ব্লগার ওয়াশিকুর হত্যায় অভিযোগপত্র দিচ্ছে ডিবি

আগস্ট ২৩, ২০১৫

yacওয়াশিকুর রহমান ওরফে বাবু হত্যা মামলায় নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের পাঁচ সদস্যকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দিতে চলেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। দু-এক দিনের মধ্যে আদালতে এই অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হতে পারে বলে ডিবি জানিয়েছে।
তবে ব্লগার নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়, অভিজিৎ রায় ও অনন্ত বিজয় দাশ হত্যা মামলায় এখনো সুনির্দিষ্ট কিছু পাননি তদন্তকারী কর্মকর্তারা। এ বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে আগস্টে পৃথক ঘটনায় এই চার ব্লগারকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
ব্লগার ওয়াশিকুর হত্যা মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ডিবির অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম গতকাল শনিবার বলেন, ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান হত্যাকাণ্ডে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের পাঁচ সদস্যের জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। দু-এক দিনের মধ্যে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হবে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী দুজন হিজড়াসহ অন্তত ১০ জনকে এই মামলায় সাক্ষী করা হচ্ছে।
মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিরা হলেন জিকরুল্লাহ, আরিফুল ইসলাম, জুনায়েদ ওরফে তাহের, হাসিব আবদুল্লাহ ও সাইফুল ইসলাম। এঁদের মধ্যে গ্রেপ্তার হওয়া আরিফুল ইসলাম, জিকরুল্লাহ ও সাইফুল ইসলাম কারাগারে আছেন। জুনায়েদ ও হাসিব আবদুল্লাকে অভিযোগপত্রে পলাতক দেখানো হচ্ছে।
সাইফুল ইসলামের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ও তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, গত ৩০ মার্চ দুপুরে তেজগাঁওয়ের বেগুনবাড়ী এলাকায় হাসিব আবদুল্লাহ ও সাইফুলের পরিকল্পনা এবং নির্দেশনায় জিকরুল্লাহ, আরিফুল ইসলাম ও জুনায়েদ সরাসরি হত্যায় অংশ নেন। এর মধ্যে জিকরুল্লাহ ও আরিফুল ধরা পড়েন। তাঁরা মাদ্রাসার ছাত্র। আর জুনায়েদ পালিয়ে যান। পুলিশের তদন্তে জানা যায়, জুনায়েদ রাজধানীর একটি মাদ্রাসার ছাত্র। তাঁর বাড়ি হবিগঞ্জে।
গ্রেপ্তারের পর জিকরুল্লাহ ও আরিফুল পুলিশকে বলেছিলেন, মাসুম নামের এক বড় ভাই হত্যার আগের দিন তাঁদের নিয়ে হাতিরঝিলে বৈঠক করেন। পরে তদন্তে বেরিয়ে আসে, মাসুমের প্রকৃত নাম হাসিব আবদুল্লাহ।
জিকরুল্লাহ ও আরিফুল রিমান্ডে ডিবিকে বলেছিলেন, সাইফুল বেগুনবাড়িতে ওয়াশিকুরের বাসার পাশে তাঁদের জন্য ঘর ভাড়া করে দিয়েছিলেন। এর আগে যাত্রাবাড়ী এলাকায় তাঁরা ভাড়া বাসায় থাকতেন। ওয়াশিকুর হত্যার পাঁচ দিন আগেই ধারালো অস্ত্রসহ যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হন সাইফুল। পরে ওয়াশিকুর হত্যা মামলায় সাইফুলকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের এডিসি সাইফুল ইসলাম বলেন, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্যরা ব্লগার ওয়াশিকুরকে হত্যা করেছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। হত্যায় সরাসরি অংশ নেওয়ার বাইরে দুজন অস্ত্র সরবরাহ থেকে ওয়াশিকুরের বাসা দেখিয়ে দেওয়া, তাঁর ছবি সরবরাহ ও হত্যায় নির্দেশদাতা ছিলেন। এ ছাড়া ওয়াশিকুর হত্যাকাণ্ডে আরও চার-পাঁচজনের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। পরে নাম-পরিচয় পাওয়া গেলে ওয়াশিকুর হত্যা মামলায় তাঁদের বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।
