতে সাত জাতির এই জোটের প্রতি আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, এতে আমাদের আন্তঃআঞ্চলিক বাণিজ্য জোরদার হবে, আর বিমসটেকের কার্যক্রমেও গতি আসবে।

গোয়ার হোটেল লীলায় বিমসটেক নেতাদের রিট্রিট পর্বে অন্যান্য বিমসটেক নেতাদের সঙ্গে অংশ নিচ্ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্থানীয় সময় বেলা পৌনে চারটায় এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। পাঁচ জাতির জোট ব্রিকস (ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা) শীর্ষ সম্মেলনের আউটরিচে অংশ নিতে গোয়ায় রয়েছেন এই নেতারা। তার আগে এই বিমসটেকের রিট্রিট পর্বের আয়োজন করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মূলত মোদির নিমন্ত্রণেই এই কর্মসূচিতে অংশ নেন বিমসটেক নেতারা।

বিমসটেক এর অন্য সদস্য দেশগুলোর মধ্যে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে, মায়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সুকি, নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দাহাল, থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী প্রযুত চান ওচা এবং শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মৈত্রিপাল সিরিসেনা এতে অংশ নেন।

নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এই অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের গোয়ায় আমাদের আমন্ত্রিত করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আজ এখানে ১৯৯৭ সালে বিমসটেকের প্রতিষ্ঠাকালীন চার জন নেতার একজন হিসেবে দাঁড়িয়ে আমি বলতে পারি গত বিশ বছরে আমরা আমাদের দুটি অঞ্চলকে সংযুক্ত করার পথে অগ্রগতি এনেছি। এটা ঠিক আমাদের এগিয়ে চলার গতি কিছুটা মন্থর, তবে এখন সময় সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজটি জোরদার করার।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি সমন্বয় ও সহযোগিতায় বিশ্বাসী। আর আমাদের প্রেরণা এসেছে আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছ থেকেই। ১৯৭২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় তিনি প্রতিবেশীদের মধ্যে সংঘাতময় সম্পর্কের অবসানের আহ্বান জানিয়েছিলেন। আমাদের সম্পদের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে এই অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

বিমসটেক নেতাদের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, বিমসটেককে আরও কিভাবে কার্যকর করা যায় এবং সে অনুযায়ী এই জোটকে কিভাবে আরও সক্রিয় করে তোলা যায়, সময় এসেছে সে ব্যাপারে সক্রিয় হওয়ার।

এ সময় এফটিএ’র আওতায় চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ায় জোট নেতাদের অঙ্গীকার নিয়েও প্রশ্ন তোলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বিমসটেককে আরও কার্যকর ও ফলপ্রসূ করতে নেতাদের প্রত্যাশার পুনর্মূল্যায়নের সময় এসেছে।

বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, জ্বালানি, আঞ্চলিক সংযোগ ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধের মতো প্রধান ক্ষেত্রগুলোতে আগামী পাঁচ বছর বিশেষ নজর দিতে বিমসটেক নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। সহযোগিতার প্রধান ক্ষেত্রগুলোতে নিয়মিত মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক করারও প্রস্তাব দেন তিনি।

সড়কপথে যোগাযোগ বাড়াতে বিমসটেক ওয়ার্কিং গ্রুপ এরই মধ্যে যে আলোচনা শুরু করেছে সে কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, সংযোগ বাড়াতে আমরা এখন সমুদ্রপথে জাহাজ চলাচল চুক্তি করার কথা বিবেচনা করতে পারি। উন্নততর উপ-আঞ্চলিক গ্রিড সংযোগ এবং জ্বালানি বাণিজ্যের বিষয়ে সমঝোতা চুক্তি ও তার বাস্তবায়নের ওপরও জোর দেন শেখ হাসিনা।

সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে পরাজিত করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস উগ্রবাদ মোকাবেলায় বিমসটেকের মধ্যে সহযোগিতা জোরদার করা সম্ভব হবে।

অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী ভাষণ দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনিও বিমসটেককে কার্যকর করার জন্য সকল সদস্যের সক্রিয় ভূমিকার আহ্বান জানান। অন্যান্য নেতারাও তাদের বক্তব্যে বিমসটেককে কার্যকর জোটে পরিণত করার লক্ষ্যে তাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।

এর আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিসমটেকভুক্ত দেশগুলোর নেতাদের অনুষ্ঠান স্থলে স্বাগত জানান। অনুষ্ঠানস্থলের বাইরে একে একে সকলের সঙ্গে তিনি ফটোসেশন করেন। পরে বিমসটেকের সকল নেতা গ্রুপ ফটোসেশনে অংশ নেন।

ঢাকা জার্নাল, অক্টোবর ১৬, ২০১৬।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.