শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্তের তীব্র আপত্তি করেছেন সংসদ সদস্যরা

নভেম্বর ১৩, ২০১৫

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে পয়েন্ট অফ অর্ডারে এক অনির্ধারিত আলোচনায় আওয়ামী লীগ, জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি ও স্বতন্ত্র সদস্যরা সরকারের এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানান।

আলোচনার সময় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ অধিবেশন কক্ষে ছিলেন না।

আলোচনা শুরু করে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, “জনৈক আমলা এই সিদ্ধান্ত দিয়েছে। আমরা জানি না সে কে। মন্ত্রী বলেছেন, শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি হয়। তার মানে আমরা দুর্নীতি করি। উনি এভাবে বলতে পারেন না। সব সংসদ সদস্যকে উনি দুর্নীতিবাজ বলতে পারেন না।”

সরকারি এই সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়ে বিষয়টি নিয়ে সংসদীয় কমিটিতে আলোচনার দাবি জানান ফরাজী ।

পিরোজপুর-৩ আসনের সাংসদ ফরাজীর বক্তব্যের সময় উপস্থিত সংসদ সদস্যরা টেবিল চাপড়ে তাকে সমর্থন জানান।

এতোদিন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনা পর্যদই শিক্ষক নিয়োগের যাবতীয় কাজ করতেন।  স্থানীয় সাংসদ বা উপজেলা চেয়ারম্যানদের নেতৃত্বাধীন এসব পরিচালনা পর্ষদের শিক্ষক নিয়োগে ‘নিয়োগ বাণিজ্য’সহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় বুধবার একটি পরিপত্র জারি করে বেসরকারি  শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগ আপাতত বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, সংশোধিত বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা গ্রহণ ও প্রত্যয়ন বিধিমালা গত ২২ অক্টোবর থেকে কার্যকর হয়েছে।

এই বিধিমালা অনুযায়ী শিক্ষক নির্বাচনে বেসরকারি শিক্ষক নির্বাচন কমিশন গঠন করবে সরকার।

শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মধ্য থেকে মেধাতালিকা অনুযায়ী যোগ্যপ্রার্থী বাছাই করবে এই কমিশন। তাদের মধ্য থেকে মেধাক্রম অনুযায়ী শিক্ষক নিয়োগ দেবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনা পর্যদ।

এই বিধিমালা সংশোধন নিয়ে গত মাসে এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “অনেক সময় স্বচ্ছভাবে নিয়োগ হয় না, স্বজনপ্রীতি হয়, উপযুক্ত লোকও নিয়োগ পায় না। অনেক সময় আর্থিক লেনদেনও হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।”

সংসদে অনির্ধারিত ওই আলোচনায় স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হাজী সেলিম বলেন, “সংসদকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো হচ্ছে। টিআইবি সংসদকে পুতুল নাচের রঙ্গশালা বলেছেন। তাইতো করা হচ্ছে। আমি স্কুল বানালাম, আমি ওখানে নিয়োগ দিতে পারব না। শুধু আমি কেন, এখানে অনেক এমপি আছেন যারা স্কুল-কলেজ বানিয়েছেন। আমার সন্তানের ব্যথা আমি ছাড়া অন্য কেউ বুঝবে না।”

শিক্ষা ব্যবস্থার ‘অব্যবস্থাপনার’ জন্য মন্ত্রণালয়কে দায়ী করে আওয়ামী লীগের সাংসদ ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু বলেন, “মেধাবী নিয়োগ নিয়ে আমরা কোনো ছাড় দেব না। সরকার বিশাল অন্যায় করেছে। দীর্ঘদিনের প্রচলিত নিয়ম এভাবে বাদ দেওয়া ঠিক না। সংসদ আছে বলে এই বাংলাদেশ আছে।”

মেধাবীরা গ্রাম থেকে আসে দাবি করে তিনি বলেন, “কোনো সরকারি স্কুলের সিলেবাস শেষ হয় না। গ্রামের স্কুলে পড়া-লেখা ভালো হয়।”

জাসদের মইনউদ্দিন খান বাদল বলেন, “সব সময় এই সংসদকে ধাক্কা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। অনেক সংসদ সদস্য বলেন, মন্ত্রী হওয়ার পর সেই মন্ত্রী সাহেব এমপিদের আর ঠিকমতো…। যদি সংসদ সদস্যদের মর্যাদা না দেন তবে সংসদকে সবকিছুর ভরকেন্দ্র কিভাবে বলবেন।”

অনির্ধারিত এই আলোচনায় অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের নুরুল ইসলাম সুজন, ওয়ার্কার্স পার্টির ফজলে হোসেন বাদশা বক্তব্য দেন।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.