ওয়াশিকুর (২৭) তেজগাঁও কলেজ থেকে লেখাপড়া শেষ করে মতিঝিলে একটি ট্রাভেল এজেন্সিতে শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করতেন। একটি ব্লগে ‘বোকা মানব’ নামে কিছুদিন লিখলেও তিনি মূলত ফেসবুকের কয়েকটি নামে নানা ধরনের লেখা প্রকাশ করতেন। ওয়াশিকুর হত্যার পরদিন ৩১ মার্চ তাঁর ভগ্নিপতি চারজনকে আসামি করে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় মামলা করেন। পরে মামলার তদন্তভার ডিবিকে দেওয়া হয়।
তিন ব্লগার হত্যা মামলার তেমন অগ্রগতি নেই: ৭ আগস্ট গোড়ানে বাসায় ঢুকে ব্লগার নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়কে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এই হত্যা মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার সাদ আল নাহিয়ান ও মাসুদ রানাকে আট দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তাঁরা আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য বলে পুলিশ জানিয়েছিল।
মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ডিবির উপকমিশনার (পূর্ব) মো. মাহবুব আলম বলেন, রিমান্ডে নাহিয়ান ও মাসুদ ব্লগার নীলাদ্রি হত্যায় নিজেদের জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন। তবে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের নেতা রেদোয়ানুল আজাদ রানাসহ ছয়জন জড়িত থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন। তাঁরা গ্রেপ্তার হলে এই মামলার সূত্র মিলতে পারে বলে তিনি জানান।
প্রায় সাড়ে তিন মাসেও সিলেটে ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ খুনের কিনারা করতে পারেনি পুলিশ। গত ১২ মে সকালে সিলেট নগরের সুবিদ বাজারের নুরানি আবাসিক এলাকার চৌরাস্তা মোড়ে বিজ্ঞান লেখক ও ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশকে (৩২) কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সিলেটের বিমানবন্দর থানায় দায়ের করা এ মামলার তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গতকাল মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা সিআইডির বিশেষ সুপার মির্জা আবদুল্লাহেল বাকী বলেন, হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন হয়নি। তবে র্যাবের অভিযানে ধরা পড়া তিনজনকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়েছে। রিমান্ড মঞ্জুরের পর তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
১৭ আগস্ট রাতে র্যাব ব্লগার অভিজিৎ রায় ও অনন্ত বিজয় দাশ হত্যায় জড়িত সন্দেহে তৌহিদুর রহমান (৫৮), সাদেক আলী ওরফে মিঠু (২৫) ও আমিনুল মল্লিককে (৩৫) গ্রেপ্তার করে। অভিজিৎ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাঁদের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। মামলাটি তদন্ত করছে ডিবি। মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, রিমান্ডে থাকা তিন ব্যক্তি ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যায় জড়িত রয়েছে কি না, সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
এ বিষয়ে ১৮ আগস্ট র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, গ্রেপ্তার হওয়া তিন ব্যক্তি নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য। তাঁদের মধ্যে তৌহিদুর রহমান বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক। তিনি হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ও আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের অর্থ সরবরাহকারী। সাদেক সরাসরি হত্যায় অংশ নেন।
র্যাবের হাতে গ্রেপ্তারের ৮২ দিন আগে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক তৌহিদুর রহমানকে (৫৮) চার ব্যক্তি ডিবি পরিচয় দিয়ে ধরে নিয়ে গিয়েছিলেন বলে তাঁর স্বজনেরা জানিয়েছেন। এ ঘটনায় ধানমন্ডি থানায় অপহরণের মামলাও করেন তাঁর বোন।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.