বিজেপি-র আক্রমণের মুখে শাহরুখ

নভেম্বর ৪, ২০১৫

08নয়া দিল্লি: ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে সর্বস্তরে। শোনা যাচ্ছে প্রতিবাদের নতুন-নতুন স্বর। এই পরিস্থিতিতে আজ লেখক-শিল্পী-শিক্ষাবিদদের বিরুদ্ধে সুর চড়াতে শুরু করলেন মোদি সরকারের মন্ত্রী ও বিজেপির নেতারা। আক্রমণ এসেছে সঙ্ঘ পরিবারের শাখা সংগঠনের থেকেও। শাহরুখ খান অসহিষ্ণুতা নিয়ে মুখ খোলায় বিজেপি নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় তাকে ‘দেশদ্রোহী’ বলেছেন। তার দাবি, ভারতে থাকলেও শাহরুখের মন রয়েছে পাকিস্তানে। আর বলিউডের নায়ককে ‘পাকিস্তানি দালাল’ আখ্যা দিয়ে সে দেশে পাঠানোর দাবি তুলেছেন উগ্রবাদী সাধ্বী প্রাচী। অসহিষ্ণুতা নিয়ে পাল্টা তোপ দাগতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের একে একে মাঠে নামানোরও সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে মোদি শিবির।

প্রধানমন্ত্রী তীক্ষ্ণ ভাষায় কংগ্রেসকে আক্রমণ করার পরেই মঙ্গলবার তোপ দাগেন সংসদীয় মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডু। তার দাবি, নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে যে উন্নয়ন শুরু হয়েছে, তা সহ্য করতে না পেরেই পরিকল্পিত ভাবে সরকার বিরোধী সুর চড়ানো হচ্ছে। যা আন্তর্জাতিক স্তরেও দেশের সম্মানকে নষ্ট করছে। বিজেপি সূত্রের খবর, প্রধানমন্ত্রী মুখ খোলার পর এ বার বিরোধী সুরকে ঠেকাতে একে একে আসরে নামবেন অন্য মন্ত্রীরাও। অরুণ জেটলি বা বেঙ্কাইয়া নায়ডু যা শুরুও করে দিয়েছেন। শিখ হত্যায় কংগ্রেসকে জড়িয়ে আক্রমণ করেছিলেন মোদি। সেই সূত্র ধরেই বেঙ্কাইয়া বলেন, ‘‘এমন ভাব করা হচ্ছে যেন গত দেড় বছরে এ দেশ থেকে সহিষ্ণুতা উবে গিয়েছে। এখন যে কয়েকটি দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটছে, সেই ধাঁচের ঘটনা কি কংগ্রেস আমলে হয়নি?’’ তার অভিযোগ, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রিয়তা সহ্য করতে না পেরে বিরোধীরা ওই ঘটনাগুলিকে বড় করে দেখাচ্ছে।’’

দাদরির ঘটনা আর তার জেরে দেশ জুড়ে গো-মাংস বিতর্ক কিংবা কর্নাটকে বিশিষ্ট সাহিত্যিক এম এম কালবুর্গীর হত্যা নিয়ে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগছে বিরোধী দলগুলি। সুর চড়াচ্ছেন বিশিষ্টজনেরা। তবে তা সত্ত্বেও সব দায় কেন্দ্রের ঘাড়ে ঠেলে দেওয়া হয়েছে বলে যুক্তি দিচ্ছেন বিজেপি নেতৃত্ব। বেঙ্কাইয়া বলেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায় সমাজবাদী পার্টির সরকারের। আর কর্নাটকে ক্ষমতায় কংগ্রেস। কিন্তু ওই দু’টি রাজ্যেই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনাগুলির গোটা দায় ঠেলে দেওয়া হচ্ছে কেন্দ্রের ঘাড়ে। নায়ডুর যুক্তি, এখন কেন্দ্র যদি আইন-শৃঙ্খলার অবনতির প্রশ্নে ওই দুই রাজ্যে হস্তক্ষেপ করতে যায়, তখন রাজ্যের সাংবিধানিক অধিকারে হস্তক্ষেপের অভিযোগ আনা হবে। তখন সুর চড়াবেন বিশিষ্টজনেরা।

