পুলিশের অনুসন্ধানে ধরা পড়লো অভিনব অপহরণকারী
অক্টোবর ৮, ২০১৫ রাজধানীর উপকণ্ঠ সাভার ও মানিকগঞ্জে এক শ্রেণির প্রতারকচক্রের সন্ধান পাওয়া গেছে। এ প্রতারকচক্র অভিনব কায়দায় তাদের লক্ষ্যকৃত ব্যক্তিকে অপহরণের পর তার কণ্ঠ রেকর্ড করে। এরপর অপহৃত ব্যক্তির হাত ও পা বেঁধে শরীরের সাথে পাথর বেঁধে তাকে ফেলে দেয়া হয় নদীতে। এদিকে অপহৃত ব্যক্তির কণ্ঠের রেকর্ডটি শুনিয়ে তার পরিবারের কাছ থেকে আদায় করা হয় মুক্তিপণ। আর এমন ঘটনা বেরিয়ে এসেছে স্থানীয় পুলিশের অনুসন্ধানে।
সাভারের আরাপাড়া এলাকার বাসিন্দা মুনসুর আলী মুন্না। লেখা-পড়ার পাশাপাশি সাইনবোর্ড লেখার কাজ করতেন তিনি।
গত ২৫ আগস্ট রাত ৮টায় কাজের অর্ডার দিবে বলে মুঠো ফোনে ডেকে নেয়া হয় তাকে। এরপর থেকেই তার কোনো খবর পাওয়া যায়নি বলে জানান তার মা।
মুন্নার মা জাহানারা বেগম বলেন, আমি আমার ছেলেকে বলেছি এখন রাত ৮টা বাজে তুই এখন যাস না। কিন্তু সে আমার কথা না শুনেই চলে যায়। সে যাবার সময় বলে যায় আমি তাড়াতাড়ি চলে আসবো। আমি রাত ৯টার পর থেকে গেটের কাছে যাই আর আসি। কিন্তু আমার ছেলে আর আসে না। পরে আমি তাকে অনেক ফোন করেছি কিন্তু তার ফোন বন্ধ।
কয়েকদিন পর মুন্নাকে অপহরণ করেছে উল্লেখ করে অপহরণকারীরা তার পরিবারের কাছে ফোন করে মুক্তিপণ দাবি করে। আর এ অভিযোগ মুন্নার মায়ের।
তিনি বলেন, অপহরণকারীরা আমার কাছে বিকাশ নম্বরে তিন লাখ টাকা চায়। আমি যদি তাদেরকে টাকা দেই তাহলে তারা আমার ছেলেকে ছেড়ে দিবে। আমি বলেছি আমি টাকা দিবো কিন্তু আমার ছেলেকে যাতে কিছু না করে।
মুন্নাকে অপহরণের পর সাভার থানায় প্রথমে জিডি ও পরে মামলা করেন তার ভাই মঞ্জু। কিন্তু এখন পর্যন্ত মুন্নার কোনো খবরতো দূরের কথা, লাশটিও পায়নি তার স্বজনরা।
মুন্নার ভাই মো. মঞ্জু বলেন, গত ২৬ তারিখ আমি থানায় মামলা করেছি। মামলা করার পর সেখান থেকে আমি বাসায় আসি। পরে পুলিশ বলেছে আমার ভাই অপহরণ হয়ে গেছে।
মুন্না অপহরণের ঘটনায় সাভার থানা পুলিশ নড়েচড়ে বসে। তখন পুলিশের অভিযানে অপহরণকারী চক্রের ৬ সদস্য ধরা পড়ে বলে জানান, সাভারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজিম।
তিনি বলেন, অপহরণকারীরা কাউকে অপহরণ করার পর তাদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে জমাট কংক্রিট বেঁধে সাভারের বংশী নদীতে ফেলে হত্যা করে থাকে। অপহরণকারীরা যখন কোনো টার্গেটকে তাদের হাতে নেয় তখন তারা তাকে মেরে বা ভয় দেখিয়ে তার কাছ থেকে কথা রেকর্ড করে। রেকর্ড সংগ্রহ করার পরে তার হাত ও পা বেঁধে এবং শরীরের সাথে ভারি কোনো কিছু বেঁধে তাকে জীবন্ত অবস্থায় পানিতে ফেলে দেয়।
অপহরণকারীদের গ্রেফতারের পর জানা যায়, চক্রটি মুন্নার আগে মানিকগঞ্জের শিবালয় থানার শিমুলিয়া গ্রামের পরশালির ছেলে মনির হোসেনকে অপহরণ করে। অপহরণকারীদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী পুলিশের একটি টিম বংশি নদী থেকে শরীরের সাথে কংক্রিট বাঁধা অব্স্থায় মনিরের লাশ উদ্ধার করে। শিমুলিয়া গ্রামে যাবার পর দেখা গেছে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্য। সেখানে মনিরের নিজ গ্রাম ছাড়াও আশপাশের গ্রাম থেকে শতশত মানুষ এসে ভিড় জমিয়েছেন তার বাড়িতে। বিলাপ করছেন মনিরের স্বজনরা।