জিম্বাবুয়েকে ৫৮ রানে হারিয়ে সিরিজ বাংলাদেশের

নভেম্বর ৯, ২০১৫

22ঢাকা: প্রথম ম্যাচে ১৪৫ রানের বিশাল জয় দিয়ে সিরিজে এগিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ম্যাচে জিততে পারলেই সিরিজ নিশ্চিত। দেশের মাটিতে টানা ৫টি সিরিজ জয়ের বিরল কৃতিত্বও গড়ে ফেলবে মাশরাফি বিন মর্তুজারা। সে লক্ষ্যে খেলতে নেমে মোটেও বিপদে পড়েনি বাংলাদেশ শিবির। বরং, দাপটের সঙ্গেই জিম্বাবুয়েকে ৫৮ রানে হারিয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে এক ম্যাচ হাতে রেখেই নিজেদের করে নিলো টাইগার বাহিনী।

বাংলাদেশের করা ২৪১ রানের জবাবে মুস্তাফিজ, আল আমিন আর মাশরাফিদের দুর্দান্ত বোলিংয়ের সামনে ১৮৩ রানেই অলআউট হয়ে গেলো এলটন চিগুম্বুরারা। ন্যুনতম প্রতিরোধও গড়তে পারেনি তারা। প্রথম ম্যাচের চেয়ে পরাজয়ের ব্যবধান কম হলেও বাংলাদেশের জয়ের পথে সেটা কোন বাধাই হয়ে দাঁড়াতে পারেনি।

গত বছর নভেম্বর-ডিসেম্বরে এই জিম্বাবুয়েকে ৫-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করে ঘরের মাঠে অপরাজেয় যাত্রা শুরু মাশরাফি বাহিনীর। সে থেকে এ পর্যন্ত ঘরের মাঠে টানা ৫টি সিরিজ জয় করলো বাংলাদেশ। গত বছর শেষ দিকে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ জয় দিয়ে শুরু। এরপর বিশ্বকাপের পরে পাকিস্তানকে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ, ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জয়ের পর পঞ্চম সিরিজে এসে সেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১ ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জিতে নিল মাশরাফি বাহিনী।

প্রথম ম্যাচে বড় ব্যবধানে হার। দ্বিতীয় ম্যাচে জিততে না পারলে সিরিজ হাতছাড়া হয়ে যাবে জিম্বাবুয়ের। যে কারণে টস জিতে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে বাংলাদেশকে ২৪১ রানে বেধে ফেলা। এরপর ব্যাট করতে নেমেও শুরুতে বেশ দৃঢ়তার পরিচয় দিলো জিম্বাবুয়ের দুই ওপেনার। রেগিস চাকাভা এবং চামু চিভাবা মিলে ২২ রানের জুটি গড়ে ফেলেন। মুস্তাফিজ কিংবা মাশরাফিকে উইকেট না দিয়ে ভালোই ব্যাট করছিলেন এরা দু’জন।

তবে ইনিংসের পঞ্চম ওভারেই আরাফাত সানিকে বোলিংয়ে নিয়ে আসেন মাশরাফি এবং বোলিং করতে এসে ওভারের তৃতীয় বলেই রেগিস চাকাভার উইকেট তুলে নেন আরাফাত। দলীয় ২২ রানে পড়লো প্রথম উইকেট। চিভাবার সঙ্গে জুটি বাধতে মাঠে নামেন আরভিন।

কিন্তু মাশরাফি যখন স্বমুর্তিতে আবির্ভূত হন, তখন আর কারও করার কিছু থাকে না। থাকলো না চিভাবারও। ৬ষ্ঠ ওভারের প্রথম বলেই মাশরাফির ইনসুইঙ্গার বলটিকে কাট করতে গিয়ে নিজেই স্ট্যাম্পে ঠেলে দেন চিভাবা। ৯ বলে ১৪ রান করা জিম্বাবুয়ের এই ওপেনারও ফিরে গেলেন। ২৩ রানে পড়ল দ্বিতীয় উইকেট। জিম্বাবুয়েও দারুন বিপদে।

প্রথম ওয়ানডেতে দারুন বোলিং করার পরও উইকেটের দেখা পাননি তরুন সেনশেসন মুস্তাফিজুর রহমান। তাকে উইকেট না দেয়ার পন করেই যেন বাংলাদেশে এসেছিল জিম্বাবুয়ে। দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও মুস্তাফিজের স্লোয়ার-কাটাওে দিশেহারা জিম্বাবুয়ে ব্যাটসম্যানরা। কিন্তু উইকেটটাই পাচ্ছিলেন না মুস্তাফিজ।

