নববর্ষে দশটি চাওয়া- মুহম্মদ জাফর ইকবাল

জানুয়ারি ১, ২০১৬

01ইংরেজি নববর্ষের দিনটি কোনোভাবেই অন্য কোনো দিন থেকে আলাদা নয়। বাংলা নববর্ষের তবুও একটা এস্ট্রোনমিক্যাল যোগাযোগ আছে, নক্ষত্রপুঞ্জের অবস্থান দিয়ে আকাশকে যে বারোটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে (zodiac) সেগুলো উদয়ের সময় দিয়েই বাংলা মাসগুলো ঠিক করা হয়েছে। তাই বাংলা নববর্ষ মোটেও জোড়াতালি দেয়া কিছু নয়! ইংরেজি মাসগুলোর বিভাজনে কিংবা ইংরেজি নববর্ষে আমি এখনো সেরকম কিছু খুঁজে পাইনি। (ইংরেজি নববর্ষ যদি জুন মাসের ২১ তারিখ কিংবা ডিসেম্বরের ২১ তারিখ হতো তবুও একটা কথা ছিল, করণ তাহলে বলতে পারতাম সূর্য তখন ঠিক কর্কট ক্রান্তির উপর কিংবা ঠিক মকর ক্রান্তির উপর এসে হাজির হয়!) কাজেই ইংরেজি নববর্ষ আসলে অন্য যে কোনো একটা দিনের মতো তার আলাদা কোনো গুরুত্ব নেই। তারপরও যেহেতু এটা ইংরেজি নববর্ষ সেটা নিয়ে সারা পৃথিবীতেই নানাধরনের বাড়াবাড়ি হয়- আমাদের দেশেও হয়েছে, পুলিশকে লাঠিপেটা করে নববর্ষের পার্টিকে ভাঙতে হয়েছে! (আমার পরিচিত একটা সংগঠন ডিসেম্বরের ৩১ তারিখ রাতে সবাই যখন উদ্দাম পার্টি করার প্রস্তুতি নেয় তখন সংগঠনের সদস্যরা কিছু কম্বল কিনে পথেঘাটে স্টেশনে শীতের রাতে কুন্ডলি পাকিয়ে শুয়ে থাকা মানুষদের জীবনে একটু উষ্ণতার সুযোগ করে দিয়ে আসে। আমার মনে হয়েছে একটা নববর্ষ পালনের জন্যে এটা খুবই চমৎকার একটা উপায়।)

যেহেতু আমাদের সবাইকেই ইংরেজি নববর্ষ নিয়ে অনেক হই-চই করতে হবে তাই আমিও তার প্রস্তুতি নিয়েছি। ইংরেজি নববর্ষে আমি কী চাই তার একটা তালিকা করেছি। আমি যখন কোনো কিছুর তালিকা করি সেটা অনেক বড় হয়ে যায়। সেই বিশাল তালিকা থেকে আমি দশটি বেছে নিয়ে আজকে এই লেখাটি লিখতে বসেছি। এই নববর্ষে আমি কী কী চাই সেগুলো এরকম :

