পুনঃশুনানি হচ্ছে ১৬৮ মামলার

এপ্রিল ২৯, ২০১৬

hicourtঢাকা জার্নাল : সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের কাছে রায় লেখার অপেক্ষায় থাকা ১৬১টি এবং প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের কাছে থাকা ৭টি মামলার পুনঃশুনানি হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ১৬১ মামলার মধ্যে বেশিরভাগ মামলার রায় লেখার কাজ শেষ করেছিলেন বিচারপতি মানিক। কিন্তু তার লেখা রায় গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় গত ২৬ এপ্রিল প্রধান বিচারপতি মামলাগুলো পুনঃশুনানির নির্দেশ দেন। এর পরপরই প্রস্তুত করা হয় এসব মামলার পেপারবুক।

এদিকে বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত আগামী ২ মের আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় মামলাগুলো পুনঃশুনানির জন্য এসেছে।

প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চের কার্যতালিকায় ১৬৯ থেকে ২৭৪ ক্রমিকে বিচারপতি মানিকের কাছে রায় লেখার অপেক্ষায় থাকা মামলাগুলো পুনঃশুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। আর বাকি মামলাগুলো আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আব্দুল ওয়াহাব মিয়ার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে পুনঃশুনানির জন্যে এসেছে।

প্রধান বিচারপতির একান্ত সচিব মো. আনিসুর রহমান বলেন, ‘২৬ এপ্রিল এসব মামলার পুনঃশুনানির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।’

২০১৫ সালের ১ অক্টোবর আপিল বিভাগ থেকে অবসরে যান বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। অবসরে যাওয়ার সময় ১৬১টি মামলার রায় লেখার দায়িত্ব ছিল এই বিচারপতির। এসব মামলা তার অবসরে যাওয়ার আগেই আপিল বিভাগ বিভিন্ন সময়ে শুনানি গ্রহণ সম্পন্ন করেন। পাশাপাশি সংক্ষিপ্ত আদেশও জানিয়ে দেন। শুধু পূর্ণাঙ্গ রায় লেখার কাজ বাকি ছিল। মামলাগুলোর রায় দীর্ঘদিনেও তিনি না লিখে কালক্ষেপণ করছিলেন। আর এমনই এক পরিস্থিতিতে বর্তমান প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা গত ১৭ জানুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে এক বাণীতে অবসরের পরে রায় লেখাকে সংবিধানপরিপন্থী হিসেবে উল্লেখ করেন। ওই বাণীতে তিনি বলেন, ‘কোনো কোনো বিচারপতি রায় লিখতে অস্বাভাবিক বিলম্ব করেন। আবার কেউ কেউ অবসর গ্রহণের পর দীর্ঘদিন সময় ধরে রায় লেখা অব্যাহত রাখেন, যা আইন ও সংবিধানপরিপন্থী।’

এরপর  বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক গত ৮ ফেব্রুয়ারি ৬৫টি মামলার রায় ও আদেশের কপি হাতে লিখে জমা দেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে তিনি আরো কিছু রায় লিখে জমা দেন। বিচারপতি মানিক তার কাছে আর কোনো মামলায় রায় লেখার কাজ বাকি নেই বলে তখন মিডিয়ার কাছে দাবি করেছিলেন। তবে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আরো কিছু মামলার রায় লেখার অপেক্ষায় ছিল। আর যেসব রায় তিনি হাতে লিখে জমা দিয়েছেন, সেগুলোর অনেক লেখাই অস্পষ্ট। পাশাপাশি আপিল বিভাগের যে বেঞ্চ হতে এসব মামলার রায় ঘোষণা হয়েছে, সেই বেঞ্চের অপর বিচারপতিরা এখনো এসব রায়ে স্বাক্ষর করেননি।

সূত্র জানায়, যেসব মামলা পুনঃশুনানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, এগুলোর মধ্যে ২০১৩ সালে রায় ঘোষণা করা হয়েছে এমন মামলাও রয়েছে। এ ছাড়া অবসরের পরে লেখা রায়ের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে এখন বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে প্রধান বিচারপতি সবগুলো মামলারই পুনঃশুনানির আদেশ দিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

এসব মামলায় রায় ঘোষণার পর আবারও পুনঃশুনানির উদ্যোগ নেওয়ায় বিচারপ্রার্থীদের বেশ দুর্ভোগ পোহাতে হবে। সময় ও অর্থের অপচয় হবে। তারপরও রায়গুলো আইনসিদ্ধ করতে ও বিতর্ক এড়াতে প্রধান বিচারপতি যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে দাবি করেছেন কেউ কেউ।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির প্রাক্তন সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘গা বাঁচানোর জন্য কেউ দায়সারা রায় লিখে থাকলে তা অবশ্যই বাতিল করতে হবে। তবে একজন বিচারপতির গাফিলতির কারণে যদি রায় লেখা না হয় বা পুনঃশুনানি করতে হয় তার দুর্ভোগ কেন বিচারপ্রার্থীদের পোহাতে হবে? তা ছাড়া পুনঃশুনানিতে তো একই রায় নাও হতে পারে। এটাকে আমি বিচার বিভাগের একটি অরাজকতা হিসেবে দেখি।’

ঢাকা জার্নাল, এপ্রিল ২৮, ২০১৬।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.