জিজ্ঞাসাবাদে ঢাকায় আনা হচ্ছে বাবা-মা-খালাকে

মার্চ ২, ২০১৬

two-siblings-dhakaঢাকা জার্নাল: রাজধানীর বনশ্রীতে নিজ বাসভবনে দুই ভাই-বোন নুসরাত আমান অরনি (১২) ও আলভি আমানের (৬) রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় তাদের বাবা-মা ও খালাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঢাকায় নিয়ে আসছে র‌্যাব।

বাবা আমান উল্লাহ, মা মাহফুজা মালেক জেসমিন ও খালা আফরোজা মালেক নীলকে জিজ্ঞসাবাদ করা হবে হত্যাকাণ্ডের তথ্য সংগ্রহে।

বুধবার (০২ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মাহফুজা মালেকের জামালপুর জেলা শহরের ইকবালপুরের গ্রামের বাড়ি থেকে তাদেরকে নিয়ে ঢাকায় রওনা হয়েছেন র‌্যাব কর্মকর্তারা।

র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বিষয়টি জানিয়েছেন। তিনি জানান, দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় বাবা-মা ও খালাকে জামালপুর থেকে ঢাকায় আনা হচ্ছে। র‌্যাব হেফাজতে তথ্য সংগ্রহের জন্য তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

শিশুদের বাবা আমান উল্লাহর স্থায়ী বাড়ি জামালপুর জেলার ইসলামপুর উপজেলার নোয়ারপাড়া ইউনিয়নের রায়েরপাড়া গ্রামে। তাদের মা মাহফুজা মালেকের গ্রামের বাড়িও শহরের ইকবালপুরে। আমান-মাহফুজা সম্পর্কে চাচাতো ভাই-বোন।

এছাড়া শহরের ইকবালপুর এলাকায়ও তাদের ভাড়া বাসা রয়েছে। জামালপুরের দু’টি বাসা-বাড়ি রেখেও ব্যবসায়িক কারণে আমান উল্লাহ দীর্ঘদিন ধরে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে ঢাকার রামপুরার বনশ্রীর বি ব্লকের ৪নং রোডের ৯ নম্বর বাসায় বসবাস করতেন। শিশু দু’টির খালা আফরোজা মালেকও সপরিবারে ভাড়া থাকেন বনশ্রীতেই।

অরনি ও আলভিকে মঙ্গলবার (০১ মার্চ) রাতে জামালপুরের পৌর গোরস্থানে দাফন করা হয়। এজন্য তাদের বাবা-মা-খালা আগে থেকেই তাদের জামালপুরের বাসায় অবস্থান করছিলেন।

র‌্যাব জানায়, দুই সন্তানের মরদেহ দাফনের পর আমান-মাহফুজা দম্পতি এবং আফরোজাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা হয়। আরও অধিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদেরকে ঢাকায় আনা হচ্ছে।

নুসরাত আমান অরনি ভিকারুননিসা নুন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সিদ্ধেশ্বরী প্রধান শাখায় ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলো। তার ছোট ভাই আলভি আমান বনশ্রীর হলিক্রিসেন্ট স্কুলে নার্সারি শ্রেণিতে পড়তো।

বনশ্রীর বাসায় সোমবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় মৃত্যু ঘটে নুসরাত আমান অরনি ও আলভি আমানের।

শিশু দু’টির খালা আফরোজা মালেক নীল সে সময় দাবি করেছিলেন, দুই সন্তানকে নিয়ে বাবা আমান উল্লাহ এবং মা মাহফুজা মালেক জেসমিন রোববার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাতে একটি স্থানীয় রেস্টুরেন্টে খাওয়া-দাওয়া করেন। সেখানে কিছু খাবার অবশিষ্ট হলে সেটা প্যাকেটে করে বাসায় নিয়ে আসেন। সোমবার দুপুরে সেই অবশিষ্ট খাবার খাওয়ার পরে দুই ভাই-বোন ঘুমিয়ে পড়ে। এরপর বিকেলে ডাকাডাকি করা হলেও তাদের কোনো সাড়া-শব্দ পাওয়া যায়নি। পরে অচেতন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে রাত পৌনে ৮টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।

ওই চায়নিজ খাবারের বিষক্রিয়ায় ভাই-বোনের মৃত্যু ঘটেছে বলেও দাবি করে আসছিলেন স্বজনেরা।

তবে শ্বাসরোধে তাদের মৃত্যু হয় বলে ময়না তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। ঢামেক হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রভাষক ডা. প্রদীপ বিশ্বাস ময়না তদন্ত শেষে মঙ্গলবার সকালে সাংবাদিকদের বলেন, ‘দু’জনের শরীরেই আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। অরনির চোখে রক্ত জমাট ও গলায় আঘাত এবং আলভির পা ও গলায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তাদের শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে’।

খাদ্যে বিষক্রিয়ার বিষয়ে জানতে তাদের ভিসেরা মহাখালীতে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট হাতে পেলে বিষয়টি জানা যাবে বলেও জানান এ চিকিৎসক।

যে রেস্টুরেন্টের খাবার খেয়ে দুই ভাই-বোন মারা গিয়েছে বলে পরিবার থেকে বলা হয়েছিল, মঙ্গলবার সেই কিন্ট চায়নিজ রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার ম্যানেজার মাসুদুর রহমান, বাবুর্চি আছাদুজ্জামান রনি ও তার সহযোগী আতাউরকে আটক করে পুলিশ। ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বাংলানিউজকে জানান, ওই তিনজন ছাড়াও র‌্যাব-৩ এ ঘটনায় আরও তিনজনকে কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন বাসার দারোয়ান এবং ভাই-বোনের গৃহশিক্ষিকা ও একজন স্বজন।

ঢাকা জার্নাল, মার্চ ০২, ২০১৬।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.