১.  ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীর বিচার : ১৯৭১ সালের বিজয় দিবসে পাকিস্তান সেনাবাহিনী আত্মসমর্পন করার পর সেখান থেকে ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীকে আলাদা করা হয়েছিল (তার ভেতরে আমার বাবার হত্যাকারীও একজন)। নূতন স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশ তাদের বিচার করার জন্যে যখন প্রস্তুতি নিয়েছিল তখন জুলফিকার আলী ভুট্টোর পাকিস্তান যুদ্ধাপরাধীর বিচার ঠেকানোর জন্য আটকে পড়া প্রায় চার লাখ বাঙালিকে জিম্মি করে ফেলেছিল। শুধু তাই নয় তারা ২০৫ জন বাঙালিকে পাল্টা বিচার করার হুমকি দিতে শুরু করেছিল। এখানেই শেষ নয় বাংলাদেশ যখনই জাতিসংঘের সদস্য হওয়ার চেষ্টা করছিল তখনই পাকিস্তান চীনকে দিয়ে ভেটো দিতে শুরু করেছিল। পাকিস্তান নিজেরাই এই ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবে অঙ্গীকার করার পর বাংলাদেশ ….. আর কোনো উপায় না দেখে তাদেরকে পাকিস্তানে ফিরিয়ে দেয়। পাকিস্তান কখনো তাদের বিচার করেনি। শুধু তাই নয় এতো বছর পর তারা আস্ফোলন করে ঘোষণা করেছে পাকিস্তান ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে কোনো গণহত্যা করেনি! কাজেই আমাদের সামনে এখন এই ১৯৫ জনকে বিচার করা ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই। বিচার করে গ্লানিমুক্ত হওয়ার সাথে সাথে সারা পৃথিবীকে দেখানো যাবে, পাকিস্তান নামক বর্বর রাষ্ট্রটি এই দেশের উপর ১৯৭১ সালে কী ভয়ঙ্কর একটি হত্যাকা- ঘটিয়েছিল। কাজেই এই নববর্ষে আমার প্রথম চাওয়া পাকিস্তানের ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীকে বাংলাদেশের মাটিতে বিচার করা।

২. হেনরি কিসিঞ্জারের প্রতীকী বিচার : আমি যতটুকু জানি পাকিস্তানের যুদ্ধাপরাধীদের এই দেশের মাটিতে বিচার প্রক্রিয়া শুরু করা সম্ভব, কিন্তু হেনরি কিসিঞ্জারকে হয়তো সত্যিকার ভাবে এই দেশের মাটিতে বিচার করা সম্ভব নয়। এই মানুষটি বাংলাদেশের জন্যে একটি অভিশাপ, সে শুধু যে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের গণহত্যার ক্ষেত্র তৈরি করে দিয়েছিল তা নয়, বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর সেটাকে একটা তলাবিহীন ঝুড়ি হিসেবে ঘোষণা করেছিল!

মুক্তিযুদ্ধের সময় বিদেশের যে মানুষগুলো এইে দশের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল আমরা তাদের সবাইকে গভীর ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেছি। আর যে মানুষগুলো আমার দেশের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল তাদেরকে কেন প্রতীকি বিচার করতে পারব না? ক্রিস্টোফার হিচেন্সের লেখা ‘ট্রায়ালস অফ হেনরি কিসিঞ্জা’র বইটিতে তাকে বিচার করার জন্যে প্রয়োজনীয় যথেস্ট মাল মশলা রয়েছে। কাজেই এই নববর্ষে আমার দ্বিতীয় চাওয়াটি হচ্ছে হেনরি কিসিঞ্জারের একটি প্রতীকি বিচার!

৩. জামায়াতমুক্ত বিএনপি : বাংলাদেশের সরকারি দল এবং বিরোধী দল দুটোকেই হতে হবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দল। বিএনপি যতদিন জামায়াতের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে রাখবে ততদিন সেটা হওয়া সম্ভব না। কাজেই আমি মনে করি জামায়াতকে আনুষ্ঠানিকভাবে পরিত্যাগ না করা পর্যন্ত বরোধী দল দুরে থাকুক। বিএনপি এর বাংলাদেশের একটি রাজনৈতিক দল হওয়ারই নৈতিক অধিকার নেই।

কাজেই এই নববর্ষে আমার তৃতীয় চাওয়া হচ্ছে জামায়াত মুক্ত বিএনপি। আমার ধারণা এটি যদি না ঘটে বিএনপি নামক রাজনৈতিক দলটিই ধীরে ধীরে শেষ হয়ে যাবে। (বিএনপি যদি জামায়াতকে পরিত্যাগ করে সম্ভবত গয়েশ্বর রায় এবং তার মত মানুষেরাও বিএনপি ছেড়ে জামায়াতে যোগ দেবে কিন্তু সেটা নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই!)