দেশে অসহিষ্ণুতার বাতাবরণের প্রতিবাদে জাতীয় পুরস্কার ফিরিয়ে প্রথমে প্রতিবাদের পথ দেখিয়েছিলেন সাহিত্যিকেরা। তার পর সেই পথে পা বাড়ান চিত্র-পরিচালক, শিক্ষাবিদ এমনকী শিল্পমহলও। গত কাল অসহিষ্ণুতার প্রশ্নে মুখ খোলেন শাহরুখ খানও। জানান, প্রতিবাদ জানাতে প্রয়োজনে পদ্মশ্রী ফেরাতেও রাজি আছেন তিনি। মঙ্গলবার শাহরুখের ওই মন্তব্যের প্রতিবাদে সরব হয়েছে বিজেপি। পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপি নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় শাহরুখকে দেশদ্রোহী আখ্যা দিয়ে মন্তব্য করেন, ‘‘১৯৯৩ সালে যখন মুম্বাই বিস্ফোরণ হয় কিংবা ২০০৮ সালে জঙ্গিরা মুম্বাইতে হামলা চালিয়েছিল তখন শাহরুখ কোথায় ছিলেন?’’ একই সুরে প্রশ্ন তুলেছেন বেঙ্কাইয়াও। তার প্রশ্ন, ‘‘যখন একের পর এক দুর্নীতিতে দেশের টাকা লুঠ হচ্ছিল, তসলিমা নাসরিনের উপর মৌলবাদীরা হামলা চালিয়েছিল, এ আর রহমানের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল, কাশ্মীরি পণ্ডিতরা গণহত্যার শিকার হয়েছিলেন-তখন কিন্তু এই বিশিষ্টজনেরা মৌনব্রত নিয়ে ছিলেন।’’ তার প্রশ্ন, ‘‘বিশিষ্টজনদের একটি বড় অংশ জরুরি অবস্থা বা শিখ গণহত্যার সময়ে চুপ ছিলেন। তখন সাহিত্যিকরা পুরস্কার ফিরিয়ে দিয়ে প্রতিবাদের পথে হাঁটেননি কেন?’’ শাহরুখকে যে ভাষায় নিশানা করেছেন বিজয়বর্গী, তার প্রতিবাদ জানিয়েছেন তৃণমূল নেতা ডেরেক ও ব্রায়েন। বিজেপি নেতার উদ্দেশে তার মন্তব্য, ‘‘এ দেশের সবাই খারাপ, আর আপনিই শুধু ভালো!’’ দেশ জুড়ে অসহিষ্ণুতার মধ্যে মোদি কেন নীরবতার পথ বেছে নিলেন, তা নিয়ে সরব হয়েছিল বিরোধীরা। তাদের যুক্তি ছিল, প্রধানমন্ত্রী নীরব থাকায় প্রশ্রয় পাচ্ছে মৌলবাদী শক্তিগুলি। পরে বিহারে নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে এ নিয়ে মুখ খোলেন প্রধানমন্ত্রী। আজ মোদির সেই প্রাথমিক নীরবতার ব্যাখ্যা দিয়ে বেঙ্কাইয়ার যুক্তি, ‘‘প্রতিটি ক্ষেত্রেই যদি প্রধানমন্ত্রী মুখ খুলতেন, তা হলে আইনশৃঙ্খলা দমনে সেই সব রাজ্যের ব্যর্থতার কথাই বারবার সামনে আসত। রাজনৈতিক ভাবে তা কি আদৌ কাম্য হতো?’’- ওয়েবসাইট

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.