মুখ খুললেন জয়া
ফেব্রুয়ারি ১, ২০১৬ ঢাকা জার্নাল: দুই বাংলাতেই কাহিনির মধ্যে আছেন জয়া আহসান! কিছুদিন আগে ছিলেন ওপার বাংলার ছবি ‘রাজকাহিনি’তে। আগামী ৮ এপ্রিল আসছে ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেমকাহিনি ২’। তাকে ঘিরে আরও কিছু কাহিনি শোনা যাচ্ছে এপারে। আসলে ঘটনাটা কী? এসব বিষয়ে মুখ খুলেছেন জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী।
জয়া মিডিয়াকে বলেন, কলকাতার ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের প্রযোজনায় নতুন একটি ছবিতে কাজ করবো। নামটা আপাতত জানাতে বারণ আছে। এর দৃশ্যধারণ শুরু হবে আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে। পরিচালনা করবেন অরিন্দম শীল। তার পরিচালনায় এর আগে কলকাতায় ‘আবর্ত’ ছবিতে অভিনয় করেছি। তার নতুন ছবি শেষ করে ওপারেই কাজ করবো ‘কণ্ঠ’ নামের একটি চলচ্চিত্রে।
জয়া জানান, যৌথ প্রযোজনায় যারা কাজ করছেন, তাদেরকে মোটেই ছোট করে দেখছি না। তবে এটা ঠিক, আমি বাংলাদেশি প্রযোজকের হাত ধরে কলকাতায় কাজ করিনি। একেবারেই কোনোরকম যোগাযোগ ছাড়া তারা নিজ দায়িত্বে আমাকে ডেকে নিয়ে মৌলিক ছবিতে অভিনয় করিয়েছেন। আমাকে যোগ্য মনে করেছেন বা আমার কাজ পছন্দ করেছেন বলেই হয়তো তারা আমাকে ডাকেন। এটা আমার জন্য অবশ্যই অনেক সম্মানের ব্যাপার।
জয়া মিডিয়ার কাছে বলেন, আমি আমার কাজের বাইরে আর কিছুর জন্য খবরে আসতে চাই না। আমি কলকাতায় গিয়েছি আমার কাজের জায়গাটাকে প্রসারিত করার জন্য। অন্য কোনো উদ্দেশ্যে নয়। কাজেই ওখানে কোনো পরিচালক বা অভিনেতাকে জড়িয়ে যদি কোনো গসিপের উদ্রেক হয়, আমি এটাই বলবো- সেটা মিথ্যে। সর্বোপরি মিথ্যে। যাকে ঘিরে আমাকে জড়িয়ে গুঞ্জন ছড়ানো হচ্ছে, তার সঙ্গে পরিচালক ও শিল্পীর বাইরে আমার অন্য কোনো ব্যক্তিগত সম্পর্ক নেই। এ ধরনের সম্পর্ক হবেও না এবং ভবিষ্যতে হওয়ার কোনোই সম্ভাবনা নেই। এটা পরিস্কার হওয়া খুব প্রয়োজন।
আর সবার মতোই আমার একটা সামাজিক জীবন আছে। পরিবার আছে। ব্যক্তিগত জীবনও আছে। এসবকে ঘিরে অনেক দায়িত্বও আছে। আমার জীবনে যদি কিছু ঘটে থাকে, মানে যেটাকে আপনারা রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস বলছেন, সেটা আমি যথাসময়ে জানাবো, দায়িত্ব নিয়েই জানাবো। সেটা নিয়ে অনাবশ্যক লুকোচুরি খেলার মানসিকতা আমার নেই।
