সিরিয়ার যুদ্ধক্ষেত্রে মুখোমুখি হচ্ছে রাশিয়া ও আমেরিকা

সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৫

kkkkঅভিন্ন শত্রু আইএসের বিরুদ্ধে সিরিয়ায় লড়াইয়ে নেমেছে আমেরিকা ও রাশিয়া। কিন্তু দুই পরাশক্তির অবস্থান ভিন্ন। আমেরিকা সিরিয়ার আসাদ সরকারকে বৈধতা দিতে নারাজ। কিন্তু রাশিয়া বরাবরই আসাদ সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে আসছে। দেশটিতে রাশিয়ার নতুন করে অস্ত্র ও সেনা পাঠানোর বিষয়টি তাই ভাবিয়ে তুলেছে আমেরিকাকে। শুক্রবার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এ ব্যাপারে হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, সিরিয়ায় সামরিক উপদেষ্টা ও সরঞ্জাম পাঠানোর যে সিদ্ধান্ত রাশিয়া নিয়েছে, তা অনিবার্যভাবে ব্যর্থ হবে এবং এরই মধ্যে অচল হয়ে থাকা শান্তি প্রচেষ্টা ভ-ুুল করে দেবে।

তবে সেখানে রুশ উপস্থিতি আমেরিকার আইএসবিরোধী যুদ্ধে কোনো প্রভাব ফেলবে না বলেও মন্তব্য করেছেন ওবামা। অন্যদিকে শুক্রবার রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভও জানিয়ে দিয়েছেন, সিরিয়ায় অস্ত্র ও সেনা পাঠানো বন্ধ করবে না রাশিয়া। সামরিক বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, সিরিয়ার যুদ্ধক্ষেত্রই মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিতে পারে এই দুই সামরিক পরাশক্তিকে। সংবাদসূত্র : রয়টার্স, আল-জাজিরা আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা শুক্রবার নাইন ইলেভেনের ১৪তম বার্ষিকীর অনুষ্ঠানের বক্তৃতায় বলেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ায় রাশিয়ার সামরিক উপস্থিতি জোরদারের সিদ্ধান্ত দেশটির প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের প্রতি মস্কোর সমর্থন দ্বিগুণ প্রকাশিত হয়েছে।

রাশিয়া আসাদের প্রতি সমর্থন দ্বিগুণ করার যে কৌশল নিয়েছে, তা বিরাট ভুল বলে মন্তব্য করেন ওবামা। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমরা রাশিয়াকে জানাতে চাই, তারা যে কৌশল নিয়েছে তা ব্যর্থ হবে।’ আমেরিকান কর্মকর্তারা জানান, রাশিয়া সম্প্রতি সিরিয়ায় যুদ্ধ জাহাজ, সাঁজোয়া যান ও নৌ-সেনা পাঠিয়েছে। ওবামা বলেছেন, এ ঘটনায় বোঝা যাচ্ছে, আসাদ উদ্বিগ্ন যে, তার ক্ষমতা হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার পদক্ষেপ সিরিয়ায় আইএস জঙ্গিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে আমেরিকার মূল মিশনের ওপর প্রভাব ফেলবে না বলেই জানান ওবামা। তবে তিনি মনে করছেন, এটা রাজনৈতিক সমাধানে পেঁৗছানোর পথকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। আমেরিকার চেয়ে বেশি রাশিয়াই আইএস জঙ্গিদের হুমকির মুখে রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন ওবামা।তবে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ শুক্রবার জানান, আগে থেকেই তারা সিরিয়াকে অস্ত্র দিচ্ছেন এবং সেটি সবাইকে জানিয়েই। আর এটি অব্যাহত থাকবে।

