আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সাকা-মুজাহিদের ফাঁসি

নভেম্বর ২২, ২০১৫

07একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে।শনিবার দিবাগত রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে তাদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। আর বিরোধী জোটের শীর্ষস্থানীয় এই দুই নেতার ফাঁসির খবর বেশ ফলাও করে ছাপিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম।
যুক্তরাজ্যের বিবিসি, পাকিস্তানের ডন, ভারতের টাইমস অব ইন্ডিয়া, কাতারের আলজাজিরাসহ বেশিরভাগ গণমাধ্যমগুলো শিরোনাম করেছে ‘বাংলাদেশে দুই বিরোধী নেতাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ-’।
আলজাজিরার শিরোনাম ‘বাংলাদেশ এক্সিকিউটস টু অপজিশন লিডারস’। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচের পর বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় দুই বিরোধী নেতাকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে।
আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার ভূমিকার কারণে ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে।
মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশে এই মৃত্যুদ- অসন্তোষ সৃষ্টি করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে আলজাজিরা।
পাকিস্তানের ডন পত্রিকাও একই ধরনের শিরোনামে খবর প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, ৬৭ বছর বয়সী মুজাহিদকে ১৯৭১ সালে দেশটির শীর্ষ বুদ্ধিজীবীদের হত্যার মতো যুদ্ধাপরাধে ফাঁসির দ- দেওয়া হয়। মুজাহিদ জামায়াতে ইসলামের দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা।
আর ১৯৭১ সালে নৃশংসতা যেমন: গণহত্যার জন্য ৬৬ বছর বয়সী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মৃতুদ- দেওয়া হয়। তিনি ছয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
ভারতের টাইমস অব ইন্ডিয়া শিরোনাম করেছে, ‘১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধে বাংলাদেশের দুই বিরোধী নেতার ফাঁসি’।
ইসলামী নেতা আলী আহসান মুজাহিদ এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ক্ষমাভিক্ষার আবেদন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ খারিজ করে দেওয়ার অল্প সময়ের মধ্যে তাদের মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়।
বিবিসি তাদের খবরে বলেছে, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী বাংলাদেশের প্রভাবশালী নেতা ও ছয়বারের সংসদ সদস্য এবং মুজাহিদ বৃহত্তম ইসলামী দলের শীর্ষ নেতা। গণহত্যা ও ধর্ষণের অভিযোগে তাদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। তবে এ অভিযোগ তারা অস্বীকার করেছেন।
প্রসিকিউশনের বরাতে বিবিসি বলছে, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী চট্টগ্রামে তার বাবার বাড়িতে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতন কেন্দ্র গড়ে তুলেছিলেন।
অন্যদিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের নেতা ও বুদ্ধিজীবী হত্যার অভিযোগ আনা হয়।
ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা লিখেছে, বুধবার সর্বোচ্চ আদালত আসামিদের আপিল খারিজ করে দেওয়ার পরে দেরি করল না বাংলাদেশ সরকার। শনিবার রাতেই ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেওয়া হল একাত্তরে গণহত্যার দুই নায়ক বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী ও জামাতে ইসলামির সাধারণ সম্পাদক আলি আহসান মহম্মদ মুজাহিদকে। দিনভর নাটকের পর শেষ পর্যন্ত এই ফাঁসি কার্যকর হয় কি না, তা জানতে উৎসুক ছিলেন দেশজোড়া মানুষ। সময় নষ্টের কোনও অছিলা আসামিদের পক্ষে বাদ রাখা হয়নি। এমনকী বেনজির ভাবে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষাও করেন তাঁরা। কিন্তু রাতেই সেই আর্জি খারিজ হয়ে যাওয়ার পরে ফাঁসির রায় কার্যকর করতে সব বাধা কেটে যায়। ফাঁসি হয়ে যাওয়া মাত্র উল্লাসে ফেটে পড়ে বাংলাদেশ। রাতেই মশাল মিছিল বার করে ঢাকা পরিক্রমা করে গণজাগরণ মঞ্চের সদস্যরা। মিছিল বেরোয় বাংলাদেশের ছোটবড় প্রায় সব শহরেই। পাশাপাশি তাঁদের নেতা মুজাহিদের ফাঁসির প্রতিবাদে সোমবার হরতাল ডেকেছে জামাতে ইসলামি।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.