অবশেষে উইকেট খরা কাটলো সাতক্ষীরা এক্সপ্রেসের। ৯ম ওভারের (মুস্তাফিজের চতুর্থ ওভার) শেষ বলে এসে শন উইলিয়ামস ডিফেন্স করার চেষ্টা করেন। মুস্তাফিজের অফ কাটারটা বুঝতেই পারেননি উইলিয়ামস। তার ব্যাট ছুঁয়ে যখন বলটা শর্ট মিডউইকেটে ভেসে আসলো তখন ঝাঁপিয়ে পড়ে ক্যাচটা লূফে নিলেন নাসির হোসেন। ১৭ বলে ১৪ রান করে ফিরে গেলেন উইলিয়ামস। ৪৫ রানে পড়ে তৃতীয় উইকেট।

শন উইলিয়ামস আউট হয়ে যাওয়ার পর ক্রেইগ আরভিনের সঙ্গে জুটি বাধেন এলটন চিগুম্বুরা। দু’জন মিলে ৩৩ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশের সামনে হুমকি হয়ে দেখা দিচ্ছিল। তবে, দারুন এক ফিল্ডিং নৈপুন্যে এ জুটি ভাঙ্গেন লিটন দাস। দলীয় রান যখন ৭৮, তখন একটি শট রান নিতে গিয়ে লিটন কুমার দাসের সরাসরি থ্রোতে রান আউট হয়ে যান ক্রেইগ আরভিন। ৪৪ বলে ২৬ রান করেন তিনি।

এরপর চিগুম্বুরার সাথে জুটি বাধেন সিকান্দার রাজা। এই জুটিই সবচেয়ে বিপজ্জনক হয়ে ওঠে বাংলাদেশের সামনে। ৭৩ রানের জুটি গড়েন তারা দু’জন। শেষ পর্যন্ত দলীয় রান যখন ১৫১, তখন আল আমিন ইন অ্যাকশন। তার বাউন্সারে কুপোকাত হয়ে যান রাজা। ক্যাচ তুলে দেন মিড অনে। একেবারে জায়গায় দাঁড়িয়ে ক্যাচটা লুফে নেন ইমরুল কায়েস।

রাজা-চিগুম্বুরা জুটি ভাঙার পর স্বস্তি ফিরে আসে বাংলাদেশ শিবিরে। কারণ, বাংলাদেশের ২৪১ রানকে বেশ সহজ টার্গেটে পরিণত করছিল তারা দু’জন। শেষ পর্যন্ত আল আমিনই ভাঙলেন এই জুটি।

এরপর আবারও আল আমিন ইন অ্যাকশন। পরের ওভারে বল করতে এসেই তুলে নিলেন বিপজ্জনক হয়ে ওঠা আরেক জিম্বাবুইয়ান ব্যাটসম্যান এলটন চিগুম্বুরার উইকেট। ৩৬তম ওভারের ৫ম বলে আল আমিনের স্লোয়ার লেগ কাটার খেলতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন থার্ড ম্যান অঞ্চলে। অনেক দুর দৌড়ে এসে ইমরুল কায়েস লুফে নেন সেই দুর্দান্ত ক্যাচটি। ১৫৬ রানে পড়ল ৬ষ্ঠ উইকেট। ৭৭ বল খেলে ৪৭ রান করে ফিরলেন চিগুম্বুরা।

চিগুম্বুরা-রাজা জুটি প্যাভিলিয়নে ফেরার পরই মূলত শেষ হয়ে যায় জিম্বাবুয়ের জয়ের স্বপ্ন। বাকিরা শুধুই ব্যবধান বাড়ানোর কাজটি করবেন। তবে এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশী বোলারদের সামনে বেশিক্ষণ টিকতে পারেনি জিম্বাবুয়ের বাকি ব্যাটসম্যানরা। ৮ রান করা ম্যালকম ওয়ালারকে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন স্পিনার নাসির হোসেন। ১৭৫ রানে পড়ে সপ্তম উইকেট।

পরের ওভারেই মুস্তাফিজ ইন অ্যাকশন। এক ওভারেই দু’জন ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে দেন তিনি। ৪৩তম ওভারের প্রথম বলেই লুক জংউইকে বোল্ড করে ফেরান মুস্তাফিজ। তিন বল বিরতি দিয়ে ওভারের ৫ম বলেই তিনাশে পানিয়াঙ্গারাকে মাশরাফির হাতে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন মুস্তাফিজ।

৪৪তম ওভারের দ্বিতীয় বলে গিয়ে নাসিরের বলে স্ট্যাম্পিং হয়ে গেলেন মুজরাবানি। অথ্যাৎ ১৮৩ রানেই অলআউট জিম্বাবুয়ে এবং ৫৮ রানের দারুন এক জয় পেয়ে গেলো বাংলাদেশ। ৩ উইকেট নিলেন মুস্তাফিজুর রহমান। ২টি করে উইকেট নিলেন আল আমিন এবং নাসির হোসেন। একটি করে উইকেট নেন মাশরাফি এবং আরাফাত সানি।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.