আইএসবিরোধী লড়াইয়ে সিরিয়াকে সমর্থন দেয়ার জন্য আন্তর্জাতিক বিশ্বের প্রতি আহ্বানও জানান তিনি। রাজধানী মস্কোয় শুক্রবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপের সময় ল্যাভরভ বলেন, সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ নেতৃত্বাধীন সরকারকে অস্ত্র দেয়া অব্যাহত রাখবে রাশিয়া। একই সঙ্গে তিনি সিরিয়া ও ইরাকে তৎপর আইএস সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াইরত সশস্ত্র বাহিনীগুলোকেও সহযোগিতার জন্য আমেরিকা নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক জোটের প্রতি আহ্বান জানান। ল্যাভরভ এ সময় আমেরিকান সেনাবাহিনীর সঙ্গে সামরিক পর্যায়ের যোগাযোগ চালিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, এতে করে অপ্রত্যাশিত দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হবে। তিনি অভিযোগ করেন, আমেরিকার কারণে ন্যাটোর সঙ্গে গত বছর সামরিক পর্যায়ের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে রাশিয়ার। আর তাই তিনি নতুন প্রস্তাব দিয়ে বলেন, ‘আমরা চাই সেনারা তাদের পেশাগত ভাষায় কথাবার্তা বলুক। এটা তাদের বুঝতে সুবিধা হয় এবং এতে অনাকাঙ্ক্ষিত অনেক কিছু এড়িয়ে যাওয়া যায়।

তিনি সিরিয়ায় আমেরিকা নেতৃত্বাধীন বাহিনীর ভুলবশত হামলা এড়ানোর জন্য সিরীয় সরকারি বাহিনীর সঙ্গে পারস্পরিক যোগাযোগ থাকা দরকার বলেও মন্তব্য করেন। সিরিয়া প্রশ্নে রাশিয়ার অবস্থান স্পষ্ট করে ল্যাভরভ বলেন, সিরিয়ার সেনাদের উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য মস্কো সেনা মোতায়েন অব্যাহত রাখবে। তিনি পরিষ্কার করে বলেন, সিরিয়ায় রুশ সেনা রয়েছে এবং রাশিয়ার দেয়া অস্ত্র ব্যবহারের কৌশল শিখিয়ে দেয়ার কাজ করছে রুশ সেনারা। ল্যাভরভের এই বক্তব্য এমন একটি দিনে এসেছে, যেদিন রুশ নৌবাহিনী সিরিয়া উপকূলের কাছে বড়সড় নৌ-মহড়ায় অংশ নিয়েছে। পশ্চিমারা অভিযোগ করে আসছে, আসাদ সরকারকে রক্ষা করতে সিরিয়ায় সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করছে রাশিয়া।

আমেরিকান কর্মকর্তাদের ধারণা, সিরিয়ায় রাশিয়ান সেনারা শুধু প্রশিক্ষণ ও পরামর্শের মধ্যেই থেমে নেই। অসমর্থিত সূত্র উদ্ধৃত করে তারা দাবি করছেন, কিছু রুশ সেনা সিরিয়ার সেনাদের সঙ্গে অভিযানেও অংশ নিচ্ছে। রুশ নৌবাহিনীও সিরিয়ায় নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে তৎপর হয়েছে। দেশটির লাতাকিয়া বন্দরে কমপক্ষে ২০০ রুশ নৌ-সেনা অবস্থান করছে বলে জানা গেছে। সেখানে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের একটি শক্ত ঘাঁটি রয়েছে। আমেরিকান কর্মকর্তারা আরো দাবি করেছেন, সিরিয়াকে অগ্রসর প্রযুক্তির এসএ-২২ অ্যান্টি-এয়ারক্রাফট মিসাইল দিচ্ছে রাশিয়া এবং সেগুলো পরিচালনা করবে রুশ সেনারাই। অন্যদিকে আমেরিকা সিরিয়ার আকাশসীমায় আইএসবিরোধী বিমান হামলা চালিয়ে আসছে। আর সিরিয়ায় এসএ-২২ মিসাইল মোতায়েন হলে রুশ বিমানবিধ্বংসী মিসাইলের একদম মুখোমুখি উড়বে আমেরিকান যুদ্ধবিমানগুলো।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.