শিক্ষকের প্রেমের ফাঁদে পড়ে জীবন দিলো মেডিক্যাল ছাত্রী

অক্টোবর ১৫, ২০১৫

14খুলনা মেডিক্যাল কলেজের (খুমেক) শেষ বর্ষের ছাত্রী আরমনি সুলতানা বিউটি আত্মহত্যা করেছে। সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করে মেয়েটি। কিন্তু কেন এই মেধাবী ছাত্রী আত্মহত্যা করল? এই মৃত্যুর পিছনে আসলে কি কারণ ছিলো? এসকল বিষয় নিয়ে বিস্তারিত এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দেশের প্রথম সারির একটি জাতীয় দৈনিক।প্রতিবেদন বলা হয়েছে, প্রেমিকের বিয়ের সংবাদ সহ্য করতে না পেরে খুলনা মেডিক্যাল কলেজের (খুমেক) শেষ বর্ষের ছাত্রী আরমনি সুলতানা বিউটি আত্মহত্যা করেছে। গতকাল দুপুরে কলেজের সুফিয়া কামাল ছাত্রী হলের নিজ কক্ষে সে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করে। এদিকে খবর পেয়ে চট্টগ্রাম থেকে নিহতের ভাই লাশ গ্রহণের জন্য খুলনার উদ্দেশে রওনা হয়েছে।

বিউটির সহপাঠীরা জানায়, দীর্ঘদিন ধরে মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগের এক সহকারী রেজিস্ট্রারের সঙ্গে বিউটির প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এমনকি সহপাঠীরা জানতো এই প্রেমিক ডাক্তারের সঙ্গে তার বিয়ে হবে। কিন্তু ওই ডাক্তারের অপর এক ডাক্তারের সঙ্গেও প্রেমের সম্পর্ক ছিল। একই সময় দুই প্রেমিকার সঙ্গে যে ডাক্তারের সম্পর্ক ছিল তা বিউটি জানতো না। সম্প্রতি ওই প্রেমিকা ডাক্তারের সঙ্গে বিয়ে হয়। এরপর থেকে বিউটি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। সুফিয়া কামাল ছাত্রী হলের রুমমেট ও সহপাঠীদের বিউটি সব সময় এড়িয়ে চলতো। প্রেমিক ডাক্তার হিন্দুধর্মাবলম্বী হওয়ার কারণে সে কারোর কাছে বিষয়টি বলতো না। এ ঘটনার পর সহপাঠীদের সঙ্গে আড্ডা ও মেলামেশা বন্ধ করে দেয়।

সহপাঠীরা আরও জানায়, গতকাল দুপুরে অন্যরা যখন ক্লাসে ও বিভিন্ন কাজে রুম থেকে চলে যায়। এই ফাঁকে বিউটি নিজ কক্ষের সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করে। ক্লাস শেষে এসে অনেকক্ষণ দরজা ধাক্কাধাক্কি করে না পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ দুপুর ১টা ২০ মিনিটে হলে এসে বিউটির কক্ষের দরজা ভেঙে ভেতরে ঝুলন্ত অবস্থায় বিউটিকে দেখতে পায়। লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে। নিহত আরমনি সুলতানা বিউটি চট্টগ্রাম জেলার আনোয়ারা উপজেলার স্বন্দ্বীপের মো. ইদ্রীস আলী মিয়ার মেয়ে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খুমেকের সুফিয়া কামাল হলের মেডিক্যাল শেষ বর্ষের এক ছাত্রী অভিযোগ করে বলেন, ব্যবহারিক পরীক্ষায় নম্বর দেয়ার ফাঁদ পেতে অনেক ছাত্রীর সম্ভ্রম কেড়ে নেয় কিছু লম্পট শিক্ষক। আজ আপনাদের সঙ্গে কথা বলছি এটা জানতে পারলেও আমাকে পড়াশুনার শেষ প্রান্তে এসে খেসারত দিতে হবে। সহজ-সরল ও মিশুক বিউটির জীবন গেলো শিক্ষকের প্রেমের ফাঁদে পড়ে। ওই শিক্ষক একই সময় একাধিক ছাত্রীর সঙ্গে প্রাকটিক্যাল নম্বরের ফাঁদ পেতে প্রেমের নামে সব কেড়ে নিয়েছে। মেডিক্যালে লেখাপড়ার শেষ প্রান্তে এসে যখন ডাক্তার হয়ে বের হবে ঠিক তখনই পরিবারের স্বপ্ন ধূলিসাৎ করে লাশ হয়ে বের হচ্ছে ছাত্রীরা। এসব শিক্ষক নামের যারা কলঙ্ক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।

সুফিয়া কামাল ছাত্রী হলের সহকারী হল সুপার তালজিলা রহমান বলেন, দুপুরে আমরা ক্লাসে ছিলাম। সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে শুনতে পাই বিউটিকে আইসিইউতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে গিয়ে জানতে পারি সে মারা গেছে।

খুমেকে কর্তব্যরত পুলিশের এসআই আসাদ জানান, বিউটির কক্ষের দরজা বন্ধ দেখে সহপাঠীরা ডাকাডাকি করার পরও দরজা না খোলায় তারা পুলিশকে খবর দেয়। দুপুর ১টা ২০ মিনিটে পুলিশ দরজা ভেঙে ভেতরে ঝুলন্ত লাশ দেখতে পায়। তবে কি কারণে ওই ছাত্রী আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে সে বিষয়ে কিছু জানাতে পারেনি।

ঘটনার তদন্ত কর্মকর্তা সোনাডাঙ্গা মডেল থানার এসআই সরদার ইব্রাহিম হোসেন সোহেল বলেন, খুলনা মেডিক্যাল কলেজের সুফিয়া কামাল ছাত্রী হলের চতুর্থ তলাস্থ বিউটির কক্ষ থেকে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও ডায়েরি উদ্ধার করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত তা দেখা হয়নি। মোবাইল ফোন ও ডায়েরি পর্যালোচনা করলে হয়তোবা আত্মহত্যার কারণ উদঘাটন করা সম্ভব হবে। এ ছাড়া মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ কোন অভিযোগ করেনি।

 

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.