কিশোরীটির শরীরে এখন এইচআইভি

ডিসেম্বর ১২, ২০১৫

13আন্তর্জাতিক ডেস্ক : কিশোরী মেয়েটির শরীরে এখন এইচআইভি ভাইরাসের অস্তিত্ব। পশ্চিমবঙ্গের ডায়মন্ড হারবার থেকে মেয়েটিকে অপহরণ করে প্রথমে উত্তরপ্রদেশে নিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। সেখান থেকে উত্তরাখণ্ড, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, বেঙ্গালুরু, ম্যাঙ্গালোর হয়ে তারা ফিরে আসে গাজিয়াবাদে।আর বছরভর চলতে থাকে গণধর্ষণের ঘটনা। চলতি ডিসেম্বরে প্রকাশ্যে আসে এই জঘন্য বর্বরতার ঘটনাটি।

এই বর্বর কাণ্ডের ভয়াবহতা বহু গুণ বেড়েছে মেয়েটির শরীরে এইচআইভি ভাইরাসের অস্তিত্ব মেলায়। কিশোরীকে ভয়াবহ নির্যাতনের ঘটনায় নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় প্রশাসনও।ঘটনায় ধৃত আসলাম ওরফে জব্বারের বিরুদ্ধে এনএসএ বা জাতীয় নিরাপত্তা আইনের ধারা প্রয়োগের জন্য উত্তরপ্রদেশ প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছে তারা। উদ্বিগ্ন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের নির্দেশে ইতিমধ্যেই ধৃতের বিরুদ্ধে এনএসএ-র ধারায় অভিযোগ এনেছে গাজিয়াবাদ পুলিশ। এ ছাড়া অপহরণ, ধর্ষণ, খুনের চেষ্টার মতো রুটিনমাফিক ধারা তো আছেই।

গাজিয়াবাদের পুলিশ সুপার (শহর) বলেন, ‘ওই কিশোরীর উপরে লাগাতার পৈশাচিক অত্যাচারে সব স্তরের মানুষই উদ্বিগ্ন। তা ছাড়া একাধিক রাজ্য ও প্রতিবেশী রাষ্ট্রের বিভিন্ন চক্রের সঙ্গে এই নারী পাচার চক্রের সম্ভাব্য সম্পর্কের বিষয়টি উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। সব মিলিয়েই ধৃতের বিরুদ্ধে জাতীয় নিরাপত্তা আইনে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

জব্বারকে জেরা করে ওই গণধর্ষণে বাবু নামে অন্য একটি লোকের জড়িত থাকার বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। তদন্তে জানা গিয়েছে, ডায়মন্ড হারবারের বাসিন্দা বাবু অপহরণের সময় জব্বারের সঙ্গেই ছিল। ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করতে পশ্চিমবঙ্গ রওনা হয়েছে গাজিয়াবাদ পুলিশের একটি দল।

কিশোরীটি এখন দিল্লির গুরু তেগবাহাদুর হাসপাতালে চিকিতসাধীন।হাসপাতাল সূত্রের খবর, এইচআইভি ভাইরাস ঢোকায় ওই কিশোরীর সংক্রমণ মারাত্মক আকার নিয়েছে। ধৃত জব্বার জেরার মুখে স্বীকার করেছে, সে এইচআইভি পজিটিভ এবং সে-ও কিশোরীটিকে ধর্ষণ করেছে বহু বার।

কিশোরী পুলিশকে জানায়, বিভিন্ন জায়গায় বারবার বহু লোকের হাতে নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছিল তাকে। এক জায়গা থেকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার সময় তাকে ওষুধ খাইয়ে আচ্ছন্ন করে রাখা হতো। মেয়েটির শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক হয়ে পড়ায় গত সপ্তাহে তাকে গাজিয়াবাদের একটি হাসপাতালে ভর্তি করে পালিয়ে যায় জব্বারেরা। অবস্থার অবনতি হতে থাকায় সোমবার তেগবাহাদুর হাসপাতালে পাঠানো হয় তাকে।

হাসপাতাল জানিয়েছে, মেয়েটিকে প্রথম ভর্তি করার সময় এমনই দুর্গন্ধ বেরোচ্ছিল যে, সামনে যাওয়াই যাচ্ছিল না। কড়া অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে সংক্রমণ কমানোর চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু মেয়েটির নিম্নাঙ্গ এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যে, পা দু’টি অসাড় হয়ে গিয়েছে। তার উপরে এইচআইভি ভাইরাস ধরা পড়ায় চিন্তার ভাঁজ বেড়েছে ডাক্তারদের কপালে। চিন্তিত পুলিশমহল। কিশোরীটির অবস্থা এখনও আশঙ্কাজনক। শুক্রবারেও এক দফা রক্ত দেওয়া হয়েছে তাকে। আয়েশার সংক্রমণ যাতে আর ছড়িয়ে না-পড়ে, চিকিৎসকেরা সেই চেষ্টাই করছেন।

কিশেরীটির ভাই  এবং ডায়মন্ড হারবার থানার তদন্তকারী অফিসার দিল্লি পৌঁছেছেন। ওই কিশোরীর ভাই হাসপাতাল থেকে  বলেন, ‘বোনের কষ্ট চোখে দেখা যাচ্ছে না।’ তিনি জানান, উচ্চ মাধ্যমিকের পরীক্ষার্থী বোন এক দিন স্কুল থেকে ফেরার পথে অপহৃত হয়। মাঝখানে এক দিন মোবাইল থেকে ফোন করে। কিন্তু পরে তিনি এবং পুলিশ ওই নম্বরে ফোন করতে গিয়ে দেখেন, মোবাইল বন্ধ আছে। তার পরে দীর্ঘদিন বোনের আর কোনও খবর জানতে পারেননি তিনি।মঙ্গলবার রাতে হঠাৎ একটি ফোনে জানানো হয়, তার বোনকে খুঁজে পাওয়া গিয়েছে এবং সে ভর্তি আছে দিল্লির হাসপাতালে।

বিভিন্ন সময়ে পাচার হওয়া মেয়েদের দেহ-ব্যবসায় নামানোর অভিযোগ উঠলেও এইচআইভি-তে আক্রান্ত কোনও ব্যক্তি কোনও মেয়েকে ধর্ষণ করেছে, এমন অভিযোগ বা প্রমাণ আগে মেলেনি। জব্বার নিজের রোগের কথা জেনেও মেয়েটিকে ধর্ষণ করায় ঘটনাটির পৈশাচিকতা বেড়ে গিয়েছে। তদন্তকারীরাও স্তম্ভিত। এইচআইভি-র মতো মারণ রোগ ছড়ানো অপরাধ। এই অবস্থায় জব্বারের বিরুদ্ধে ওই নাবালিকাকে ধর্ষণের অভিযোগে প্রোটেকশন অব চিলড্রেন ফ্রম সেক্সুয়াল অফেন্স (পক্সো) আইনে মামলা করারও সুপারিশ করা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য, গত দেড় দশকে নারী পাচার ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করেছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও নেপাল হয়ে মেয়েরা প্রথমে আসছে পশ্চিমবঙ্গে। সেখান থেকে তাদের পাঠানো হচ্ছে দিল্লিতে। যারা দেখতে ভাল, তাদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে মুম্বাই। সেখান থেকে দুবাই, এমনকী আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে পাচার করা হচ্ছে পূর্ব ভারতের মেয়েদের। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, গত এক বছরে দেশে পাচার চক্রের শিকার হয়েছেন ৪০ হাজার নারী। শিশুদের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা ১৬ হাজারের কাছাকাছি।

তথ্যসূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.