‘বই উৎসব হবে, মান খারাপ হলে ব্যবস্থা’

ডিসেম্বর ২৩, ২০১৫

15সচিবালয় প্রতিবেদক : শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, নতুন বছরের প্রথম দিনেই নতুন শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়ার ইচ্ছা রয়েছে। ওইদিন শুক্রবার হওয়ায় একদিন পর সারাদেশে একদিনেই বই উৎসব হবে। সরকারি এসব বিনামূল্যের পাঠ্যবইয়ের মান খারাপ হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সচিবালয়ের গণমাধ্যম কেন্দ্রে মঙ্গলবার দুপুরে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম আয়োজিত ‘বিএসআরএফ  সংলাপ’ অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের জবাবে নুরুল ইসলাম নাহিদ এসব কথা বলেন।

সংগঠনটির সেক্রেটারি সিদ্দিকুর রহমানের সঞ্চালনায় সংলাপে সভাপতিত্ব করেন বিএসআরএফের সভাপতি শ্যামল সরকার। আগামী ১ জানুয়ারি সকাল ১০টায় রাজধানীর মিরপুরে ন্যাশনাল বাংলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাথমিকের পাঠ্যপুস্তক উৎসবের কথা। আর শিক্ষা মন্ত্রণালয় ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিতে গভঃ ল্যাবরেটরি স্কুলে বই বিতরণের কথা জানায়।

এ বিষয়ে নাহিদ বলেন,  বই উৎসব দুইদিন করা ঠিক হবে না; একদিনেই করা উচিত। আমি যখন দুটি মন্ত্রণালয়ের একসঙ্গে দায়িত্বে ছিলাম একদিনেই করেছিলাম। এ বিষয়ে আমি প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করেছি। আশা করি একদিনেই বই উৎসব হবে। তিনি বলেন, এবার প্রায় ৩৫ কোটি নতুন বই ছাপানো হচ্ছে। তাই হয়তো আলাদা করে দেখার সুযোগ নাই। কিন্তু তাই বলে আমরা তদারকি করছি না, তা কিন্তু নয়। আমাদের ৮০ ভাগ বই ইতিমধ্যে চলে গেছে। বাকি ২০ ভাগ বই যথাসময়ে চলে যাবে। তাছাড়া আমাদের পাঁচ শতাংশ বই রিজার্ভ রয়েছে, যাতে সংকট দেখা গেলেই তা থেকে পুরণ করতে পারি।

এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বইয়ের ছাপার মান খারাপ হলে সংশ্লিষ্টদের ছাড় দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, আগে ১০ শতাংশ জামানত ছিল। এখন তা বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। যাতে তারা এ বিষয়ে বিশেষভাবে নজর দেন। তারপরও আমরা ছাপা হওয়া বই যাচাই করে দখব। তাতে মান খারাপ হলে সংশ্লিষ্টদের জরিমানা করা হবে। নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, প্রতিবছর শুরুতে যেসব শিক্ষার্থী আসে তার মধ্যে অর্ধেক নতুন। নতুন শিক্ষার্থী হিসেবে বই পাওয়ার আলাদা একটা আনন্দ রয়েছে। একবারে নতুন হিসেবে বই পাওয়ার মধ্যে একটি আনন্দ উপভোগ করে। সবকিছু মিলিয়ে বলতে পারি, বছরের শুরুর দিন বই দিতে পারবো। স্কুল, মাদ্রাসা, টেকনিক্যাল, প্রাক-প্রাথমিক প্রি-প্রাইমারি সব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাই বই পাবে।’ ২০১০ সাল থেকে প্রাক-প্রাথমিক থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের হাতে উৎসব করে বই বিতরণ করে আসছে সরকার।

স্বচ্ছতা বজায় রাখতে এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয় আইনের আওতায় আনা হচ্ছে বলেও জানান শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি বলেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের অষ্টম জাতীয় পে-স্কেলে সুযোগ-সুবিধা ঘোষণার পরপরই আইনের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় আয়-ব্যয়ের হিসাব।

বর্তমানে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়ের কোনো হিসাব নেই মন্তব্য করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান থেকে তথ্য নিয়ে সব হিসাবের মধ্যে আনছি, যাতে ব্যয় ঠিকমতো হয়। এমপিওর টাকা সঠিকভাবে কাজে লাগালে সাশ্রয় হবে। স্বচ্ছতা আনতেই আইনের বিধি-বিধানে যুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। আগামী এক মাসের মধ্যে তা করা হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন নাহিদ।