৪. আলাদা সাইকেল লেন : আমার ছাত্র এবং সহকর্মীরা মিলে আমাকে একটা সাইকেল উপহার দিয়েছে, বাংলাদেশের তৈরি সাইকেল এবং সাইকেলটি দেখে আমার চোখ জুড়িয়ে গেছে। আজকাল আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষক শিক্ষিকারা সাইকেলে করে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে। আমার মনে হচ্ছে শুধু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় নয় সারা দেশেই সাইকেল নিয়ে এক ধরনের আন্দোলনের মতো শুরু হয়েছে। শুধু আন্দোলন নয় এটাকে রীতিমতো বিপ্লব করে ফেলা সম্ভব যদি শুধুমাত্র বড় বড় রাস্তার পাশে পাশে ছোট এক চিলতে জায়গায় একটা সাইকেলের লেন করে দেয়া যায়। ঢাকার যে বিশাল ট্রাফিক জ্যাম সেটা দূর করে আমাদের সময় বাঁচানোর এর থেকে সহজ কোনো পরীক্ষিত পথ আছে বলে আমার জানা নেই। কাজেই এই নববর্সে আমার চতুর্থ চাওয়াটি হচ্ছে দেশের বড় বড় সড়কের পাশে পাশে আলাদা সাইকেল লেন।

৫. বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা : দেশে এখন যতগুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আছে তাদের সবগুলোর আলাদা আলাদা ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার মত দিন খুঁজে পাওয় যায় না। কাজেই ছাত্রছাত্রীদের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেয়ার জন্যে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়েক পরিত্যাগ করতে হয়। দূরের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় পছন্দের হলেও ছেলে মেয়েরা বাধ্য হয়ে কাছাকাছি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেয় তাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জাতীয় চরিত্রটি ধীরে ধীরে আঞ্চলিক চিরত্রে পাল্টে যাচ্ছে। এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার অমানবিক বিষয়টা এতদিনে সবাই জেনে গেছে। এটা সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছু নেই। কিন্তু যে বিষটা সবাই জানে না- সেটি হচ্ছে একই সাথে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ছাত্রছাত্রীরা বেশ কয়েকটাতে সুযোগ পাবার পর মাত্র একটাকে বেছে নেয়ার কারণে অনেক বশ্ববিদ্যালয়ে কিন্তু সিট ফাঁকা থেকে যায়। শেষ মুহূর্তে সেই ফাঁকা সিট বন্ধ করার জন্যে অনেক তোড়জোড় করার পরও কিন্তু সব সিট পূরণ হয় না। একদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা সিটের জন্যে ছেলেমেয়েরা পাগলের মত চেষ্টা করে অন্যদিকে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে সিট ফাঁকা থেকে যায়) এর চাইতে দুঃখের ব্যাপার আর কী হতে পারে? সমন্বিতভাবে সব বিশ্ববিদ্যালয় মিলে একটা ভর্তি পরীক্ষা নিলে এইসব সমস্যার সমাধান হয়ে যেতো। কাজেই এখন এটা হচ্ছে শুধুমাত্র সময়ের ব্যাপার যখন এই দেশের ছেলে মেয়েরা সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা দেবে, তার কারণ এ ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। এই নববর্ষে এটি হচ্ছে আমার পঞ্চম চাওয়ায়, আমি এই বছরেই এটি দেখতে চাই!

