‘গ্যাস-বিদ্যুতের বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহার কর- সিপিবি-বাসদ-

আগস্ট ২৮, ২০১৫

cpb 1

গ্যাস-বিদ্যুতের বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহার করনতুবা আন্দোলনের মাধ্যমে মূল্য কমাতে বাধ্য করা হবে’

গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে এবং অবিলম্বে বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহারের দাবিতে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) এবং বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ আয়োজিত সমাবেশে বক্তারা বিদ্যুৎ গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধিকে গণবিরোধী, জনগণের দুর্ভোগ বাড়িয়ে আইএমএফ- বিশ্ব ব্যাংক এবং দেশি-বিদেশি এজেন্টদের খুশি করার প্রজেক্ট হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। নেতৃবৃন্দ গ্যাস-বিদ্যুতের বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বলেন, নতুবা আন্দোলনের মাধ্যমে মূল্য কমাতে সরকারকে বাধ্য করা হবে। cpb 2

আজ ২৮ আগস্ট বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশে বাসদ সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সিপিবি সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ, সিপিবি’র কেন্দ্রীয় নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স ও বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বজলুর রশীদ ফিরোজ।

সমাবেশ পরিচালনা করেন সিপিবি ঢাকা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ডা. সাজেদুল হক রুবেল।
সমাবেশে খালেকুজ্জামান বলেন, বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমায় বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ কমেছে। তারপরও মূল্যবৃদ্ধি এই সরকারের অগণতান্ত্রিক ও গণবিরোধী আচরণের বহিপ্রকাশ। তিনি অবিলম্বে বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে বলেন, বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহার না করা হলে জনসাধারণকে নিয়ে আন্দোলনের মাধ্যমে বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহারে সরকারকে বাধ্য করা হবে। সেজন্য তিনি সরকারকে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান।
সমাবেশে সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ বলেন, গত ৮ জানুয়ারী সিপিবি-বাসদ’র পক্ষ থেকে বিইআরসিকে চিঠি দিয়ে দাম কমানোর লক্ষ্যে গণশুনানীর আয়োজনের অনুরোধ করা হয়েছিল। তারা তা না করে দাম বৃদ্ধির জন্য গণশুনানী করলেন। কিন্তু তারা ওই গণশুনানীতে দাম বাড়ানোর কোনো যুক্তি হাজির করতে পারলেন না।
তিনি বলেন, গ্যাস খাত লাভজনকভাবে পরিচালিত হচ্ছে। তারপরও দাম বাড়ানোর মধ্য দিয়ে বিইআরসি নিজেকে সরকারি তাবেদারি ও জনস্বার্থহীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রমাণ করল। গণশুনানীকে পরিণত করল প্রহসনে। এরা জ্বালানী মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নকারী।
রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, অতীতে সরকারের ভূলনীতি ও দূর্নীতির কারণে গ্যাস-বিদ্যুৎ খাতে অপচয় ও খরচ বৃদ্ধি হয়েছে। এই দায় সাধারণ মানুষের না। অথচ দাম বাড়িয়ে এ দায় জনগণের কাধে চাপানো হয়। তিনি অবিলম্বে বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহার করে দাম কমানোর লক্ষ্যে গণশুনানীর আয়োজনের দাবি জানান।
সমাবেশে বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, সরকার এই গণবিরোধী সিদ্ধান্ত নেওয়ার মধ্য দিয়ে তার জনস্বার্থবিরোধী অবস্থানই পরিষ্কার করল। এই মূল্যবৃদ্ধির ফলে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়বে যা মেনে নেওয়া যায় না।
নেতৃবৃন্দ বলেন লোডশেডিং মুক্ত নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহে সরকার এখনো সফল হতে পারে নি। অথচ মূল্য বাড়ানো হচ্ছে। নেতৃবৃন্দ বলেন, এই মূল্যবৃদ্ধির ফলে সরাসরি বিদ্যুৎ-গ্যাস ব্যবহারের ব্যয় বৃদ্ধিসহ বাড়িভাড়া, গাড়িভাড়া, জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পাবে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, দাম বাড়ানোর সময় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। এরা মোট জনসংখ্যার মাত্র ৪ শতাংশ বাকি ৯৬ শতাংশের আয়তো বাড়ছে না। তাই এই যুক্তি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
নেতৃবৃন্দ সারাদেশে দূর্নীতি-লুটপাটের চিত্র তুলে ধরে বলেন, ব্যাংক ও শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি আর প্রকল্পের লুটপাটের বোঝা সাধারণ মানুষের কাধে চাপাতে এই মূল্যবৃদ্ধি। এটা জনগণ মেনে নেবে না। নেতৃবৃন্দ বিদ্যুৎ ব্যবস্থা উন্নয়নে বৃহৎ রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ প্লান্ট তৈরি, রাষ্ট্রীয় বন্ধ বিদ্যুৎ প্লান্ট চালু ও রেন্টাল-কুইক রেন্টাল নবায়ন না করার ও আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সমন্বয় করে তেলের দাম কমানোর দাবি জানান।
সমাবেশে আরো বলেন, গ্যাস উত্তোলন ও সরবরাহে আধুনিক ব্যবস্থা চালু করতে হবে। ঢাকার বয়লার ও সার কারখানায় আধুনিক যন্ত্রপাতির উন্নয়ন করে গ্যাস অপচয় বন্ধ এবং দেশের সকল জেলা-উপজেলায় সাশ্রয়ী মূল্যে সিলিন্ডারে গ্যাস সরবরাহ করতে হবে।
নেতৃবৃন্দ গ্যাস-বিদ্যুতের বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহারে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান। নেতৃবৃন্দ এই দাবিতে আন্দোলনরত বাম-গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল দল, সংগঠন ও ব্যক্তিবর্গকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ারও আহ্বান জানান।
সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল বিভিন্ন শহর প্রদক্ষিণ করে পল্টন মোড়ে এসে শেষ হয়।

 

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.