ফের হোয়াইটওয়াশ জিম্বাবুয়ে

নভেম্বর ১১, ২০১৫

12মিরপুর থেকে: তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচেও জয় পেয়েছে টাইগাররা। আর এ জয়ের মধ্য দিয়ে সফরকারী জিম্বাবুয়েকে ‘হোয়াইটওয়াশ’ করলো বাংলাদেশ। তৃতীয় ম্যাচে স্বাগতিকদের জয় ৬১ রানের।

টস জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ দলপতি মাশরাফি বিন মর্তুজা। ব্যাটিংয়ে নেমে ইমরুল কায়েস আর তামিম ইকবালের ব্যাটিং দৃঢ়তায় দারুণ শুরুর পরেও শেষ দিকে এসে উইকেট হারায় টাইগাররা। তবে, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের অনবদ্য ইনিংসে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ ২৭৬ রান সংগ্রহ করে।

মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে টানা পঞ্চম সিরিজ জয়ী বাংলাদেশের হয়ে ব্যাটিং উদ্বোধন করতে নামেন ১৫৩ ওয়ানডে খেলা তামিম ইকবাল এবং ৫৮ ওয়ানডে ম্যাচ খেলা ইমরুল কায়েস।
১৪৭ রানের মাথায় ভাঙে দুই দেশসেরা ওপেনার তামিম ইকবাল আর ইমরুল কায়েসের জুটি। ওয়ানডে দলে ফিরে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৭৬ রানের ইনিংস খেলেছিলেন ইমরুল কায়েস। ম্যাচ শেষে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়ে জানিয়েছিলেন রানের জন্য ক্ষুধার্ত তিনি। কেনো বলেছিলেন তার প্রমাণ মিলেছে তৃতীয় ওয়ানডেতে এসে। দলীয় ৩০তম ওভারে সিকান্দার রাজার তৃতীয় বলে স্ট্যাম্পিংয়ের ফাঁদে পড়েন ইমরুল। ডাউন দ্য উইকেটে বল তুলে মারতে গিয়ে আউট হওয়ার আগে ৯৫ বলে ৬টি চার আর ৪টি ছক্কায় ৭৩ রান করেন তিনি। এ ম্যাচের মধ্য দিয়ে ক্যারিয়ারের ১২তম অর্ধশতক তুলে নেন গত ম্যাচের সর্বোচ্চ স্কোরার ইমরুল কায়েস।

ইমরুলের পর দুর্ভাগ্যজনক ভাবে আউট হয়ে বিদায় নেন আরেক ওপেনার তামিম ইকবাল। দলীয় ১৭৩ রানের মাথায় ব্যক্তিগত ৭৩ রান করে তিনিও স্ট্যাম্পিংয়ের ফাঁদে পড়েন। গ্রায়েম ক্রেমারের বলে আউট হওয়ার আগে তামিম ৯৮ বলে ৭টি চার আর একটি ছক্কায় তার ইনিংসটি সাজান। এর আগে ৩২তম ওয়ানডে অর্ধশতক হাঁকান তামিম। মিরপুরে ২০০০ রানের মাইলফলকও স্পর্শ করেন তিনি। তামিমের আগে নির্দিষ্ট কোনো স্টেডিয়ামে দু’হাজারের বেশি রান করা ব্যাটসম্যানের তালিকায় ছিলেন সনাৎ জয়সুরিয়া, ইনজামাম উল হক, সাঈদ আনোয়ার, কুমার সাঙ্গাকারা, রিকি পন্টিং ও বাংলাদেশের সাকিব আল হাসান।

এর আগে ইমরুল-তামিমের সেরা ওপেনিং জুটি ছিল ২০১০ সালে ভারতের বিপক্ষে ৮০ রানের। এ ম্যাচে ইমরুল-তামিম জুটি থেকে আসে ১৭৭ বলে ১৪৭ রান। বাংলাদেশের পক্ষে সবচেয়ে বড় উদ্বোধনী জুটির তালিকায় তামিম-ইমরুলের এই ১৪৭ রানের অবস্থান পঞ্চম। এর আগে ১‌৯৯৯ সালে মেহরাব হোসেন-শাহরিয়ার হোসেনের ১৭০ রান এখনো বাংলাদেশের সেরা উদ্বোধনী জুটি হয়ে আছে।

দুই ওপেনারের ব্যাটে ভালো শুরুর পর ব্যাটিং ক্রিজে ছিলেন ১৫৮ ওয়ানডে খেলার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন মুশফিকুর রহিম এবং ৯ ওয়ানডে খেলা লিটন দাস। আগের দুই ব্যাটসম্যান স্ট্যাম্পিংয়ের ফাঁদে পড়ে বিদায় নেওয়ার পর ইনিংসের ৩৮তম ওভারে একই কায়দায় বিদায় নেন মুশফিক। ওয়ালারের শিকার হয়ে সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ২৫ বলে তিনটি চারে ২৮ রান।

