‘কোনো শক্তি নেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করে’

ডিসেম্বর ১৪, ২০১৫

03যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের একেকটা রায় কার্যকরের মধ্য দিয়ে দেশ একেক ধাপ এগিয়ে যাচ্ছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘লাখো শহীদের রক্তের ঋণ আমাদের শোধ করতে হবে।’
সব ষড়যন্ত্র মোকাবেলার মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে তিনি বলেন, কোনো শক্তি নেই দুনিয়াতে এ বিচার বন্ধ করে।
সোমবার  রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে এক আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। খবর বাসস।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে, সব কিছু মোবাবেলা করেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। যাবো। বাংলাদেশের কোনো মানুষ যদি যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করতে চায় তাদের ঘৃণা করবেন। তাদেরও বিচার যুদ্ধাপরাধীদের মত হবে। তারাও যুদ্ধাপরাধী।’

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও দন্ড কার্যকর করার মাধ্যমে ষড়যন্ত্রকারীদের বিষদাঁত ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আর ষড়যন্ত্র করে কেউ দেশের ক্ষতি করতে পারবে না।

শেখ হাসিনা বলেন, এদেশকে মেধাশূন্য করে দেয়ার মানসেই মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের প্রাক্কালে পাকবাহিনী এবং তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার চক্র এদেশে বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ড ঘটায়। আজকে সেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মৃত্যু নিয়ে আমি ভাবি না, আমার হারানোর কিছু নেই। বাংলাদেশের মানুষকেই তো আপন করে নিয়েছি। এই মানুষের জন্যই আমার বাবা-ভাই-মা জীবন দিয়ে গেছেন। আমার একটাই লক্ষ্য- এ দেশের একটি মানুষও যেন গৃহহারা না থাকেন, দুই বেলা পেট ভরে খেতে পারেন- এটাই আমি চাই।

তিনি নিজস্ব অর্থায়নে মেগা প্রজেক্ট পদ্মাসেতু বাস্তবায়নের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। আমরা নিজেরাও যে পারি তা সমগ্র বিশ্বের সামনে প্রমাণ করে দিয়েছি। আমাদের দেশের শতকরা ৯০ শতাংশ বাজেট এখন উন্নয়ন খাতে ব্যয় হচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানই এদেশে হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতির বীজবপন করেন। ‘৭৫ পরবর্তী সময়ে দেশে তারা এমন একটা অবস্থা তৈরি করেছিল, দেশের স্বাধীনতা আনাই যেন বিরাট অপরাধ। মুক্তিযুদ্ধটাই যেন অপরাধ।’

তিনি বলেন, ‘একেক রাতে একশ’ করে সৈনিক, মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করেছে জিয়াউর রহমান। পাকিস্তান আমাদের বিজয়ের প্রতিশোধ নিয়েছে জিয়াউর রহমানের মাধ্যমে। তার স্ত্রী একই কাজ করছে।’

তিনি জিয়াউর রহমানকে বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্মদাতা আখ্যায়িত করে বলেন, ‘বেইমান মোস্তাক সে সময় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করলেও ক্ষমতার কেন্দ্রে ছিলেন জিয়াউর রহমান। তিনিই মার্শালল’ দিয়ে অর্ডিন্যান্স জারি করে সংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ এবং ৩৮ অনুচ্ছেদ বাতিল করে দেশে দালাল আইনে চলমান যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করে প্রায় সাড়ে ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধীকে কারাগার থেকে মুক্ত করে দেন। তাদের অনেকেরই পাকিস্তানী পাসপোর্ট ফেরত দিয়ে এদেশের নাগরিকত্ব এবং রাজনীতি করার অধিকার দেন।

জিয়া লাখো মুক্তিযোদ্ধার রক্ত ও মা-বোনদের সম্ভ্রমের সঙ্গে বেইমানী করে যেভাবে রাজাকারদের মন্ত্রিসভায় স্থান দিয়েছেন তারই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে বেগম জিয়া শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী নিজামী, মুজিাহিদদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা তুলে দেন। যে কারণে ১০ ট্রাক অস্ত্রের চালানের মত ঘটনা ঘটেছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

তিনি বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম জিয়ার শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করতে যাওয়াকে জাতির সঙ্গে উপহাস আখ্যায়িত করে বলেন, ‘তিনি নওটাংকি ভালই জানেন। উনি কোন মুখে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে যান। মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছিল, তিনি তাদেরকে মন্ত্রী বানিয়েছিলেন। ওখানে যাওয়া তার তামাশা ছাড়া কিছুই না। বাংলাদেশের মানুষ এটা বোঝে।’

তিনি এ প্রসঙ্গে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনের নামে ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে পরবর্তী ৯২ দিনে দেড় শতাধিক মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা, ৬৬৯ জনকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া, গাড়ি ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের হত্যার তীব্র নিন্দা করেন।

দেশের মানুষের প্রতি অটুট বিশ্বাস থাকার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার বিশ্বাস আছে বাংলাদেশের মানুষের ওপর। আমি মৃত্যু নিয়ে ভাবি না, আমার হারানোর কিছু নেই। বাংলাদেশের মানুষকেই তো আপন করে নিয়েছি। এই মানুষের জন্যই আমার বাবা-ভাই-মা জীবন দিয়ে গেছেন। আমার একটাই লক্ষ্য- এ দেশের একটি মানুষও যেন গৃহহারা না থাকেন, দুই বেলা পেট ভরে খেতে পারেন- এটাই আমি চাই।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘ধার করে ঘি খাওয়ার চেয়ে নিজের শক্তিতে নুন খাওয়াই বড় কথা। ভিক্ষা করে বিলাসিতা করে নয়, কুঁড়ে ঘরে থেকে, কুঁড়ে ঘরেই থাকবো। তাও কারো কাছে হাত পাতবো না। মাথা নত করবো না। বাংলাদেশের মানুষকে সেই চেতনা নিয়েই থাকতে হবে।’

তিনি বলেন, দেশকে গড়ে তুলবো- উন্নত দেশ হিসেবে। যারা রক্ত দিয়ে গেছেন- তাদের রক্তের মর্যাদা দিতে হবে। আমার বাবা জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান জেল খেটেছেন, আমরা তো সন্তান হিসেবে পিতৃস্নেহ বঞ্চিত হয়েছি। আমরা তো সে সব মেনে নিয়েছি। ত্যাগ করে গেছেন তিনি- এই ত্যাগ বৃথা যায়নি, তিনি দেশ স্বাধীন করে গেছেন। আমরা দেশকে তাঁর স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মুক্ত হিসেবে গড়ে তুলবো।

আলোচনা সভায় আরো বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং কৃষিমস্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রিয় নেতা আক্তারুজ্জামান, মহানগর সাধারণ সম্পাদক এবং ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থপনা মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, মহামগর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজ, খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, শহীদ ড. আলীম চৌধুরীর কন্যা ড. নুজহাত চৌধুরী প্রমুখ।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.