মেয়র পদে দলীয় প্রার্থী-চলছে প্রস্তুতি ভোটযুদ্ধের

নভেম্বর ২৬, ২০১৫

14দেশের ২৩৪ পৌরসভায় আগামী ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। গত মঙ্গলবার এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসির আনুষ্ঠানিক তফসিল ঘোষণার পর মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা। কারণ দেশে এবারই প্রথম দলীয়ভাবে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে পৌরসভা নির্বাচন।

নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হতে হলে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মনোনীত বা স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে হবে। এই বিধান রেখে গত ১৯ নভেম্বর জাতীয় সংসদে স্থানীয় সরকার ( পৌরসভা) (সংশোধন) বিল ২০১৫ পাস হয়। তার আগে মন্ত্রিসভায় দেশের সব স্থানীয় নির্বাচন দলীয়ভাবে করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।দলীয়ভাবে পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীরা প্রস্তুতি শুরু করেছে। পাশপাশি ক্ষমতাসীন জোটের শরিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থী পৌরসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিরোধীদল জাতীয় পার্টিও পৌরসভা নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। এক্ষেত্রে ইসিতে নিবন্ধিত সব দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় জোরালো প্রচার শুরু করেছে।

 

এদিকে টানা দ্বিতীয়বার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি পৌরসভা নির্বাচনে অংশ নেবে কি না সে বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি।। বুধবার রাতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বেঠকে বসেন। কিন্তু এ বৈঠকে পৌর নির্বাচন অংশ নেওয়ার বিষয়ে সিন্ধান্ত নিতে পারেনি দলটি। অপরদিকে উচ্চ আদালতের রায়ে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন স্থগিত থাকায় এ দলটির ব্যানারে কেউ মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে না।

আওয়ামী লীগ বৃহস্পতিবার এক জরুরি সভার মাধ্যমে পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়নসহ নির্বাচনী বিভিন্ন কৌশল নির্র্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ সভা ডেকেছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছয়টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ও সংসদীয় বোর্ডের এ সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। বুধবার আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ স্বাক্ষতির এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

আওয়ামী লীগ বৃহস্পতিবারের বৈঠকেই পৌরসভা নির্র্বাচনে কি প্রক্রিয়ায় প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হবে তা ঠিক করবে। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের সাত সাংগঠনিক সম্পাদকের সঙ্গে সিনিয়র নেতাদের নেতৃত্বে জেলা ও পৌর আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের সুপারিশ ও পরামর্শ সমন্বয় করে মনোনয়ন প্রক্রিয়া নির্ধারণ করা হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দুইজন সাংগঠনিক সম্পাদক জানান, এবার পৌরসভা নির্বাচনে দলীয়ভাবে মনোনয়ন দেওয়ার বিধান থাকায় মেয়র পদে প্রার্থী সিলেকশনে আওয়ামী লীগের কোন সমস্যা হবে না। কারণ মনোনয়নের বিধানটি সরাসরি দলীয় ফোরামে থাকায় সম্ভাব্য প্রার্থীরা দলীয় হাইকমান্ড মেনে নিতে বাধ্য হবে। অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে ইসির বিধান অনুসারে কমপক্ষে নির্বাচনী এলাকার ১০০ ভোটারের স্বাক্ষর সম্বলিত তথ্য মনোনয়ন ফরম তোলার সময় জমা দিতে হবে।

ইসির ঘোষিত তফসিল অনুসারে মেয়র পদে মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষমতা দলের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সমপর্যায়ের নেতার ওপর দেওয়া হয়েছে। দল সমর্থিত প্রার্থীকে এ সব পদধারী ব্যক্তি একটি প্রত্যয়নপত্র দেবেন। কোনো রাজনৈতিক দল পৌরসভা নির্বাচনে একাধিক ব্যক্তিকে মনোনয়ন দিতে পারবে না। একাধিক ব্যক্তিকে মনোনয়ন দিলে ওই দলের সব প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হবে। আর ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের বিষয়ে শর্তে বলা হয়েছে-  মেয়র পদে প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির নাম, পদবি, স্বাক্ষরসহ একটি চিঠি তফসিল ঘোষণার পাঁচ দিনের মধ্যেই রিটার্নিং অফিসারের কাছে পাঠাতে হবে। ওই চিঠির অনুলিপি নির্বাচন কমিশনেও দিতে হবে।

 

স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে সংশ্লিষ্ট পৌরসভার ১০০ ভোটারের স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হবে। এর মধ্যে পাঁচজনের তথ্য সফটওয়ারের মাধ্যমে দৈবচয়নের ভিত্তিতে যাচাই করবেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। তবে কেউ পৌরসভার মেয়র পদে এর আগে নির্বাচিত হলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে তাকে ভোটার স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা জমা দেওয়ার প্রয়োজন নেই।

ঘোষিত তফসিল অনুসারে, সম্ভাব্য প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ৩ ডিসেম্বর। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ৫ ও ৬ ডিসেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৩ ডিসেম্বর।

গত মঙ্গলবার (২৪ নভেম্বর) ইসি সচিবালয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দীন আহমেদ পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.