৬. দুটি পাবলিক পরীক্ষা  : এই দেশে শিক্ষানীতি প্রণয়ন করার সময় দুটি পাবলিক পরীক্ষার কথা বলা হয়েছিল কিন্তু ছেলেমেয়েদের এখন চার চারটি পাবলিক পরীক্ষা দিতে হয়। আমাদের ছেলেমেয়েরা যথেষ্ট চৌকস তারা খুব সহজেই চারটি কেন, আরো বেশি পরীক্ষা দিতে পারতো, যদি সেগুলো তারা নিজের মতো করে দিতো। কিন্তু আমাদের অভিভাবকেরা মোটামুটি উন্মাদের মতো হয়ে গেছেন, এই চারটি পাবলিক পরীক্ষাতেই গোল্ডেন ফাইভ নামক বিচিত্র বিষয়টি পেতেই হবে বলে তারা তাদের ছেলেমেয়েদের এতো ভয়ঙ্কর চাপের মুখে রাখেন যে এই ছেলেমেয়েদের শৈশব এখন বিষাক্ত হয়ে গেছে। যারা ছোট শিশুদের সংগঠন করেন তারা বলেছেন পঞ্চম শ্রেণি,  অষ্টম শ্রেণি বা দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় ছেলেমেয়েগুলোকে তারা সাহিত্য সংস্কৃতি শিল্প কোনো বিষয়ে আনতে পারেন না; কারণ তাদের বাবা মায়েরা তাদেরকে প্রাইভেট, কোচিং, কিংবা ব্যাচে পড়ানো ছাড়া অন্য কিছুতে সময় দিক সেটা মানতেই রাজি না। আমি চাই এই ছেলেমেয়েগুলো তাদের নিজেদের শৈশবকে উপভোগ করুক। এই দেশের শিক্ষাবিদেরা মিলে দুটি পাবলিক পরীক্ষার কথা বলেছিলেন, নববর্ষে আমার চাওয়া দেশের শিশুদের আবার দুটি পাবলিক পরীক্ষার মাঝে সীমাবদ্ধ রাখা হোক।

৭. পত্রিকায় গাইড বই প্রকাশ বন্ধ করা : আমাদের দেশে গাইড বই প্রকাশ করার উপর বিধিনিষেধ আছে, কিন্তু দেশের বড় বড় বিখ্যাত দৈনিক পত্রিকাগুলো বড় বড় গালভরা নাম দিয়ে নিয়মিতভাবে গাইড বই প্রকাশ করে। দেশের জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলোর যখন সত্যিকার শিক্ষার জন্য যুদ্ধ করার কথা তখন তারা যখন নিজেরাই গাইড বই ছাপায় (এবং অনেক সময় সেটি গর্ব করে বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রচার করে।) তখন আমাদের লম্বা লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া আর কিছু করার থাকে না। এই নববর্ষে আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলতে চাই না, আমি চাই এই বছরেই যেন সকল দৈনিক পত্রিকাগুলো তাদের গাইড বই প্রকাশ বন্ধ করে সেই পৃষ্ঠাটিতে জ্ঞান বিজ্ঞান সাহিত্য সংস্কৃতি ইতিহাসের চমকপ্রদ গল্প দিয়ে দেশের শিশুদের মুগ্ধ করে।

৮. প্রশ্ন ফাঁস থেকে মুক্তি : এই বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট চিৎকার করা হয়েছে। এটি অবিশাস্য যে একটি রাষ্ট্র তার লক্ষ লক্ষ পরীক্ষার্থীর জন্যে তৈরি করা প্রশ্নের ফাঁস হয়ে যাওয়া বন্ধ করতে পারে না। পরীক্ষার প্রশ্নই যদি ফাঁস হয়ে যায় সেই পরীক্ষার কিংবা সেই শিক্ষার আদৌ কি কোনো অর্থ আছে? এই নববর্ষে আমার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চাওয়া হচ্ছে সবরকম পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধ করে দেয়া।

