পোশাক রফতানিতে ৬ হাজার কোটি টাকার পেমেন্ট জটিলতা

নভেম্বর ৮, ২০১৫

13ঢাকা: প্রতি বছর দেশের প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা মূল্যের রফতানিকৃত পোশাকের পেমেন্ট নিয়ে জটিলতায় পড়তে হয় বলে জানিয়েছে বাংলাদেশের পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ।

বিজিএমইএ সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশের পোশাক শিল্পের মাত্র ২৫ শতাংশ রফতানি আদেশ ক্রেতার কাছ থেকে সরাসরি পাওয়া গেলেও,  বাকি ৭৫ শতাংশ নির্ভর করে তৃতীয় পক্ষের ওপর। এ সুযোগে অনেক সময় অর্ডারকৃত পণ্য সময়মতো সরবরাহ করার পরও ক্রেতা বা মধ্যস্বত্ত্বভোগীরা পেমেন্ট দেওয়া নিয়ে জটিলতা তৈরি করেন। তখন এক দেশ থেকে আরেক দেশে আইনি লড়াই লড়তে হয় ব্যবসায়ীদের প্রাপ্য অর্থ আদায়ের জন্য। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অনেক ব্যবসায়ী তাদের পাওনা আদায় করতে ব্যর্থ হন।

সম্প্রতি ভারতের লিলিপুট কোম্পানি বাংলাদেশের ২৭টি গার্মেন্ট কারখানায় ১০০ কোটি টাকা মূল্যের পণ্যের অর্ডার দেয়। সময়তো কারখানাগুলো সেই পণ্য সরবরাহ করলেও তারা মূল্য দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এ নিয়ে দুই দেশের প্রশাসন পর্যায়ে আলোচনা চলছে বলেও বিজিএমইএ সূত্রে জানা যায়।

অন্যদিকে স্পেনের প্রথম সারির এক ক্রেতার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানায় বিজিএমইএ সূত্র। স্পেনের ক্রেতা ৩০ লাখ ডলার মূল্যের পণ্যের অর্ডার দেয় বাংলাদেশের একটি কারখানাকে। ঠিক সময়তো পণ্য সরবরাহ করলেও ক্রেতা পণ্যের মূল্য পরিশোধে অস্বীকৃতি জানায়। এ ব্যাপারে স্পেনের আদালতে মামলা দায়েরের বিষয়ে অক্টোবর মাসে বাংলাদেশের ওই ‍কারখানা মালিকের প্রতিনিধি স্পেনের আদালতে গিয়ে আইনি পক্রিয়া শুরু করার বিষয়ে স্থানীয় আইনজীবীর সঙ্গে আলোচনা করে এসেছেন বলে জানা গেছে।

পেমেন্ট জটিলতা দূরীকরণে ‘ক্লেইম সেটেলমেন্ট ডিপার্টমেন্ট’ থাকা আবশ্যক বলে মনে করছেন শ্রম আইন বিশেষজ্ঞ অ্যাডভোকেট জাফরুল হাসান শরীফ। তিনি   বলেন, পোশাক শিল্পের রফতানিকৃত পণ্যের পেমেন্টের বিষয়ে আমরা প্রায়ই অভিযোগ পাই। এ ধরনের সমস্যা সমাধানে সরকার ও বিজিএমইএ-এর ‘ক্লেইম সেটেলমেন্ট ডিপার্টমেন্ট’ থাকা জরুরি। কোনো ক্রেতা যদি পণ্যের মূল পরিশোধ না করে তাহলে তাকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে অর্থ পরিশোধের বিষয়ে চাপ দেওয়া যাবে।

ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন বাংলাদেশ রফতানিকারক সমিতির (ইএবি) সভাপতি ও বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী। তিনি  বলেন, আমাদের দেশের পোশাক শিল্পের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হলো মার্কেটিং। আমাদের ৭৫ শতাংশ ব্যবসায়ী এখনো তৃতীয় পক্ষের ওপর নির্ভর করেন অর্ডার পাওয়ার ক্ষেত্রে। অনেক সময় ক্রেতা ও তৃতীয়পক্ষ পেমেন্ট দেওয়ার বিষয়ে জটিলতা তৈরি করে। কোনো কোনো ইস্যুতে ব্যবসায়ীরা পণ্যের মূল্য পর্যন্ত পান না।

পেমেন্ট নিয়ে জটিলতা সৃষ্টিকারী ক্রেতাদের কালো তালিকাভুক্ত করা সম্ভব হলে এই সমস্যা অনেকটা কমে আসতে পারে বলে মনে করছেন সলাম মুর্শেদী।

পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়নের বড় ক্রেতা দেশগুলোতে ওয়্যার হাউজ করা হলে জটিলতা আরো কমে আসবে বলে মনে করছেন বিজিএমইএ’র এই সাবেক সভাপতি। এর ফলে ক্রেতাদের কাছে পণ্য সরবরাহ আরো সহজতর হয়ে আসবে বলে মনে করেন তিনি।

নভেম্বর ০৮, ২০১

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.