‘লাইফ ইজ শর্ট। হ্যাভ অ্যান অ্যাফেয়ার।’

বিবাহিতরা শুনছেন? কে বলেছে, একবার গাঁটছড়া পড়ে গেলেই লক্ষ্মীটি হয়ে থাকাটা নিয়ম? বিবাহিত মানুষদের কথা ভেবে এক জীবনে অগুনতি সম্পর্কের সুযোগ তো ডেটিং ওয়েবসাইট ‘অ্যাশলে ম্যাডিসন’ দিচ্ছেই।

শুধু একটা ব্যাপারে সাবধান। ছোট্ট এই জীবনে আর যাই হোক, হ্যাকারের কিন্তু অভাব নেই। তেমনই এক দল দুষ্টু লোক হালফিলে ইন্টারনেটে ফাঁস করে দিয়েছে ‘অ্যাশলে ম্যাডিসন’-এর ক্রেতাদের তালিকা। আর সেই তালিকা বলছে, সারা বিশ্ব জুড়ে ‘অ্যাশলে ম্যাডিসন’-এর শরণাপন্ন হয়ে বিয়ের বাইরে যৌন উত্তেজনার স্বাদ নিচ্ছেন অসংখ্য মানুষ! যার সিংহভাগ আবার ভারতীয়রা!

এমনিতে কিন্তু ‘অ্যাশলে ম্যাডিসন’-এর দ্বারস্থ হওয়াটা বেশ ঝক্কির ব্যাপার! রীতি মতো গাঁটের কড়ি গুনে পছন্দসই যৌন সঙ্গী খুঁজতে হয় এখানে। তার জন্য আবার দরকার হয় একটা ক্রেডিট কার্ড। সেই ক্রেডিট কার্ডের নম্বরটা একটু কষ্ট করে টাইপ করে ফেললেই অর্ধেক কাজ হয়ে যায়। তার পর শুধু কয়েকটা ধাপ পেরনো বাকি! ‘অ্যাশলে ম্যাডিসন’-কে জানিয়ে দিতে হয় নিজের যৌন পছন্দ-অপছন্দগুলো। এই যেমন, ছেলে চাই না মেয়ে, নিজের শরীরের গড়নটি কেমন, কেমনতর সুখের জন্য ইদানীং হন্যে আছেন ইত্যাদি প্রভৃতি! ব্যস, আর কী! তার পরে নিখাদ ইচ্ছেপূরণ!

আর যদি মন না ভরে? তবে, গুণে গুণে সব পয়সা ফেরত— কোনও ভুলচুক রাখে না ‘অ্যাশলে ম্যাডিসন’ টাকা-পয়সার অ্যাফেয়ারে। শুধু একটা ব্যাপারে ১৯ ডলার ইউজারের কাছে না নিয়ে ছাড়ে না এই ওয়েবসাইট। ইউজার ১৯ ডলার ফেললে তবেই একমাত্র তার গোপন সব তথ্য মুছে দেয় এরা।

বলে রাখা ভাল, হ্যাকাররা কিন্তু বিশ্বশুদ্ধ লোককে জব্দ করার জন্য তাদের তালিকা ফাঁস করে দেয়নি। তারা চেয়েছিল, বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ককে প্রশ্রয় দিচ্ছে যে ওয়েবসাইট, সেটা বন্ধ হোক। ওয়েবসাইটকে একটা হুমকিও দিয়েছিল তারা। ‘অ্যাশলে ম্যাডিসন’ কথা শোনেনি, তাই ইউজারদের তালিকার কিছুটা ফাঁস হয়েছে ইন্টারনেটে! পরে হয়ত আরও আসবে!

