‘লজ্জায় পড়ে টাকা ফেরত দেবে রিজার্ভ ব্যাংক!’

মার্চ ২৯, ২০১৬

TAKAঢাকা জার্নাল: ‘মামলা করা লাগবে না, ওরা (রিজার্ভ ব্যাংক) লজ্জায় এমনি টাকা দিয়ে দেবে। আমার তো মনে হয়, এখনই দিয়ে দেওয়া উচিত। মামলা করার প্রয়োজন নেই। তাদের একটা বিরাট রেপুটেশন রিস্ক আছে’।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ লোপাটের বিষয়ে মঙ্গলবার (২৯ মার্চ) সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এমন মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবী ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি।

তাকে ২৩ মার্চ রিজার্ভ হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ লোপাটের ঘটনা খতিয়ে দেখতে আইনজীবী  হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের নিজ চেম্বারে এ জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আরও বলেন, ‘মামলাতো করাই যায়। আমিতো চুরির একটা ভিকটিম। যে টাকা দিয়েছে, সেটা তো আমার ইনস্ট্রাকশন অনুসারে দেওয়ার কথা। সেটা তো আমি (বাংলাদেশ ব্যাংক) দেইনি। এটা ক্লিয়ার। ইনস্ট্রাকশন চোর দিয়েছে। চোরের ইনস্ট্রাকশন অনুসারে কাজ করলে আমরা তো বলতেই পারি, তুমি আমার ইনস্ট্রাকশন অনুসারে কাজ করোনি। আমার টাকা ফেরত দাও। এটা সহজ’।

আজমালুল হোসেন বলেন, ‘মামলা করা লাগবে না। ওরা লজ্জায় এমনি টাকা দিয়ে দেবে। আমার তো মনে হয় এমনি দিয়ে দেওয়া উচিত। মামলা করার প্রয়োজন নেই। তাদের একটা বিরাট রেপুটেশন রিস্ক আছে। সবাই (বিশ্বের অন্যান্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক) যদি মনে করে, নিরাপদ না, তাহলে তাদের টাকা নিয়ে যাবে। আর তাই তারা ব্যবসা করতে পারবে না’।

নিজের কাজ সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাকে বাংলাদেশ ব্যাংক কাজটা দিয়েছে, টাকাটা উদ্ধার করার জন্য। যে টাকা চুরি হয়েছে, সেটাকে রিকোভার করা। এটার জন্য কাউকে জেল দেওয়া বা জরিমানা করা, এটা আমার কাজ নয়। এটা নিয়ে এফবিআইসহ বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছে। আমাদের শুধু উদ্দেশ্য, টাকাটা উদ্ধার করা’।

কিভাবে টাকা উদ্ধার করা যায় সে বিষয়ে তিনি বলেন, ‘টাকাটা উদ্ধার করার জন্য আমরা যেটা দেখছি, সেটা হলো, ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের সঙ্গে আমাদের একটা চুক্তি আছে। যেটা আমেরিকার নিউইয়র্কে আছে, সেটা সেন্ট্রাল ব্যাংকগুলোর ব্যাংক। এখানে ২৫০টি সেন্ট্রাল ব্যাংকের শাখা আছে। সেখানে আমাদের টাকা রাখার উদ্দেশ্য হলো, টাকাটা নিরাপদ (সিকিউরড) থাকে। ওটা একটা নিরাপদ জায়গা। নিরাপদ হলেও দেখা যাচ্ছে, আমাদের টাকা সেখান থেকে চলে গেছে। অন্য জায়গায় গেছে। আমরা পেমেন্ট ইনস্ট্রাকশন দেইনি। বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো পেমেন্ট ইনস্ট্রাকশন দেয়নি। তা সত্ত্বেও চলে গেছে’।

আজমালুল হোসেন বলেন, ‘তারা কি বুঝতে পারেননি যে, ফেইকভাবে টাকা চলে গেছে। সেজন্য তারা চুক্তি ভঙ্গ করেছেন কি-না, সেটা আমি দেখছি। আরেকটা জিনিস দেখছি যে, সিস্টেমের মধ্যে কোনো ক্ষত আছে কি-না। সিস্টেম ডিফিসিয়েন্সি আছে কি-না। তো দেখা যাচ্ছে, কিছু কিছু সিস্টেমে ডিফিসিয়েন্সি আছে। ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক যে ইনস্ট্রাকশনগুলোর ওপর অ্যাক্ট (কাজ ) করেছে, সেগুলোর কয়েকটার ক্ষেত্রে মনে করেছে যে, জেনুইন না। সেখানে কনফারমেশন চেয়েছিলো বাংলাদেশ ব্যাংকের। কনফারমেশন পাওয়ার আগে তারা পেমেন্ট করলো’।

তিনি বলেন, ‘আরেকটা জিনিস আছে, বেআইনিভাবে যদি কোনো টাকা চলে যায় বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে, সেখানে একটা সিস্টেম আছে যে, টাকাটা রি-কল(ফেরত চাওয়া) করতে পারে। একটা জিনিস খেয়াল রাখতে হবে, ইনস্ট্রাকশন যেটা এসেছিলো পে করার জন্য, সেটা ৪ ফেব্রুয়ারি। আর টাকা পেমেন্ট হয়েছে ৯ ফেব্রুয়ারি। সেখানে আমাদের উইকেন্ড শুরু হয়েছে শুক্রবার ও শনিবার। আমেরিকায় শনিবার ও রোববার ছুটি ছিলো। ফিলিপিন্সে সোমবার ছুটি ছিলো। সোমবার পর্যন্ত টাকাটা পেমেন্ট হয়নি, হয়েছে মঙ্গলবার। ৪ থেকে ৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে পাঁচ ছয়দিনের তফাৎ। পাঁচদিনের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিস্টেমটা যদি অচল হয়ে গিয়েছিলো। বাংলাদেশ ব্যাংক অনেক কমপ্লেইন করেছে এ টাকাগুলোর জন্য আমরা ইনস্ট্রাকশন দেইনি। ই-মেইল করেছে, চিঠি দিয়েছে। সুইফ ম্যাসেজ দিয়েছে। সেগুলোর কোনো উত্তর আসেনি’।

‘২৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সব তথ্য নিয়ে একটি চিঠি দেয়। সে চিঠির উত্তরও এখনো আসেনি। ওখানে এন্টি মানিলন্ডারিং ইনভেস্টিগেশন হচ্ছে। এফবিআই তদন্ত করছে। কিন্তু এটার উত্তর এখন পর্যন্ত আসেনি। আমার কাজের মধ্যে যেটা আসছে সেটি হচ্ছে, আমরা চিঠির উত্তর নেবো। কবে আপনারা (রিজার্ভ ব্যাংক) পেমেন্টগুলো করলেন, আপনাদের কাছে কবে ইনস্ট্রাকশন এসেছে? আপনি কবে দিয়েছেন? আরেকটা জিনিস আমি দেখছি। সেটা হলো, ইন্টারমিডিয়েট ব্যাংক যারা আছে। এটাতো সরাসরি ফিলিপিন্সে যায়নি। টাকাতো গেছে ইন্টারমিডিয়েট ব্যাংকের মাধ্যমে। চারটা ব্যাংকের মাধ্যমে। তাদের কোনো ল্যাপস আছে কি-না। অনেক জায়গায় আমরা চিঠি লিখছি। তথ্য পেয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক, মামলা করবে কি করবে না’।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কের বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে ১০১ মিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ চুরি হয়েছে।

ঢাকা জার্নাল, মার্চ ২৯, ২০১৬।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.