অভিজিৎ হত্যা রহস্য এখনো অন্ধকারে

ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৬

avijiঢাকা জার্নাল : বিজ্ঞান মনস্ক লেখক ও মুক্তমনা ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের এক বছর পূর্ণ হলেও এ হত্যার রহস্য এখনো অন্ধকারেই থেকে গেছে। ক্লুবিহীন এ হত্যাকাণ্ডের কোনো কিনারাই খুঁজে বের করতে পারেনি পুলিশ। এর আগে আটজনকে গ্রেফতার করা হলেও তাদের কেউই হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেনি।

মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের দাবি, গ্রেফতারকৃত আটজন হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত না থাকলেও অন্তত দুজন (ফারাবি ও রাহি) এ হত্যায় প্ররোচনাকারী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই আরো ৮ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। যাদের মধ্যে অন্তত দুজন সরাসরি হত্যাকাণ্ড এবং বাকি ছয়জন ঘটনাস্থলের আশপাশে ছিলেন।এই মুহূর্তে তাদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে।যেকোনো সময় গ্রেফতার করা হবে।

অন্যদিকে একটি গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, দুই-এক দিনের মধ্যেই অভিজিতের খুনিদের মধ্যে অন্তত দুই-তিনজনকে গ্রেফতার করা সম্ভব হবে। এজন্য কয়েকটি জায়গায় তারা অভিযানও চালিয়েছে।

গত বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি একুশের বইমেলা থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বরে দুর্বৃত্তরা নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী লেখক অভিজিৎ রায়কে। এরপর গত এক বছরের তদন্তে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। যার ধারাবাহিকতায় খুন হন আরো কয়েকজন ব্লগার ও প্রকাশক।হত্যার টার্গেট হয়েও প্রাণে বেঁচে যান আরো কয়েকজন ব্লগার ও প্রকাশক।

এমনই প্রেক্ষাপটে আজ শুক্রবার পালন করা হবে অভিজিৎ রায়ের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। স্মরণ করা হবে বিজ্ঞান মনস্ক এই লেখককে। ঢাকায় তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা উপস্থিত না থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রে থেকে অভিজিতকে স্মরণ করবেন বলে তার পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে অভিজিতের বাবা অজয় রায়ের সঙ্গে কথা হলে তিনি রাইজিংবিডিকে জানান, গত একটি বছর ছেলে হত্যার বিচারের জন্য অপেক্ষা করেছি। কিন্তু কী লাভ হয়েছে। উল্টো মৌলবাদীরা মাথাচারা দিয়ে উঠেছে। অভিজিতের মতো আরো কয়েকটি তাজাপ্রাণ ঝরে গেছে। সরকার এ বিচারের ব্যাপারে আন্তরিক নয়। আন্তরিক হলে বিচারকাজ দ্রুত ত্বরান্বিত হতো। তদন্তের কোনো দৃশ্যমান পরিবর্তন তো হয়নি, বরং মুক্তমনা লেখকরা হুমকিতে আছেন।

ক্ষোভ প্রকাশ করে অজয় রায় আরো বলেন, এভাবে কোনো হত্যা ঠেকাতে পারবে না সরকারের কোনো প্রতিষ্ঠান। আর পুলিশ নিজেরাই তো অসৎ কাজে জড়িয়ে পড়েছে। তাদের বিচারই তো হচ্ছে না। অন্যের বিচারকাজ হবে কখন।

এদিকে গোয়েন্দা পুলিশের আরেকটি সূত্রের দাবি, সম্প্রতি বাড্ডার সাঁতারকুল থেকে বিস্ফোরকদ্রব্যসহ হাতেনাতে গ্রেফতারকৃত জঙ্গি কামাল ওরফে শাহীন ও শাহ আলম ওরফে সালাউদ্দিনকে জিজ্ঞাসাবাদে অভিজিৎ হত্যার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই মোহাম্মদপুরের নবোদয় হাউজিং থেকে বিপুল পরিমাণে বোমা উদ্ধার করে সেগুলোকে নিস্ক্রিয় করা হয়। তারা এরকম আরো কয়েকটি টার্গেট কিলিংয়ের পরিকল্পনা করেছিল।

ওই সূত্রটি আরো জানায়, হত্যাকাণ্ডে যারা অংশ নিয়েছিলেন, তাদের সবাই আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য।এরই মধ্যে যশোর থেকে হাদি নামে একজনকে আটক করা হয়েছে। এই হাদি সরাসরি অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছিল।

কয়েকদিন আগে বাংলা একাডেমিতে একুশে গ্রন্থমেলায় সাংবাদিকদের পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক বলেছিলেন, অভিজিতের খুনিদের শনাক্ত করা গেছে। আশা করছি শিগগিরই তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের(ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বরাবরই বলে আসছেন, ‘অভিজিৎ হত্যায় সরাসরি জড়িত থাকতে পারেন, এমন দুজনকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে অল্প সময়ের মধ্যে তারা গ্রেফতার হবে।

কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান জানান, পুলিশ পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য অভিজিৎ হত্যা মামলার ১১ ধরনের আলমত যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের কাছে পাঠানো হয়েছে। তবে সেই রিপোর্ট এখনো দেশে আসেনি।সবমিলিয়ে এসব কারণে এ হত্যার তদন্ত ধীরগতিতে চলছে। এফবিআইয়ের ফরেনসিক রিপোর্ট পাওয়ার পর আটককৃত আটজনের ডিএনএ প্রোফাইলের সঙ্গে তা মিলিয়ে দেখা হবে। আর এ হত্যার সঙ্গে তারা জড়িত কি না, তখনই তা নিশ্চিত হওয়া যাবে।’

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ডিবির পরিদর্শক ফজলুর রহমান একই তথ্য জানিয়ে বলেন, ‘আটককৃত ওই আটজন এবং সম্প্রতি বাড্ডা থেকে গ্রেফতারকৃত দুজনের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে সরাসরি জড়িতদের চিহ্নিত করতে সহায়ক হচ্ছে।’

ঢাকা জার্নাল, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৬।

 

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.