চল্লিশ বছরের আত্ম-চিৎকার হঠাৎ থেমে গেছে এখানে

আগস্ট ১৬, ২০১৫

Shafiqur Rahmanএস এম আববাস: চল্লিশ বছরের আত্ম-চিৎকার হঠাৎই যেন থেমে গেছে এখানে। নীরবে দাঁড়িয়ে শুধু বঙ্গবন্ধুর মুখখানি আপন মনে চেয়ে দেখা। ঋণের বোঝা কিছুটা কমে গেছে হয়তো! তাহলে তো দায় মুক্তির পর আজ আনন্দই হবারই কথা। কিন্তু না, তখনও চোখে-মুখে তার কষ্টের ছাপ।

ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত ৯টা। জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪০তম শাহাদাৎ বার্ষিকীর আয়োজন তখন শেষ হয়েছে। তবে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে দেওয়া ফুলের তোড়াগুলো তখনও বেশ সতেজ।

দিনভর জাতীয় শোক দিবসের আয়োজন শেষে প্রেসক্লাবের ভেতরে ও বাইরে হাতে গোনা কয়েকজন সাংবাদিক তখনও রয়েছেন। আর একাই বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির সামনে দাঁড়িয়ে আছেন প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহম্মদ শফিকুর রহমান। কয়েক মিনিট নীরবে দাঁড়িয়ে থাকাটা আজ ভিন্ন রকম।

অনেকক্ষণ ধরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি শফিকুর রহমানের এভাবে দাঁড়িয়ে থাকার দৃশ্য কয়েকজন সংবাদকর্মী এড়িয়ে যেতে পারেননি। সভাপতি যখন বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির দিকে চোখের পাতা না নাড়িয়ে চেয়ে আছেন। তখন ওই সংবাদকর্মীরা চেয়ে আছেন তার দিকে।

Shafiqur Rahman 3অনেক সংগ্রামের ইতিহাস যেমন বাংলাদেশ। তেমনি অনেক সংগ্রামের ইতিহাস জাতীয় প্রেসক্লাবে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি স্থাপন। বঙ্গবন্ধুর জীবনাবসানের চল্লিশ বছরে যা হয়নি, তা আজ করা সম্ভব হয়েছে।

চল্লিশ বছর অপেক্ষার পর বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি স্থাপনের মধ্য দিয়ে আজ বিজয়ী হয়েছে প্রেসক্লাব। বিজয়ী হয়েছেন দেশের সব সাংবাদিক। জাতির জনকের কাছে তাদের ঋণের বোঝা খানিকটা কমিয়ে আনতে পেরেছেন।

সংবাদকর্মীদের নানা অভিব্যক্তির মধ্যেও যেন অন্যরকম এক অনুভূতির জালে জড়িয়ে পড়েছেন শফিকুর রহমান। তাই নীরবে একাই দাঁড়িয়ে দেখছেন বঙ্গবন্ধুকে। খুঁজে চলেছেন জীবন্ত শেখ মুজিবের অবয়ব। কথাগুলো বলতে থাকেন জিটিভির সংবাদকর্মী মেহেদী।

কয়েক মিনিট দাঁড়িয়ে থাকার পর যেন স্বাভাবিক হলেন শফিকুর রহমান। সংবাদকর্মীদের সঙ্গে কথা বললেন। তখনও তার মুখে কষ্টের ছায়া। যেন আরও কিছুক্ষণ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির সামনেই তার দাঁড়িয়ে থাকতে ইচ্ছা করছিল।

তার অপেক্ষায় সংবাদকর্মীরা দাঁড়িয়ে আছেন, এমনটি ভেবেই হয়তো শফিকুর রহমান কথা শুরু করেন উপস্থিত কয়েকজন সংবাদকর্মীর সঙ্গে। তার কণ্ঠ আর অনুভূতি বুঝে সভাপতিকে একা ছাড়তে চাননি সংবাদকর্মীরা।

প্রেসক্লাব থেকে যখন সভাপতি বেরিয়ে যাচ্ছেন, তখনও সংবাদকর্মীরা তার পিছনে পিছনে হাঁটতে থাকেন। এক পর্যায়ে তার গাড়িতে ওঠার পর শান্ত মনে সংবাদকর্মীরা ফেরেন বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির কাছে।

উপস্থিত সংবাদকর্মীরা বলতে থাকেন, শফিকুর রহমান ভাই হয়তো আজ মনে শান্তি নিয়ে ফিরে গেলেন। তবে তার চেয়ে বড় কথা, আরও একটি ইতিহাস জন্ম নিলো জাতীয় প্রেসক্লাবে। বাংলাদেশের স্থপতির প্রতিকৃতি আজ জাতীয় প্রেসক্লাবে স্থান পেয়েছে। আমরা কলঙ্কমুক্ত হতে পেরেছি। চল্লিশ বছরের গ্লানি যেন দূর হলো আজ।

বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রমহানের প্রতিকৃতি শনিবার (১৫ আগস্ট) সকাল সাড়ে নয়টায় স্থাপন করা হয় প্রেসক্লাবে। এতে দিনভর হয়তো খানিকটা ঋণ পরিশোধের আনন্দ বয়ে যাচ্ছিল সংবাদকর্মীদের মনের কোণে।
সৌজন্যে- বাংলানিউজ।
ঢাকা জার্নাল, আগস্ট ১৬, ২০১৫

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.