২৮ পৌরসভায় মুখোমুখি বিএনপি ও জামায়াত

ডিসেম্বর ২০, ২০১৫

03আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীরা ২৮টি পৌরসভায় পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়ছেন। কেন্দ্রীয় ও স্থানীয়ভাবে চেষ্টা করার পরও সমঝোতা না হওয়ায় এসব পৌরসভা দুই দলের প্রার্থীদের জন্যই উন্মুক্ত থাকছে। তবে জামায়াতের প্রার্থীদের দলীয় প্রতীক না থাকায় তাঁদের ছাড় দেওয়ার ব্যাপারে বিএনপি খুব একটা আগ্রহী নয় বলে ওই দলের দুজন দায়িত্বশীল নেতা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন।
নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে জড়িত বিএনপি নেতাদের মূল্যায়ন হচ্ছে, জামায়াতের প্রার্থীদের মাঠে থাকার কারণে ২৮টির মধ্যে ১০-১২টি পৌরসভায় তাঁদের দলীয় প্রার্থীর জয়ে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। তাঁরা মনে করছেন, যেসব পৌরসভায় জামায়াতের প্রার্থীর জয়ের সম্ভাবনা নেই, সেখানে শেষ সময় পর্যন্ত তাঁদের নিষ্ক্রিয় করার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
যদিও পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর গত ২৭ নভেম্বর বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের বৈঠকে জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জোটের প্রধান শরিক জামায়াতের সঙ্গে কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি বিএনপি।
গতকাল শনিবার পৌরসভা নির্বাচনে ২০-দলীয় জোটের প্রচারের কৌশল নির্ধারণী বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না জামায়াতের কোনো প্রতিনিধি। সূত্র জানায়, ওই বৈঠকে বিএনপি-জামায়াতের প্রার্থী আছেন এমন পৌরসভাগুলো উন্মুক্ত থাকবে বলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জোটের অন্য শরিকদের জানিয়েছেন।
যে ২৮টি পৌরসভায় বিএনপি-জামায়াত মুখোমুখি হয়েছে তার মধ্যে ১৩টি রাজশাহী বিভাগে। এগুলো হলো রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী, মুন্ডুমালা, কাটাখালী, নওহাটা ও কেশরহাট; নাটোরের নলডাঙ্গা; চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর, শিবগঞ্জ, নাচোল ও রহনপুর; বগুড়ার কাহালু; জয়পুরহাট সদর এবং সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ। এ ছাড়া রংপুর বিভাগের নীলফামারীর জলঢাকা, দিনাজপুরের বীরগঞ্জ ও বিরামপুর এবং গাইবান্ধা সদর। সিলেট বিভাগের সিলেটের কানাইঘাট ও মৌলভীবাজারের বড়লেখা। চট্টগ্রাম বিভাগের নোয়াখালীর বসুরহাট ও চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড। ঢাকা বিভাগে ফরিদপুরের বোয়ালমারী এবং খুলনা বিভাগের যশোরের চৌগাছা, খুলনার পাইকগাছা, ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর, কুষ্টিয়ার মিরপুর, চুয়াডাঙ্গার জীবননগর ও দর্শনা।
বিএনপি সূত্র জানায়, ৪৬টি পৌরসভায় জামায়াতে ইসলামীর ৪৭ জন মেয়র পদে মনোনয়নপত্র জমা দেন। দলের নিবন্ধন না থাকায় দলের তাঁরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন। দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলায় জামায়াতের দুজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। ৪৬ প্রার্থীর মধ্যে ১১ জনের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ে বাতিল হয়ে যায়। এখন ৩৫টি পৌরসভায় জামায়াতের বৈধ প্রার্থী আছেন। কিন্তু ১৩ ডিসেম্বর সাতজন মেয়র প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। ফলে বিরামপুরের দুজনসহ এখন ২৮টি পৌরসভায় জামায়াতের ২৯ জন প্রার্থী আছেন।
জামায়াতের প্রচার বিভাগের একজন নেতা বলেন, তাঁরা একটি প্রার্থী তালিকা বিএনপির চেয়ারপারসনের কাছে দিয়েছিলেন। কিন্তু বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। এ কারণে জামায়াত জোটের সঙ্গে থাকছে না। পৃথক প্রার্থী দিয়েছে।
জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতা না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, জোটগতভাবে পৌরসভা নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দেখা যাচ্ছে অনেক পৌরসভায় এখন বিএনপি ও জামায়াতকে মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এতে ভোটে প্রভাব পড়বে। ফলে জোট ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিনি বলেন, এখনো সময় আছে। স্থানীয়ভাবে শেষ পর্যন্ত সমঝোতা হলে যেকোনো প্রার্থীকে নিষ্ক্রিয় করা যেতে পারে। তবে তিনি বলেন, এটি এখন স্থানীয়ভাবে করতে হবে।
বিএনপির প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষমতাপ্রাপ্ত ও নির্বাচন সমন্বয় কমিটির সদস্যসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান এ বিষয়ে বলেন, কিছু জায়গায় বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থী আছেন। স্থানীয় পর্যায়ে যতটুকু সম্ভব সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে। শেষ পর্যন্ত এই চেষ্টা থাকবে।
জামায়াত আলাদা প্রার্থী দেওয়ার বিষয় নিয়ে ২০-দলীয় জোটের মধ্যেও নানা আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। এ জন্য কোনো কোনো শরিক জামায়াতকে যেমন দায়ী করেছেন, তেমনি জোটগতভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে বিএনপির উদাসীনতাকেও দায়ী করেছেন। গতকাল সকালে বিএনপির গুলশান কার্যালয়ে ২০-দলীয় জোটের মহাসচিব পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের উদ্দেশ্য ছিল পৌরসভা নির্বাচনে জোটে প্রচারের কৌশল নির্ধারণ। কিন্তু বৈঠকে জামায়াতে ইসলামীর কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না। বিষয়টি নিয়ে জোটের অন্য শরিকদের প্রশ্নের সম্মুখীন হন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বৈঠক সূত্র জানায়, জামায়াতের অনুপস্থিতি নিয়ে জোটের শরিক দুটি দলের দুই নেতা প্রশ্ন তোলেন। জবাবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জামায়াতের নেতারা সমস্যার মধ্যে আছেন। ব্যক্তিগতভাবে তাঁর সঙ্গে কথা হয়েছে। একপর্যায়ে মির্জা ফখরুল কোনো দলের নাম উল্লেখ না করে বলেন, কে আসল, কে আসল না এটি বিষয় না। জোট ভাঙা-গড়ার খেলা সব সময় চলে। বিএনপি জোট রাখতে চায়।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.