‘লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হবে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি’

ডিসেম্বর ২৬, ২০১৫

12প্যারিস চুক্তিতে ধনী ও শিল্পোন্নত দেশগুলোর দায়কে ধনী-গরীব নির্বিশেষে সকল দেশের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে বাংলাদেশের কয়েকটি পরিবেশবাদী ও নাগরিক সংগঠন।ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির মিলনায়তনে শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে নাগরিক সংগঠনগুলোর জোট সিএসআরএল, ইক্যুইটিবিডি, সিসিডিএফ, ক্লিন, বাপা ও বিপনেটের নেতারা এ দাবি করেন।

সিএসআরএল-এর সাধারণ সম্পাদক শরমিন্দ নিলোর্মী বলেন, বিশ্ব নেতৃবৃন্দ প্রাকশিল্পায়ন যুগের চেয়ে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রা বাড়তে না দেয়ার অঙ্গীকার করলেও দেশগুলোর ‘অনুমিত জাতীয় অবদান’-এর মাধ্যমে গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমণ হ্রাসের যে রূপরেখা নির্ধারণ করেছে তা বিশ্বের তাপমাত্রা তিন ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি বাড়াবে। মানবসমাজের জন্য ক্ষতিকর গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমনে এমনকি বিশ্ব নেতৃবৃন্দের লক্ষ্য পূরনে ব্যর্থ হবে প্যারিস চুক্তি। সুতরাং এই চুক্তিতে উল্লসিত হবার কিছু নেই।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন সিএসআরএল-এর সহসভাপতি জিয়াউল হক মুক্তা, সিসিডিএফ-এর গোলাম রব্বানী ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের ডা. আবদুল মতিন।

জিয়াউল হক মুক্তা বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে জাতিসংঘের কাঠামো সনদ ও তার অন্তর্গত কিয়োটো প্রটোকলে শিল্পোন্নত দেশগুলোর যে ঐতিহাসিক দায় স্বীকৃত হয়েছে, প্যারিস চুক্তি তাদেরকে সে দায় থেকে অব্যাহতি দিয়েছে। প্যারিস চুক্তিতে ধনী শিল্পান্নত দেশগুলোর ঐতিহাসিক দায়কে ধনী-গরীব নির্বিশেষে সকল দেশের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।উপরন্তু সম্মেলনের ৫২ নম্বর সিদ্ধান্তে ধনী দেশগুলোকে স্পষ্টভাবে দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে এবং ক্ষতিপূরণের বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।’

গোলাম রব্বানী বলেন, ‘প্যারিস চুক্তি যদিও নির্গমণ হ্রাসের মাধ্যমে মানব সভ্যতাকে রক্ষা করবে না তবুও যেটুকু নির্গমণ হ্রাসের কথা বলা হয়েছে তাও যদি কোন দেশ না করে সে ক্ষেত্রে ওই দেশকে কোন জবাবদিহি বা শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে না। চুক্তিটি ‘ফ্যাসিলিটেটিভ’ এবং ‘নন-পিউনিটিভ’ বা অশাস্তিমূলক। এই চুক্তি পাঁচ বছর পর পর্যালোচনার কথা বলা হলেও ওই পর্যালোচনার ফলাফল থেকে দেশগুলোর জন্য অনুসৃত কোন নির্দেশনার বিধান নেই।’

ডা. আবদুল মতিন বলেন, ‘চুক্তির প্রথম দিককার খসড়াতে বাস্তুচ্যুত জনগণের অভিবাসন, পুনর্বাসন ও পরিকল্পিত স্থানান্তর বিষয়ে একটি ‘কোঅর্ডিনেশন ফ্যাসিলিটি’র বিধান থাকলেও চূড়ান্ত চুক্তিতে তা রাখা হয়নি। এভাবে বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত ও দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর কোটি কোটি মানুষের ভাগ্যকে উপেক্ষা করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তাগণ প্যারিস চুক্তির বিশ্লেষণ করে ১০টি কারণ উল্লেখ করেন কেন এই চুক্তি মানবতার কোন কাজে আসবে না। তারা বলেন, বিশ্বনেতৃবৃন্দ প্রতারণামূলকভাবে এই চুক্তি প্রণয়ন করছেন, তারা জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। বক্তারা বলেন, বাংলাদেশেও যারা এই চুক্তি নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন তারা হয় চুক্তিটি পড়ে দেখেন নি, না হয় পড়ে বুঝলেও অদৃশ্য কারণে জনগণকে ধোঁকা দিচ্ছেন।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.