টপঅর্ডারের তিন ব্যাটসম্যান ইমরুল কায়েস, তামিম ইকবাল আর মুশফিকুর রহিমের বিদায়ের পর ব্যাটিংয়ে ছিলেন লিটন দাস আর মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। ইনিংসের ৪৩তম ওভারে লিটনকে ফিরিয়ে দেন গ্রায়েম ক্রেমার। ২২ বলে ১৭ রান করে ফেরেন লিটন। পরের ওভারে সাব্বির রহমান (১ রান) আর নাসির হোসেনকে (০ রান) ফিরিয়ে দেন লুক জঙ্গো।

দলীয় ৪৮তম ওভারে পানিয়াঙ্গারার করা শেষ বলে বোল্ড হয়ে ১১ বলে তিনটি চারে ১৬ রান করে ফেরেন টাইগারদের দলপতি মাশরাফি। আর ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১৪তম অর্ধশতক করে ৪০ বলে ৫২ রানের ইনিংস খেলে শেষ ওভারে রান আউট হন মাহামুদুল্লাহ রিয়াদ। তার মারমুখি ইনিংসে ছিল ৫টি চার আর একটি ছক্কা। একই ওভারের শেষ বলে রান আউট হন মুস্তাফিজুর রহমান।

বাংলাদেশের ছুঁড়ে দেওয়া ২৭৭ রানের জবাবে ব্যাটিং করতে নেমে প্রথম ওভারেই মুস্তাফিজের বল বুঝতে না পেরে সরাসরি বোল্ড হন চামু চিবাবা। কাটার মাস্টার খ্যাত মুস্তাফিজুর রহমানের দ্বিতীয় শিকারে সাজঘরে ফেরেন আরেক ওপেনার রেগিস চাকাভা। নাসির হোসেনের তালুবন্দি হয়ে আউট হওয়ার আগে ১৭ রান করেন চাকাভা।

পরের উইকেটটি তুলে নেন নাসির হোসেন। দুই ওপেনারকে মুস্তাফিজ ফিরিয়ে দেওয়ার পর তৃতীয় উইকেট তুলে নেন নাসির। আরভিনকে এলবির ফাঁদে ফেলেন তিনি। বিদায়ের আগে আরভিনের ব্যাট থেকে আসে ২১ রান।

দলীয় ৪৭ রানের মাথায় দুই ওপেনার আর ক্রেইগ আরভিনকে হারিয়ে ধুঁকতে থাকা সফরকারী জিম্বাবুয়ের ইনিংস মেরামত করতে থাকেন এলটন চিগুম্বুরা এবং শেন উইলিয়ামস। টাইগার দলপতি সাব্বির রহমানকে আক্রমণে আনলে অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দেন সাব্বির। ৪৫ রান নিয়ে ব্যাট করতে থাকা জিম্বাবুয়ের দলপতি এলটন চিগুম্বুরাকে বোল্ড করেন তিনি। আউট হওয়ার আগে উইলিয়ামসকে নিয়ে ৮০ রানের জুটি গড়েন চিগুম্বুরা। তার ৪৭ বলের ইনিংসে ছিল ৬টি চারের মার।

ইনিংসের ৩৬তম ওভারে আল আমিনের অসাধারণ এক ডেলিভারিতে নাসির হোসেনের তালবন্দি হয়ে ফেরেন ৩২ রান করা ম্যালকম ওয়ালার। আউট হওয়ার আগে উইলিয়ামসের সঙ্গে ৫৯ রানের জুটি গড়েন তিনি। শেন উইলিয়ামসের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ২৪তম হাফ সেঞ্চুরিতে এগুচ্ছিল জিম্বাবুয়ে। অধিনায়ক এলটন চিগুম্বুরার উইকেট হারানোর পর উইলিয়ামস দলের হাল ধরেন। তবে, ইনিংসের ৩৭তম ওভারে টাইগার দলপতি মাশরাফির বলে ৬৪ রান করে শর্ট কাভারে দাঁড়ানো সাব্বিরের তালুবন্দি হয়ে ফেরেন উইলিয়ামস। ৮৪ বলে সাজানো তার ইনিংসে ছিল ৫টি চার।

৪১তম ওভারে মুস্তাফিজের তৃতীয় শিকারে ফেরেন সিকান্দার রাজা। একই ওভারে বিদায় নেন লুক জঙ্গো। জ্বলে উঠা মুস্তাফিজ পরপর দুই বলে দুই উইকেট তুলে নিয়ে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলেছিলেন।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.