ভারত ফেরত মানুষদের হয়রানি বিজিবি-পুলিশের

সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৫

bijipiঢাকা: পাসপোর্ট যাত্রীদের পথে পথে হয়রানি করছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর কিছু অসৎ সদস্য। তল্লাশির নামে চালাচ্ছে লাগামহীন স্বেচ্ছাচার। অযথাই লাগেজ আটকে আদায় করছে অতিরিক্ত অর্থ। ঈদকে সামনে রেখে এমন অপকর্ম আরো বেড়েছে।
গত কয়েক দিনে ভারত থেকে আসা কয়েকজন যাত্রী ফোন করে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
তারা জানান, ভারতে গিয়ে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ, পড়াশোনা, চিকিৎসাসহ নানা কারণে দেশটিতে বাংলাদেশিদের ভ্রমণ বেড়ে গেছে বহুগুণ। তাই চেকপোস্টে বাংলাদেশ ও ভারত উভয় অংশেই ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস-এ পাসপোর্ট যাত্রীদের ভিড় লেগেই থাকে।

কিন্তু ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস-এর জন্য উভয় সীমান্তেই কমপক্ষে দুইঘণ্টা করে চারঘণ্টা সময় ব্যয় হয়ে যায়। আছে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়ায় ফেরি পারাপারের ভোগান্তি। ‍তারওপর চেকপোস্টে কাস্টমস চেকিংয়ের পর শুরু হয় বিজিবি’র চেকিং।
কোনো নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে পেট্রাপোল ঢোকার মুখে নো-ম্যানস ল্যান্ডে গিয়ে যাত্রীদের ব্যাগে তল্লাশি চালায় বিজিবি সদস্যরা। এ তল্লাশির সময় ব্যাগের কাপড় রাস্তায় ফেলে দেওয়া একপ্রকার নিয়মেই দাঁড়িয়ে গেছে যেনো।  ভারত থেকে দেশে ফেরার পথে বেনাপোল সীমান্তে চেকিংয়ের পর ঢাকা-খুলনামুখী যাত্রীদের আরও ২/৩ দফা চেকিংয়ের মুখে পড়তে হয়।
বেনাপোল থেকে তিন কিলোমিটার দূরেই আমড়াখালি বিজিবি ফাঁড়ি। সেখানে ঢাকা-খুলনা-বরিশাল-ফরিদপুরমুখী বাসে ওলট-পালট করে তল্লাশি চালানো হয় প্রায় প্রত্যেক যাত্রীর বাক্স-পোটলায়। সময় গড়ালেও শেষ হয় না তল্লাশি। কিন্তু এ নিয়ে কথা বলতে গেলে পড়তে হয় হয়রানির মুখে।
কলকাতা-দিল্লি সফর করে ফেরার সময়ে অনেকেই পরিবারের জন্য কিছু না কিছু কিনে এনে থাকেন। প্রায় সবার পছন্দের শীর্ষ তালিকায় থাকে মা-বোন-স্ত্রীর জন্য শাড়ী। এই ৩/৪টি শাড়ির জন্য পাসপোর্ট যাত্রীদের গুণতে হয় জরিমানা।

অসংখ্য প্রশ্নবানে বিদ্ধ হওয়ার পর মনগড়া একটা দাম ধরে শাড়ি সিজ করে যাত্রীদের হাতে স্লিপ ধরিয়ে দিয়ে থাকেন বিজিবি সদস্যরা। পরামর্শ দেন শুল্ক পরিশোধ করে পণ্য ছাড়িয়ে নেওয়ার।

সপ্তাহ খানেক আগে এমনই এক ঘটনার বর্ণনা দেন আমড়াখালি বিজিবি ফাঁড়িতে হয়রানির শিকার হওয়া এক যাত্রী।

সে দিনের ঘটনা স্মরণ করে  তিনি বলেন, বাস এসে থামল আমড়াখালিতে। দুইদেশের সরকারের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত সরাসরি ঢাকা-কলকাতা সৌহার্দ্য বাসের পেছনে আমাদের বাস। ২০ মিনিট পার হয়েছে সৌহার্দ্যের চেকিং। সব যাত্রীর ব্যাগ নামানো মাটিতে। শাড়ি-কাপড়-চোপড় সব ওলট-পালট। অনেক যাত্রীর শাড়ি-কাপড় সিজ করে স্লিপ ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

বিজিবি’র একজন কর্মকর্তা বলছেন, আপনারা তিনশ’ ডলার অর্থাৎ ২৪ হাজার টাকার পণ্য পরিবহন করতে পারেন। কিন্তু আপনাদের কাছে এর চেয়ে বেশি টাকার পণ্য রয়েছে। তাই শুল্ক দিতে হবে।
এ কথার প্রতিবাদ করে কয়েকজন যাত্রী বললেন, দশ হাজার টাকার বেশি পণ্য নেই। আপনারা কেন সিজ করছেন। এমন প্রশ্নের মুখে বিজিবির এক কর্মকর্তার সাফ জবাব, পরিমাণ দেখেই মনে হচ্ছে বেশি আছে।

কোন ওজর-আপত্তিতে কান দিলেন না ওই বিজিবি কর্মকর্তা।

একজন যাত্রী এই সিজ প্রক্রিয়ার ছবি তুলতে গিয়ে বিপদে পড়লেন। তাকে ধরে ফাঁড়ির ভেতর নিয়ে গেল বিজিবি। দূর থেকে দেখলাম তাকে প্রশ্নবাণে বিদ্ধ করা হচ্ছে। তবে তার কপালে কি ঘটেছে তা জানার সুযোগ হয়নি।চেকিং শেষে আমাদের বাস ছুটল যশোর অভিমুখে।
আমাদের বাসের একজন যাত্রী বললেন, না জানি সামনে আবার চেকিং-এ পড়তে হয় কিনা। তাহলে তো আরও সময় পার হয়ে যাবে। ঢাকায় ফিরতে রাত হয়ে যাবে।ঘরে ফিরতে ছিনতাইকারীর খপ্পরে পড়তে না হয়।
ওই যাত্রীই জানালেন, আমড়াখালীর পর যশোরের ঝিকরগাছা-গদখালী, মাগুরা এবং রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটেও সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ চেক করে।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.