৯. ফেসবুক থেকে মোহমুক্তি : খবরের কাগজের সংবাদ এই দেশের ৭০ শতাংশ মানুষ দিনে এক ঘণ্টা থেকে বেশি সময় ফেসবুক করে (শুধু করে বলতে হলে বলতে হবে সামাজিক নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে)। খবরটার আরো ভয়ঙ্কর অংশটি হচ্ছে ২৩ শতাংশ মানুষ দিনে ৫ ঘণ্টা থেকে বেশি সময় ফেসবুক করে কাটায়। কী ভয়ঙ্কর ব্যাপার! অল্প কয়দিনের একটা জীবন নিয়ে আমরা সবাই পৃথিবীতে এসেছি সেই জীবনে কতো কী দেখার আছে কতো কিছু করার আছে, তার কিছুই না দেখে কিছুই না করে ফেসবুকে স্ট্যাটাসের পিছনে কয়টা লাইক পড়েছে সেটা গুনে গুনে জীবন কাটিয়ে দেব? এই নববর্ষে আমার নবম চাওয়া, তরুণ সমাজ যেন বুঝতে শেখে যে আমরা প্রযুক্তিকে ব্যবহার করব, প্রযুক্তিকে কখনোই আমাদের ব্যবহার করতে দেব না। ফেসবুকের বাইরেও একটা জীবন আছে, ভার্চুয়াল জীবন থেকে সেই জীবন অনেক আনন্দের।

১০. সবার জন্যে প্রবেশগম্যতা : একটি দেশ কতোটুকু সভ্য হয়েছে সেটা একেকজন একেকভাবে বিচার করেন। আমার বিচার করার মাপকাঠিতা খুবই সহজ যে দেশে প্রতিবন্ধী মানুষেরা যতো বেশি স্বাভাবিক মানুষের মতো জীবন যাপন করবেন, সেই দেশ তত বেশি সভ্য। সেই বিচারে আমরা কিন্তু এখনো সেরকম সভ্য হতে পারিনি। হুইল চেয়ারে চলাফেরা করতে হয় এরকম মানুষেরা কিন্তু আমাদের দেশে এখনো পথে ঘাটে বিল্ডিংয়ে স্বাভাবিক মানুষের মত চলাফেরা করতে পারে না। দেশে সে ব্যাপারে আইন হয়েছে কিন্তু এখনো সেই আইন কার্যকর হয়নি।

কাজেই এই বছরের নববর্ষে আমার শেষ চাওয়াটি প্রতিবন্ধী মানুষদের নিয়ে। আমি চাই এই বছরে আমরা যেন সব জায়গায় সব মানুষের প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত করি। এখানে একটা বিষয়ে আমি একটু পরিস্কার করে নিতে চাই, যদিও আমি ‘প্রতিবন্ধী’ শব্দটি ব্যবহার করতে বাধ্য হয়েছি কিন্তু আমি এই শব্দটি বিশ্বাস করি না। যাদেরকে আমরা প্রতিবন্ধী বলি আমি তাদের অনেককে খুব কাছে থেকে দেখেছি এবং আবিষ্কার করেছি- তারা কিন্তু মোটেও প্রতিবন্ধী নন। তারা বিশেষ ধরনের মানুষ, একটা বিশেষ সুযোগটুকু দেয়া হলেই তারা কিন্তু আমাদের পাশাপাশি ঠিক আমাদের মতোই সব কাজ করতে পারেন।

নববর্ষের এই দশটি চাওয়া ছাড়াও আমার আরো অনেক চাওয়া আছে। কিছু নিজের কাছে, কিছু পরিবারের কাছে, কিছু সহকর্মীদের কাছে, কিছু ছাত্রছাত্রী বা তরুণ-তরুণীদের কাছে এবং বেশ কিছু রাষ্ট্রের কাছে। সবগুলো থেকে আমি এই দশটি বেছে নিয়েছি শুধু একটা কারণে- এই দশটি বাস্তবায়ন করতে কাউকে কোনো টাকা খরচ করতে হবে না। দরকার শুধু একটুখানি সদিচ্ছার! সেই সদিচ্ছাটুকু কেন আমরা দেখাব না?

লেখক : অধ্যাপক শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বিজ্ঞান লেখক।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.