প্রেক্ষাগৃহে উপেক্ষিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র

ডিসেম্বর ৮, ২০১৫

15ঢাকাই চলচ্চিত্র থেকে সোনালি দিন হারিয়েছে বেশ আগে। এখন অনেকটা ধুঁকে ধুঁকেই পথ চলছে এ মাধ্যমটি। একদিকে বাণিজ্যিক ধারার চলচ্চিত্রগুলোই ঠিক মতো লাভের মুখ দেখছে না।

অন্যদিকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বাঁচিয়ে রাখতে প্রায় প্রতি বছরই নির্মিত হচ্ছে বেশ কিছু মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র। কিন্তু বাণিজ্যিক সিনেমা ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে যে কটা মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র নির্মিত হচ্ছে তাও প্রেক্ষাগৃহ থেকে বেশ জোরালোভাবেই উপেক্ষিত হচ্ছে।

নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের গল্প অবলম্বনে সম্প্রতি নির্মিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র অনিল বাগচীর একদিন। এ চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেছেন গুণী নির্মাতা মোরশেদুল ইসলাম। ১১ ডিসেম্বর ঢাকাসহ সারাদেশে মুক্তি পেতে যাচ্ছে এ সিনেমাটি। তবে সব কিছু ঠিকঠাক থাকলেও প্রত্যাশা অনুযায়ী প্রেক্ষাগৃহ পায়নি বলে রাইজিংবিডিকে জানিয়েছেন এ সিনেমার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান বেঙ্গল ক্রিয়েশনস কর্তৃপক্ষ।

এ প্রসঙ্গে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান বেঙ্গল ক্রিয়েশনস লিমিটেডের নির্বাহী প্রযোজক এন রাশেদ চৌধুরী রাইজিংবিডিকে বলেন,‘আমাদের ৮-১০টি সিনেমা হলে মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সে প্রত্যাশা অনুযায়ী আমরা প্রেক্ষাগৃহ পাইনি। এর মধ্যে বাণিজ্যিক সিনেমা ব্ল্যাকমুক্তি পেয়েছে। এপার ওপার সিনেমাটিও মুক্তি পাবে। বাণিজ্যিক সিনেমার সঙ্গে এ ধরনের চলচ্চিত্রগুলো পাল্লা দিয়ে পারবে না এটাই স্বাভাবিক কিন্তু এমন পরিস্থিতি খুবই দুঃখজনক। ’

তিনি আরো বলেন, ‘বিজয়ের মাসে মুক্তিযুদ্ধভিক্তিক এ চলচ্চিত্রটি প্রদর্শনের যে লক্ষ্য আমাদের ছিল, তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। প্রথম সপ্তাহে ঢাকাসহ ১০টি হলে, দ্বিতীয় সপ্তাহে ২০টি হলে প্রদর্শনের পরিকল্পনা ছিল। সেখানে এখন ৫-৭টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি দিতে হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধভিক্তি চলচ্চিত্র প্রদর্শনের ক্ষেত্রে সরকারিভাবে উৎসাহ প্রদান করা হলেও এ ব্যাপারে তেমন কোনো সাহায্য পাইনি।’

চলচ্চিত্রটিতে অনিল বাগচীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন নতুন অভিনেতা আরেফ সৈয়দ। এ ছাড়াও এতে আরো অভিনয় করেছেন- গাজী রাকায়েত, তৌফিক ইমন, জ্যোতিকা জ্যোতি, ফারহানা মিঠু, মিশা সওদাগর প্রমুখ। চলচ্চিত্রটির সংগীত পরিচালনা করেছেন সানি জুবায়ের।

হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পর তার গল্প অবলম্বনে প্রথম নির্মিত হয়েছে এ চলচ্চিত্রটি। বর্তমান প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানানোটাও নিজেদের দায়িত্ব। তাই বিকল্প পদ্ধতিতে আগামী বছর থেকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে চলচ্চিত্রটি প্রদর্শনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে এ প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান।

এর আগে মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে মান্নান হীরা নির্মাণ করেন শিশুতোষ চলচ্চিত্র একাত্তরের ক্ষুদিরাম। সরকারি অনুদানে নির্মিত এ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন- মামুনুর রশীদ, ফজলুর রহমান বাবু, ড. ইনামুল হক, মোমেনা চৌধুরী, মুনসি মজনু, চঞ্চল, চিত্রছবি, ফিরোজ আল মামুন, সাজু প্রমুখ। এ ছাড়া শিশুশিল্পীদের মধ্যে রয়েছেন- স্বচ্ছ, রুদ্র, শাকিল, অন্তরা, মধুমনি, মুন্না, জুয়েল মিজি প্রমুখ। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে চলচ্চিত্রটির উদ্বোধনী প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হলেও প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়নি। তারপর বিকল্প পদ্ধতিতেই প্রদর্শিত হয়েছে এ চলচ্চিত্রটি।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশে পাকিস্তানি ও তাদের দোসররা যে গণহত্যা চালিয়েছিল তাকে ঘিরেই গোলাম মোস্তফা শিমুলের নির্মাণ করেনহরিযূপীয়া চলচ্চিত্রটি। গোলাম মোস্তফা শিমুলের পরিচালনায় এতে অভিনয় করেন- খায়রুল আলম সবুজ, মাহমুদুল ইসলাম মিঠু, কাজী রাজু, রিয়াজ মাহমুদ জুয়েল, পাভেল ইসলাম, সাব্বির আহমেদ, বিথী রানী সরকার, জুনায়েদ হালিম, শফিউল আলম, নাফা প্রমূখ। এ চলচ্চিত্রটি চলতি বছরের ২৭ মার্চ ২০ টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। যা বাণিজ্যিক ধারার চলচ্চিত্রের তুলনায় খুবই কম।

মুক্তিযুদ্ধের গল্প নিয়ে শাহ আলম কিরণ নির্মাণ করেছেন ৭১ এর মা জননী চলচ্চিত্রটি। ২০১৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর একটি প্রেক্ষাগৃহে চলচ্চিত্রটি মুক্তি পেলেও সারা দেশে মুক্তি পায়নি এ সিনেমা। চলতি বছরে আরো দুইবার মুক্তির তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত মুক্তি পায়নি। বড় বাজেটের এ চলচ্চিত্রটি লোকসানের ভয়ে এখনো মুক্তির অপেক্ষায় দিন গুনছে।

প্রেক্ষাগৃহে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র এমনভাবে উপেক্ষিত হতে থাকলে ভবিষ্যৎ এ ঘরানার চলচ্চিত্র  খুব একটা নির্মিত হবে না বলে মনে করছেন চলচ্চিত্র বোদ্ধারা। তাই সরকারিভাবে এর পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন বলেও মনে করেন তারা।

 

 

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.