তার দীর্ঘ পথচলা নিয়ে জয়া বলেন, দীর্ঘ ১২ বছর কাজ করতে গিয়ে এটা বুঝেছি যে, এই পথের অনেকটাই খুব পিচ্ছিল। আপনারা খেয়াল করলে দেখবেন কিংবা আমার কাজের স্ট্র্যাটেজি যদি কেউ ফলো করেন, আমাকে আমার প্রত্যেকটা পদক্ষেপেই যোগ্যতা প্রমাণ করে এ অবস্থানে আসতে হয়েছে। বলতে গেলে যেখানে কোনো পথ ছিলো না, সেখানে আমাকে প্রত্যেকটা সিঁড়ি তৈরি করে করে পথ বানাতে হয়েছে। দেশে ও দেশের বাইরে যেখানেই কাজ করেছি, কোনো বন্ধুতার জায়গা থেকে নয়, কোনো খাতিরের মানুষ হিসেবেও নয়, সব জায়গাতেই নিজের কাজ দিয়ে নিজেকে প্রমাণ করতে হয়েছে। তাই দায়িত্বহীন কিছু করার মতো বয়স বা অবস্থা কোনোটাই আমার নেই। আমার জীবনে যারা খুব গুরুত্বপূর্ণ, হাতেগোনা যায় এরকম কয়েকজন মানুষ আছেন। তাদের মতামত আমার কাছে খুবই জরুরি। তারা কষ্ট পান এমন কোনো কিছু করার কথা স্বপ্নেও ভাবি না।
কোলতাকায় জয়ার ফোকাসটা নিয়ে তার মত আমি মনে করি, শিল্পী তার শ্রেষ্ঠ শিল্পকর্ম নিজ দেশেই করেন। কিন্তু আমি যে মানের বা যে ধরনের কাজ করতে চাই, অর্থাৎ আমার আর্টিস্ট সৌল তৃপ্ত হতে পারে, সে ধরনের কাজ এখানে খুব একটা পাচ্ছি না। যে কারণে হয়তো কলকাতা থেকে ডাকছে বলে আমি ওখানে গিয়ে কাজ করছি। আমাকে যদি চীন, জাপান বা অন্য কোনো দেশ থেকেও ডাকা হয়, আমি কাজ করবো। ভারতবর্ষের প্রতি আমার দুর্বলতা আছে বলে সেখানে কাজ করি, সেটা না। এটা ভাববার কোনো কারণ নেই। পৃথিবীর যে প্রান্ত থেকে আমাকে অভিনয়শিল্পী হিসেবে ডাকবে, আমি সেখানে গিয়ে কাজ করবো। আমার আর্টিস্ট সৌল তৃপ্ত হওয়াটাই আমার কাছে মুখ্য।
দর্শক ও ভক্তদের প্রতি জয়ার বক্তব্য ভক্ত, পাঠক ও দর্শকরা যেন গুজবে বিশ্বাস না করে সবকিছু যাচাই করেন। এ পর্যন্ত টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে আমি যতোটুকুই সার্ভ করেছি, তারা যেন আমার কাজটুকু দেখে ব্যক্তি মানুষটাকে চেনার চেষ্টা করেন। তারাই আমার প্রথম অগ্রাধিকার। যারা আমাকে জয়া আহসান হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন, তারা যেন বিভ্রান্ত না হন, ভুল না বোঝেন। আমার নিজ দেশে কাজ করাকেই আমি প্রথম অগ্রাধিকার দেই। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্প আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেজন্য ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেমকাহিনি’র মতো বাণিজ্যিক ছবিতে কাজ করেছি। তখন অনেকে আমাকে কটু কথা শুনিয়েছে। তবে সবসময়ই আমি আমার মনের কথা শুনেছি।
আমি চাইবো, আমার মৃত্যুর সময় লোকে যেন আমার কাজটুকুই মনে রাখে। আর এটাও মনে রাখে যে, আমি কোনোদিন আপস না করে আত্মসম্মান রেখে শুধু একজন শিল্পী হিসেবে বাঁচতে চেয়েছি। অন্যরা কি বললো বা ভাবলো সেগুলোকে অনাবশ্যক গুরুত্ব না দিয়েই বেঁচেছি। এটুকুই বলার।
ঢাকা জার্নাল, ফেব্রুয়ারি ০১, ২০১৬