তিনি বলেন, সরকারের কোষাগার থেকে বেতন দেওয়া হয়। অনেক স্কুলের আয় আছে, কিন্তু অনেকের নেই। আমরা এ জন্য আইনের আওতায় নিয়ে আসার চেষ্টা করছি। স্বচ্ছতার সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয় পরিচালিত হওয়া প্রয়োজন। আগের মতো যাচাই-বাছাই করেই এমপিও দেওয়া হবে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বিষয়টিকে উন্নত করার জন্য আমরা এখন থেকে অনলাইনে যাচ্ছি।

নতুন পে স্কেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বিসিএস শিক্ষকদের টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড নিয়ে অসন্তোষ প্রসঙ্গে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বিসিএস শিক্ষকদের টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেডের বিকল্প প্রস্তুত করা হচ্ছে। আলোচনা চলছে, চূড়ান্ত হলে জানতে পারবেন।’ তিনি বলেন, টাইম স্কেলের মাধ্যমে তারা উপরের মর্যাদায় পৌঁছতে পারতেন। কিভাবে তাদের এই সুযোগটা দেওয়া যায়, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। যতোদিন না হয় আগের মতোই তারা সুযোগ-সুবিধা পাবেন। স্কুল পর্যায়ে শিক্ষার্থী ঝরে পড়া ঠেকানোকে চ্যলেঞ্জিং কাজ উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এনরোলমেন্ট ৯৯ শতাংশের বেশি হলেও এখন পর্যন্ত স্কুল পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা ঝরে পড়ছে। এটা ঠেকানোই চ্যালেঞ্জ। সব শিশুকে শিক্ষায় নিয়ে আসায় আমাদের প্রধান লক্ষ্য।

তিনি বলেন, ‘শিক্ষার গুণগতমান বৃদ্ধি এবং গুণগত শিক্ষা অর্জন আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কোয়ান্টিটির দিক থেকে আমরা অনেক দূর এগিয়ে, কিন্তু কোয়ালিটির দিক থেকে আমরা অনেক পিছিয়ে। আমরা চাই, গুণগতমান বৃদ্ধিই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। গতানুগতিক শিক্ষাব্যবস্থায় গুণগত মান অর্জন সম্ভব নয়, এর জন্য মৌলিক পরিবর্তন আনতে হবে। দেশের সব মাদ্রাসাকে ঢালাওভাবে জঙ্গিবাদের আখড়া বলা ঠিক নয়, মন্তব্য করে নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, সব মাদ্রাসা জঙ্গিবাদের আখড়া আমরা কখনও এটা বলি না, সমর্থনও করি না। তবে কিছু কিছু লোক ধর্মকে ব্যবহার করে। ধর্মকে ব্যবহার করে যাতে কেউ জঙ্গি কার্যক্রম করতে না পারেন, সেটা দেখা উচিত।

মাদ্রাসা শিক্ষা নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে এখনো অপপ্রচার চলছে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আল্লাহর আইন ও সৎলোকের শাসনের কথা যারা বলে থাকেন, তাদের সরকার একটা মাদ্রাসার বিল্ডিংও করেনি। আমরা ১৩শ নতুন বিল্ডিং তৈরি করেছি, আরও ১৮শ করবো। ৩৫টি মডেল মাদ্রাসা হয়েছে। ৩১টি মাদ্রাসায় অনার্স কোর্স চালু করেছি। আলাদা অধিদপ্তর করে দিয়েছি। ইসলামিক-আরবি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছে জেনারেল শিক্ষার সঙ্গে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা যাতে তাল মিলিয়ে চলতে পারে এজন্য সব  ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’ কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের পড়া শেষে কর্মসংস্থানে ব্যবস্থা যাতে হয়, তার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও বলেন নাহিদ।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাফল্যের জন্য জনগণকে ভাগিদার করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমাদের যতটুকু সাফল্য তার চেয়ে বেশি ভুল ত্রুটি রয়েছে। তবে সবকিছু সাফল্যের ভাগিদার দেশের জনগণ। আপনাদের (সাংবাদিকরা) অবদানও রয়েছে অনেক। ভুলত্রুটি সামনে নিয়ে আসেন বলে আমরা শুধরাতে পারি, পর্যালোচনা করতে পারি। আমাদের সাফল্যের পেছনে আপনাদের অবদান কোনো অংশে কম নয়। ’ গণমাধ্যমের রিপোর্ট দিয়ে দিন শুরু হয় বলেও জানান শিক্ষামন্ত্রী।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.