হ্যাকারদের ফাঁস করা তালিকা বলছে, এ দেশে বিবাহ বহির্ভূত যৌন সম্পর্কের রাজধানীও দিল্লি। নয়াদিল্লিতে এই ওয়েবসাইটে গিয়ে বিয়ের বাইরে যৌন সম্পর্ক পাতিয়েছেন ৩৮,৬৫২ জন। তার ঠিক পরেই রয়েছে মুম্বই— সেখানে পরিসংখ্যানটা ৩৩,০৩৬ জনের। এমনিতেই নানান রকম ব্যাপারে গোঁড়া বলে দক্ষিণীদের একটা বদনাম আছেই, ‘অ্যাশলে ম্যাডিসন’-এর ক্ষেত্রেও সেই গোঁড়ামি কাজ করেছে ভালরকম। তাই চেন্নাইয়ে দেখা যাচ্ছে এই ওয়েবসাইটে বিবাহ বহির্ভূত যৌন সম্পর্কে সাড়া দিয়েছেন মাত্র ১৬,৪৩৪ জন। আর বাঙালিরা? খোলামেলা স্বভাবের সদর্থক-নঞর্থক দিকগুলো আর অর্থনৈতিক কার্যকারণ নিয়ে কলকাতায় অনুরাগীর সংখ্যা মাত্র ১১,৮০৭!

অবশ্য, শুধু মেট্রো শহরগুলো নয়। হায়দরাবাদে ১২,৮২৫ জন ‘অ্যাশলে ম্যাডিসন’ অনুরাগীদের খোঁজ দিয়েছে হ্যাকাররা। বেঙ্গালুরুর উচ্ছ্বল জীবনযাত্রা নিয়ে রক্ষণশীলরা যতই চোখ কপালে তুলুন না কেন, সেখানে সংখ্যাটা ১১,৫৬১। আহমেদাবাদে ৭০০৯ জন, চণ্ডীগড়ে ২৯১৮ জন, জয়পুরে ৫০৪৫ জন, লখনৌতে ৩৮৮৫ জন অনুরাগী মিলেছে। হিসেবের দিক দিয়ে দেখলে ভারতে বিয়ের মর্যাদা এখনও পর্যন্ত পটনাতেই বেশি। সেখানে এই ওয়েবসাইটকে স্বীকৃতি দিয়েছেন গুণে গুণে ঠিক ২৫২৪ জন।

এই পরিসংখ্যান হাতে আসার পরেই একটা প্রশ্ন অনিবার্য আকার নেয়। ‘অ্যাশলে ম্যাডিসন’-এর এই ভারতীয় অনুরাগীরা কি সবাই পুরুষ? না কি সমান তালে বিয়ের বাইরে যৌন সম্পর্ক চাইছেন ভারতীয় নারীরাও? তথ্য অনুযায়ী ভারতীয় নারীরা কিন্তু এখনও ‘এক চুটকি সিন্দুর কি কিমত’ নিয়ে যথেষ্ট বেশি ওয়াকিবহাল পুরুষদের তুলনায়। তাছাড়া হ্যাকারদের ফাঁস করা ডেটা বলছে, এই ওয়েবসাইটের ইউজারদের মধ্যে প্রায় ৯৫ ভাগই পুরুষ। তাদের সুখের ছলনায় ভোলানোর জন্য দিনে অনেকগুলো করে নকল মহিলাদের প্রোফাইল তৈরি করে ‘অ্যাশলে ম্যাডিসন’! ২০১২ সালে এই ওয়েবসাইটেরই এক কর্মী, ডোরিয়ান সিলভা, নকল প্রোফাইল বানাতে বানাতে এক সময়ে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে সংস্থার বিরুদ্ধে মামলা করেন। তিন সপ্তাহের মধ্যে হাজারেরও বেশি নকল প্রোফাইল তৈরি করতে গিয়ে রীতিমতো অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন মহিলা।

তাহলে? হ্যাকাররা কি এত কিছু জানিয়ে শেষ পর্যন্ত উপকারই করল ‘অ্যাশলে ম্যাডিসন’ অনুরাগী বিশ্বের প্রায় ৩ কোটি বিবাহিত পুরুষদের?

সেটা বিতর্কের বিষয়! গোপন জীবন প্রকাশ্যে আসার কিছু খেসারত তো দিতে হবেই। তাছাড়া, হ্যাক হয়ে যাওয়ার পরে সাহস করে আর কেউ এই ওয়েবসাইটে যাবেনও না! হয়ত, তার জায়গায় সব দিক থেকে সুরক্ষিত নিরাপত্তার দাবি নিয়ে বাজার ধরবে অন্য কোনও ডেটিং ওয়েবসাইট।

কিন্তু, বিবাহিত জীবন? আর ভারত?

তার কী হবে?