পদ্মাসেতু স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রকল্প!

ডিসেম্বর ১১, ২০১৫

22 দেশের ৪৫ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রকল্পের নাম পদ্মাসেতু। সে হিসেবে একদিকে যেমন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে চলছে এর নির্মাণ কাজ তেমনি এটি দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জ দেশের নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণ।

এটাকে এভাবে বর্ণনা করেছেন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তার ভাষায় ‘ বিজয়ের মাসে এটি আরেকটি বিজয়। স্বাধীনতার ৪৫ বছর পরে এটি বাঙালির আরেক বিজয়। এক বিজয় ৭১-এ যার নায়ক মহাবীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।  আর আরেক বিজয় পদ্মাসেতুর নির্মাণের মধ্য দিয়ে যার বঙ্গবন্ধুর বীরকন্যা শেখ হাসিনা। এটা তার অসম সাহসিকতার সোনালী ফসল।

বৃহস্পতিবার ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু এলাকায় যাওয়া সাংবাদিকদের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলছিলেন মন্ত্রী।

মন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু জাতীয় সম্মানের বিষয় ছিলো। কারণ বিশ্বব্যাংক যখন চলে যায় তখন আমাদের চোর অপবাদ দেয় তারা। এখন  আমরাও প্রমাণ করেছি আমরা চোরের জাতি নই বীরের জাতি। এখন বিশ্বব্যাংকও স্বীকার করছে তারা পদ্মাসেতু থেকে সরে গিয়ে ভুল করেছে।

শনিবার (১২ ডিসেম্বর) সকালে বাংলাদেশের দীর্ঘ দিনের স্বপ্নের সেতু, পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের মূল সেতু ও নদীশাসন এর বাস্তবায়ন কাজের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমে সাড়ে ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুর নির্মাণ কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হচ্ছে।

সেতুর শুরুর কথা
দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষা ও দাবি ছিল পদ্মা নদীর উপর সেতু নির্মাণ। সেই দাবি নিয়ে অপেক্ষায় ছিলেন দক্ষিণবঙ্গের ২১ জেলার কয়েক লক্ষ মানুষ। ২০০১ সালে সেই দাবি পূরণের পদক্ষেপ নেয়া শুরু হয়।

ওই বছরের ৪ জুলাই পদ্মা সেতুর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়। ১৯৯৮-৯৯ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর প্রি-ফিজিবিলিটি সম্পন্ন করেন।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পরই ফেব্রুয়ারি মাসে পদ্মা সেতুর জন্য ডিজাইন কনসালট্যান্ট নিয়োগ করে। কনসালট্যান্ট ২০১০’-এর সেপ্টেম্বরে প্রাথমিক ডিজাইন সম্পন্ন করে এবং সেতু বিভাগ প্রিকোয়ালিফিকেশন দরপত্র আহ্বান করে।

২০ জুলাই ২০১০ তারিখে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি ৫ জন দরদাতাকে  প্রিকোয়ালিফাইড বিবেচনা করে প্রতিবেদন দাখিল এবং সেতু বিভাগ বিশ্বব্যাংকের অনাপত্তির জন্য প্রেরণ করে।

১০ অক্টোবর ২০১০ তারিখে বিশ্বব্যাংক প্রতিবেদনের উপর অনাপত্তি প্রদান না করে পুনরায় প্রিকোয়ালিফিকেশন দরপত্র আহ্বান করার অনুরোধ করে। সেতু বিভাগ  পুনরায় প্রিকোয়ালিফিকেশন দরপত্র আহ্বান করে।

২৪ নভেম্বর ১০টি প্রতিষ্ঠান  প্রিকোয়ালিফিকেশন দরপত্র দাখিল করে। দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি ৫টি প্রতিষ্ঠানকে প্রিকোয়ালিফাইড বিবেচনা করে ২০১১ সালের ০৭ জানুয়ারি প্রতিবেদন দাখিল করে এবং সেতু বিভাগ বিশ্বব্যাংকের অনাপত্তির জন্য প্রেরণ করে।

বিশ্বব্যাংক  ১ জুলাই অনাপত্তি প্রদান করে এবং ২০১১ সালের ১৩ জুলাই সেতু বিভাগ থেকে মূল সেতুর বিড ডকুমেন্ট বিশ্বব্যাংকের সম্মতির জন্য প্রেরণ করে। বিশ্বব্যাংক  সম্মতি প্রদান না করে ২০১১ মাসে সেপ্টেম্বরে এ সেতুর ঋণ চুক্তি স্থগিত করে এবং পরে ঋণ চুক্তিটি বাতিল করে দেয়।

পরে বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার পর ২০১৩ সালের ২৬ জুন মূল সেতুর প্রিকোয়ালিফাইড ঠিকাদারকে বিড ডকুমেন্ট ইস্যু করা হয়।

২০১৪ সালের ২৪ এপ্রিল একটি মাত্র প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ আর্থিক প্রস্তাব দাখিল করে। যা’র ব্যয় ১২১৩৩.৩৯ কোটি টাকা। ইঞ্জিনিয়ার্স এস্টিমেট অনুযায়ী সর্বসাকূল্যে ১৩৮৮৫.৮৫ কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হয়। দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি এই আর্থিক প্রস্তাব  যাচাই বাছাই করে। যাচাই বাছাইয়ে দেখা যায় চায়না মেজর ব্রিজের দেয়া প্রস্তাবে  সরকারি প্রস্তাবের নির্ধারিত ব্যয় থেকে শতকরা ১২ দশমিক ৬২ কম  দিয়ে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।

ফলে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি এই প্রস্তাব গ্রহণের জন্য সুপারিশ করে। মূল সেতু নির্মাণের জন্য ঠিকাদারদের দাখিল করা আর্থিক প্রস্তাবটি ২০১৪ সালের মে মাসে  সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে আলোচিত হয় এবং ১২১৩৩.৩৯ কোটি টাকার অনুমোদন প্রদান করা হয়।

পরে ২০১৪ সালের জুন মাসে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজের সাথে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এবং ২৬ নভেম্বর কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। চুক্তি অনুযায়ী কাজের মেয়াদ ৪৮ মাস।

পদ্মা সেতু প্রকল্পের তিনটি প্যাকেজের মধ্যে জাজিরা সংযোগ সড়ক, মাওয়া সংযোগ সড়ক ও সার্ভিস এরিয়া-২ এর অগ্রগতি প্রায় ৬০ ভাগ।

ডিসেম্বর ১১, ২০১৫

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.