চলে গেলেন ‘গরিবের চিকিৎসক’ এড্রিক বেকার
সেপ্টেম্বর ৩, ২০১৫ গরিবের চিকিৎসক হিসেবে খ্যাত ডা. এড্রিক বেকার চলে গেলেন না ফেরার দেশে। ৭৪ বছর বয়সী বেকার গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে মধুপুর গড়ে প্রতিষ্ঠিত নিজ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার মৃত্যুতে মধুপুর গড়ের সর্বস্তরের মানুষের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে। আজ বুধবার তার প্রতিষ্ঠিত কাইলাকুড়ি হাসপাতালের পাশেই তাকে সমাহিত করা হবে। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অবিবাহিত ছিলেন।উল্লেখ্য, ১৯৭৯ সালে তিনি বাংলাদেশে আসেন। এরপর ৩৬ বছর ধরে মধুপুর গড় এলাকায় অবস্থান করে দরিদ্র মানুষের চিকিৎসা সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করে রাখেন। ১৯৪১ সালে নিউজিল্যান্ডের রাজধানী ওয়েলিংটনে এড্রিক বেকারের জন্ম। তার বাবা ছিলেন পরিসংখ্যানবিদ। মা বেট্রি বেকার শিক্ষক। চার ভাই, দুই বোনের মধ্যে দ্বিতীয় এড্রিক ডুনিডেন শহরের ওটাগো মেডিকেল কলেজ থেকে ১৯৬৫ সালে এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করেন। পরে ওয়েলিংটনে ইন্টার্নি শেষে নিউজিল্যান্ড সরকারের সার্জিক্যাল টিমে যোগ দিয়ে চলে যান যুদ্ধবিধ্বস্ত ভিয়েতনামে। সেখানে কাজ করেন ‘৭৫ সাল পর্যন্ত। মাঝে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডে পোস্ট গ্রাজুয়েশন কোর্স করেন ট্রপিক্যাল মেডিসিন,
গাইনি ও শিশুস্বাস্থ্য বিষয়ে। ‘৭৬ সালে পাপুয়া নিউগিনি ও জাম্বিয়ায় যান। কিন্তু কোথাও মন টেকেনি তার। এরই মধ্যে জন্ডিসে আক্রান্ত হয়ে চলে যান যুক্তরাজ্যে। এক বছর পর সুস্থ হয়ে ‘৭৯ সালে চলে আসেন বাংলাদেশে।
এদেশে এসে এড্রিক বেকার প্রথমে মেহেরপুর মিশন হাসপাতালে প্রায় দু’বছর ও পরে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর কুমুদিনী হাসপাতালে ৮ মাস কাজ করেন। বেকারের বড় কোনো হাসপাতালে কাজ করার ইচ্ছা কখনও ছিল না। ইচ্ছা ছিল প্রত্যন্ত গ্রামে অন্য রকম কিছু করার। সে চিন্তা থেকেই চলে আসেন টাঙ্গাইলের পাহাড়ি মধুপুর গড় এলাকায়। মধুপুরের জলছত্র খ্রিস্টান মিশনে এক বছর থেকে বাংলা ভাষা শিখেছেন। এরপর যোগ দেন গড় এলাকার থানারবাইদ গ্রামে। চার্চ অব বাংলাদেশের একটি ক্লিনিকে। সেই থেকে প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকায় অবস্থান করে মানুষের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া দিতে শুরু করেন ডা. বেকার। ‘৮৩ সালে দু’জন খণ্ডকালীন এবং তিনজন সর্বক্ষণিক কর্মী নিয়ে বেকারের এ যাত্রা শুরু হয়। দিন দিন বাড়তে থাকে রোগীর সংখ্যা। তখন থানারবাইদের পাশের গ্রাম কাইলাকুড়িতে ১৯৯৬ সালে উপকেন্দ্র খুলে চিকিৎসাসেবা দেওয়া শুরু করেন। ২০০২ সালে একটি পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্যকেন্দ্র হিসেবে মধুপুরের কাইলাকুড়িতে কাজ শুরু হয়। বর্তমানে সেখানে ৯৩ জনকে প্রশিক্ষিত করে চালিয়ে যাচ্ছিলেন এ স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম।
মাটির ছোট ছোট ২৩টি ঘরে হাসপাতালের ডায়াবেটিক, শিশু, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন বিভাগে ৪০ রোগী ভর্তির ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে আসা রোগীর সবাই দরিদ্র। সচ্ছল রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয় না। বহির্বিভাগে প্রতিদিন প্রায় একশ’ রোগী দেখা হয়। এ ছাড়া হাসপাতালে কমপক্ষে ৪৫ রোগী সবসময় ভর্তি থাকে।