পোশাক খাতে দুর্নীতি হয় ১৬ ধরনের

জানুয়ারি ১৫, ২০১৬

11দেশের তৈরি পোশাক শিল্প খাতে ১৬ ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতি চিহ্নিত করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। কার্যাদেশ পাওয়া থেকে শুরু করে উৎপাদন ও সরবরাহ পর্যায় পর্যন্ত এ দুর্নীতি ও অনিয়ম হয়—এমনটি দাবি করে টিআইবির এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এর সঙ্গে জড়িত থাকেন কারখানার মালিক, মার্চেন্ডাইজার ও বিদেশি ক্রেতারা। ধানমণ্ডিতে টিআইবি কার্যালয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। ‘তৈরি পোশাক খাতের সাপ্লাই চেইনে অনিয়ম ও দুর্নীতি মোকাবিলায় অংশীজনের করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ২০১৪ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত সংগৃহীত তথ্যের সমন্বয়ে গবেষণায় তৈরি পোশাক খাতের সাপ্লাই চেইনের ১৬টি ধাপে দুর্নীতি পাওয়া গেছে। এসব অনিয়মের ক্ষেত্রে বায়ারদেরও (ক্রেতাদের) বড় ধরনের দায় রয়েছে। উদ্যোক্তাদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তাঁরা এখানে দুর্নীতি করছেন। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ২০১৩ সালে এ খাতের ৬৩টি বিষয়ে সুশাসনের ঘাটতি চিহ্নিত করা হয়েছিল। এসব ঘাটতির মধ্যে সরকার, মালিক ও বায়ারদের ১০২টি উদ্যোগ নেওয়ার ফলে তৈরি পোশাক খাতে ৬০ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। তিনি আরো বলেন, এ খাতের অগ্রগতি ৬০ শতাংশ হলেও তা বাড়াতে সবাইকে আরো উদ্যোগী হতে হবে।

অনিয়ম-দুর্নীতি রোধে কিছু পদক্ষেপ নিলে তৈরি পোশাক খাতের অগ্রগতি আরো বাড়বে। এ জন্য সরকার, কারখানা কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টদের আরো কঠোর হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, সাপ্লাই চেইনের কার্যাদেশ, উৎপাদন ও সরবরাহ—এই তিনটি পর্যায়ে দুর্নীতি বিদ্যমান। ১৬টি ধাপে দুর্নীতি ও অনিয়মের কথা উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্র্যান্ড বা আমদানিকারকের সঙ্গে স্থানীয় এজেন্ট বা বায়িং হাউসের যোগাযোগ, কমপ্লায়েন্ট কারখানার সঙ্গে যোগাযোগ, কার্যাদেশ প্রদান, মূল্য নির্ধারণ বা দরকষাকষি, স্যাম্পল করার নির্দেশ, মাস্টার এলসি-ব্যাক টু ব্যাক এলসি খোলা, উৎপাদনের কাঁচামাল ক্রয় বা আমদানি, পণ্যের মান ও কমপ্লায়েন্ট পরিদর্শন, প্রাক-জাহাজীকরণ পর্যায়ের মান পরিদর্শন ও জাহাজীকরণ (এফওবি/সিঅ্যান্ডএফ) ধাপে দুর্নীতি হয়ে থাকে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘এখানে গুণগত তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে, যে জন্য পরিসংখ্যানগত কোনো অনিয়মের তথ্য দিতে পারছি না। তবে বিগত দিনের তুলনায় সব ক্ষেত্রে অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘সব সময় অনিয়ম-দুর্নীতির জন্য বাংলাদেশের সরকার, উৎপাদকদের দায় দেওয়া হলেও দুর্নীতির জন্য বায়াররাও কম দায়ী নয়। অনিয়মের সঙ্গে কমবেশি সবাই জড়িত। এককভাবে সরকারি কর্মকর্তাদের দায়ী করা ঠিক হবে না। বায়ার, এজেন্ট, যারা এ খাতে সংশ্লিষ্ট তাদের দায়ও এড়ানো যাবে না।’ এ খাতের অনিয়ম ও দুর্নীতি রোধে ২৭ দফা করণীয় সুপারিশ করেছে টিআইবি। এসবের মধ্যে আছে—সরবরাহকারী কারখানার পক্ষ থেকে যেকোনো ধরনের ঘুষের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করতে হবে, পূর্বঘোষণা ছাড়াই আকস্মিক কারখানা নিরীক্ষণ ও পরিদর্শন করতে হবে।

প্রয়োজনে বায়ার কার্যাদেশ বাতিল ও কারখানার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানাতে হবে। বায়ারদের নৈতিকতা ও ব্যবসায়িক আচরণসংবলিত নৈতিক আচরণবিধি রাখারও সুপারিশ করা হয়েছে গবেষণা প্রতিবেদনে। এ ছাড়া সুপারিশে বলা হয়েছে, প্রতি কারখানার জন্য আলাদা শনাক্তকারী নম্বরের ব্যবস্থা করতে হবে। শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি পরিশোধ করতে সরকারকে, পাশাপাশি একটি তদারকি কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও শ্রম মন্ত্রণালয়কে নীতি প্রয়োগে কঠোর হতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন টিআইবির সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার শাহজাদা এম আকরাম, রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রোগ্রাম ম্যানেজার নাজমুল হুদা মিনা প্রমুখ। –

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.